নগ্ন ও সেক্সের ব্রাজিলে ভিন্ন এক ব্রাজিল

ব্রাজিলের পতাকায় দু’টি শব্দ লেখা। শৃঙ্খলা ও প্রগতি। ভিনদেশী কোন পর্যটক, যিনি রিও ডি জেনিরো’র সাম্বা মত্ত-নাইটক্লাব বা সাও পাওলো ঘুরে দেখেছেন তাদের মনে ঠিক শৃঙ্খলার প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠবে না। জরাজীর্ণ ফাভেলা (বস্তি)-র সমাহার আর যানজট বিভ্রাটের চিত্রই ব্রাজিলে অধিক সুপরিচিত। তবে সে ধারণা পাল্টে যাবে রাজধানী ব্রাসিলিয়াতে এলে। অন্য শহরগুলোর থেকে পার্থক্য আকাশ-পাতাল। এত গোছালো একটি শহর যে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় এটা আসলেই ব্রাজিলে। ‘ফ্যান্টাসি আইল্যান্ড’ শিরোনামে ব্রাসিলিয়ার ইতিহাস আর সংস্কৃতি নিয়ে লিখেছেন হেনরিক ব্রান্ডাও জনসন। তিনি বলেন, এখানে সাম্বা চোখে পড়বে না। রাস্তার পাশে নেই কোন বিয়ারের দোকান। আর ফুটবল খেলার দৃশ্যও খুঁজে পাবেন না। এমনকি শহরের কেন্দ্রে কোন ফাভেলা নেই। ব্রাজিলের জন্য এটা সম্পূর্ণ অপরিচিত এক দৃশ্যপট, মন্তব্য করেন তিনি। অনেকের কাছে চিরাচরিত ব্রাজিলের দৃশ্য হলো রৌদ্রোজ্জ্বল আটলান্টিক ঘেঁষা সৈকতগুলোতে ফুটবল খেলার উন্মাদনা। ব্রাসিলিয়া কোন উপকূলবর্তী শহরও নয়। রিও থেকে আনুমানিক ৫৮০ মাইল উত্তর-পশ্চিমে এর অবস্থান। তবে ফুটবল যে নেই সে কথা এখন আর বলা যাবে না। ব্রাসিলিয়ার এস্টাদিও ন্যাসিওনাল স্টেডিয়ামটি ব্রাজিল বিশ্বকাপের জন্য নির্মিত নতুন স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে একটি। আর এর পেছনে ব্যয়ও হয়েছে সব থেকে বেশি। ব্রাসিলিয়া শহরটি আধুনিক ব্রাজিলের অনন্য নিদর্শন। শহরটির বেশির ভাগ অংশের রূপকার অস্কার নিয়েমেয়ার। ব্রাজিলিয়ান স্থাপত্য শিল্পের পেলে হিসেবে তিনি খ্যাত। প্রশস্ত এভিনিউ আর যানজট মুক্ত গাড়ি যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্যও পরিচিত ব্রাসিলিয়া। পাশাপাশি শান্ত এক পরিবেশে স্থানীয়দের নিবাস।
১৯৫৬ সালে এক টুকরো ঘাসের জমির ওপর গোড়াপত্তন হয়েছিল শহরটির। আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু ১৯৬০-এ। যে মালভূমিতে শহরটির জন্ম তার আয়তন ছিল মাত্র ৩৮০০ ফুট। ব্রাসিলিয়া এখন ব্রাজিলের ৪র্থ সর্ববৃহৎ শহর। রাজনীতিবিদ আর আমলাদের হাতে সৃষ্টি হয় ব্রাসিলিয়া। আর শহরটির নকশা করেছেন লুসিও কস্তা। রিও ডি জেনিরো থেকে রাজধানী সরিয়ে ব্রাসিলিয়াতে আনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট হুসেলিনো কুবিতশেক। আধুনিকতার প্রতি ব্রাজিলের তৃষ্ণা দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছে শহরটি। এছাড়াও, নজরে পড়ে সামাজিক সাম্য। সকল শ্রেণীর লোকদের এখানে পারস্পরিক সহাবস্থান। চমকপ্রদ নির্মাণ আর স্থাপত্যশৈলীর নমুনাই শুধু নয় ল্যাটিন আমেরিকার সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয়ের শহরগুলোর মধ্যে একটি ব্রাসিলিয়া। সব থেকে আকর্ষণীয় ভবনগুলোর মধ্যে রয়েছে নিয়েমেয়ারের ‘মেট্রোপলিটন ক্যাথিড্রাল অব আওয়ার লেডি অ্যাপারেসিডা’ আর কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাসাদসদৃশ সব ভবন। বিশ্বকাপের আগমনে এসব ভবনগুলোকে হলুদ আর সবুজ আলোয় সজ্জিত করা হয়েছে। নিয়েমেয়ারের অনবদ্য স্থাপত্যশৈলী আর নকশার প্রশংসা করে রাইস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফারেস আল দাহদাহ শহরটিকে যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনের সঙ্গে তুলনা করেন। তার নকশায় ব্রাজিলের অনন্য সহজাত সৌন্দর্য ও দক্ষতা ফুটে উঠেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ব্রাসিলিয়ার স্থানীয় ফুটবল ইতিহাস তত সমৃদ্ধ নয়। এখানের সব থেকে পুরানো ক্লাবের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৫ সালে। দলটি এখন আর টপ ডিভিশনে খেলছে না। তবে শহরের জন্মের পর ব্রাজিলের নানা প্রান্ত থেকে আসা প্রথম বাসিন্দারা কিন্তু তাদের ফুটবলপ্রেম সঙ্গে নিয়েই এসেছিলেন। সমপ্রতি রিও’র ফ্লামেঙ্গো এখানে খেলে গেছে একটি ম্যাচ। স্টেডিয়ামে ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। আর ফুটবলের সব থেকে মর্যাদার আয়োজন ফিফা বিশ্বকাপের খেলাগুলোতেও যে তিল ধারণের ঠাঁই থাকবে না তা বলাই বাহুল্য।

No comments

Powered by Blogger.