দাঙ্গা নিয়ে এখনো নীরবতা!

নরেন্দ্র মোদি
ক্ষমতায় এসে বলেছিলেন, তাঁর হাতে সময় আছে মাত্র ৬০ মাস। সরকারের প্রথম মাস পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অন্তত এটুকু বোঝাতে পেরেছেন, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে হাতের কাজগুলো শেষ করতে তিনি বদ্ধপরিকর৷ সমস্যাগুলো যদি মোটামুটি তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়, তা হলে দেখা যাচ্ছে, অর্থনৈতিক ও বৈদেশিক ক্ষেত্রে মোদি বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন, অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা যাকে ‘অত্যন্ত ইতিবাচক’ বলে মনে করছেন৷ তৃতীয় ভাগ অর্থাৎ সামাজিক ক্ষেত্র নিয়ে মোদির ভাবনাচিন্তায় অবশ্য তেমন বড়সড় কোনো পরিবর্তন এখনো নজর কাড়েনি৷ বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে মোদির দৃষ্টিভিঙ্গকে সাবেক কূটনীতিক বীণা সিক্রি ‘বৈপ্লবিক’ বলে মনে করেন৷ গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রতিবেশীদের আমন্ত্রণ করে মোদি যে বার্তা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন, এই এক মাসে তা তিনি আরও খানিকটা এগিয়ে নিয়েছেন৷ ভুটান সফর, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে প্রথমেই বাংলাদেশ সফরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত এবং ভারতীয় রাষ্ট্রদূতদের দিল্লিতে ডেকে সার্বিক পররাষ্ট্রনীতির আলোয় প্রতিবেশীনীতি নিয়ে দিনভর আলোচনার মধ্য দিয়ে আগামী দিনের নীতিমালা তৈরির যে কর্মসূচি মোদি সরকার নিয়েছে, তা সাম্প্রতিক অতীতে হয়নি।’ বীণা মনে করছেন, এই এক মাসে এত দ্রুত এতটা এগোনো নিঃসন্দেহে কৃতিত্ব। মোদি বোঝাতে পেরেছেন, তাঁর চাহিদা ও রূপায়ণের সদিচ্ছার মধ্যে ফারাক একেবারেই নেই। বীণার সঙ্গে একমত কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ সি রাজামোহনও৷
গতকাল প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত প্রতিবেশীদের নিয়েই প্রধানমন্ত্রী সময় দিয়েছেন বেশি। কারণ, এটা তাঁর অগ্রাধিকার৷ কিন্তু সেই সঙ্গে তিনি ভিসা বিতর্ককে পেছনে ফেলে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন, জাপানেও যাবেন। উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি চীন যাচ্ছেন। প্রতিটি পদক্ষেপই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক৷’ মোদির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অবশ্যই দেশের অর্থনীতি। এমনিতেই দুবছর ধরে দেশের আর্থিক হাল বিভিন্ন কারণে আশাপ্রদ নয়। প্রবৃদ্ধির হার যতটা হবে মনে করা হয়েছে, ততটা হয়নি৷ আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থাগুলোও ভারতের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের ছবি মোটেই ভালো আঁকেনি। বিশ্বজোড়া মন্দা এর অন্যতম কারণ। মূল্যবৃদ্ধি এখনো লাগামছাড়া। রাশ টানতে না পারলে জনপ্রিয়তা হারানোর ঝুঁকি থাকবে। বিরোধী দল হিসেবে বিজেপি বারবার ইউপিএ সরকারের এই দুর্বলতার (পলিসি প্যারালিসিস) সমালোচনা করেছে৷ গত এক মাসে মোদি অন্তত এটুকু বোঝাতে পেরেছেন, স্থবিরতায় তাঁর বিশ্বাস নেই। শরিকদের ওপর নির্ভরতা না থাকায় অপ্রিয় সিদ্ধান্তগুলো নিতে মোদি দেরি করছেন না৷ যেমন ট্রেনের যাত্রী ভাড়া ও পণ্য মাশুল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত৷ বণিকসভা ‘ফিকি’-র সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অঞ্জন রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভর্তুকি কমানোর মতো প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীকে কঠোরভাবে নিতে হবে৷ ট্রেনের ভাড়া বাড়িয়েও চাপে পড়ে পিছিয়ে গেলে তা সুলক্ষণ হবে না৷ পরিবেশের কারণে আটকে থাকা প্রকল্প ছাড় পেলে অর্থনীতির ছবিটা ঘুরতে পারবে৷ সীমান্তের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বহুদিন ধরে আটকে আছে৷ মোদি সেগুলো শুরু করতে উদ্যোগী।’ অঞ্জন রায় অবশ্য বলেন, ‘কালোটাকা উদ্ধারে মোদির উদ্যোগ প্রধানত রাজনৈতিক, যদিও তা ভীতির সৃষ্টি করতে পারে।’ সামাজিক ক্ষেত্রে এই এক মাসে প্রধানমন্ত্রী অবশ্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার ক্ষেত্রে তেমন সফল নন, বরং বিভিন্ন রাজ্যে অসম্প্রীতির ঘটনা ঘটছে৷ এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা সমালোচিতও হচ্ছে। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে মোদি বেশ কিছু সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন৷ আমলাশাহির ওপর ভরসা স্থাপনই শুধু নয়, প্রশাসনে তাঁদের গুরুত্ব বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। সরকারের প্রথম মাসপূর্তিতে নরেন্দ্র মোদি অন্তত এটুকু বুঝিয়েছেন, ৬০ মাসের মধ্যে হাতের কাজ শেষ করে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালন করতে হলে বিশ্রামের অবকাশ নেই।

No comments

Powered by Blogger.