একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ রাখবেন মোদি

নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে গতকাল নরেন্দ্র মোদির
শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশি–বিদেশি
চার হাজারের বেশি অতিথি। এএফপি
গত বছরের অক্টোবর মাস৷ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে হঠাৎই দেখা দেয় ব্যতিক্রমী এক উদ্বেগ৷ মাস খানেক পর নভেম্বরে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠেয় কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সরকারপ্রধানদের সম্মেলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের অংশগ্রহণ করা না-করাকে নিয়েই এ উদ্বেগ৷ খবর হিন্দুস্তান টাইমসের৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রতিরক্ষা বিভাগ জোরেশোরেই চাচ্ছিল, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং যেন গুরুত্বপূর্ণ ওই আন্তর্জাতিক আলোচনায় যোগ দেন৷ এ বিষয়ে সে সময় সরকারের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বলেছিলেন, ‘বৈঠকে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রীরও যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে৷ আমাদের ধারণা, (শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট) মাহিন্দা রাজাপক্ষের সঙ্গে মনমোহনের সাক্ষাতের মাধ্যমেই কেবল (দেশটির কাছ থেকে) কোনো সুবিধা আদায় করা যেতে পারে৷ কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে তামিলনাড়ুর বিভিন্ন পক্ষ ও সেই সঙ্গে রাজ্যের কিছু জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীকে নিয়ে৷ বৈঠকে মনমোহন যোগ দিলে নির্বাচনী কপাল পুড়তে পারে, এ আশঙ্কায় ছিলেন তাঁরা৷ দেখি, চাপের কাছে প্রধানমন্ত্রী হেরে যান, নাকি অটল থাকেন৷’ মনমোহন সিং শেষ পর্যন্ত ওই চাপের মুখে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি৷ কমনওয়েলথ সম্মেলনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থেকেছেন৷ পাঠিয়েছেন তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদকে৷
কিন্তু এ রকম পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে সদ্য প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া ভারতীয় জনতা দলের (বিজেপি) নেতা নরেন্দ্র মোদির অবস্থান বিপরীত৷ গতকাল সোমবার তাঁর শপথের আগেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তা৷ শপথ অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষেসহ সার্কভুক্ত নেতাদের নিমন্ত্রণ করার আগ্রহ ছিল তাঁর আগেই৷ আগ্রহে সায় দিয়ে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব পাস, এমনকি তা বাস্তবায়নও করে ফেলেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষেকে আমন্ত্রণ জানানোয় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা৷ তাঁর দল এআইএডিএমকে ছাড়াও তামিলনাড়ুর আরও কয়েকটি দল ও কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি এতে গলা মিলিয়েছেন৷ জয়ললিতার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক রয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷ রাজ্যসভায় এআইএডিএমকের সমর্থনও প্রয়োজন হতে পারে মোদির৷ তবে কাকে অতিথি করবেন সে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এর কিছুই বিবেচনায় নেননি তিনি৷ মোদি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, পররাষ্ট্রনীতির ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কাউকে বাদ সাধতে দেবেন না তিনি৷ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার কেন্দ্রে থাকবেন তিনি নিজে৷ প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষের মতো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণেও প্রধানমন্ত্রী মোদির দৃঢ় মনোভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে৷ বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং পররাষ্ট্রনীতি সংশ্লিষ্ট যে বিষয়ে সর্বশেষ তাঁর জোরালো কর্তৃত্ব দেখাতে পেরেছিলেন তা ছিল, ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তির সময়৷ কিন্তু পররাষ্ট্রনীতিতে মোদিযুগের সূচনাই হয়েছে পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপারে নতুন প্রধানমন্ত্রীর অনমনীয় অবস্থান গ্রহণের বিষয় স্পষ্ট করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে৷ শপথ অনুষ্ঠানে মাহিন্দা রাজাপক্ষে ও নওয়াজ শরিফের মতো নেতাদের নিমন্ত্রণ জানিয়ে মোদি এরই মধ্যে তাঁর দল, দলের মিত্র, রাজ্য সরকার, দিল্লির আমলাতন্ত্র ও বৃহৎ অর্থে এই অঞ্চলে এ বার্তাই পাঠালেন যে দেশের বিষয়ে তাঁর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত৷

No comments

Powered by Blogger.