বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে লিভ টুগেদার by শর্মী চক্রবর্তী

আমি আমার বাবা-মাকে ছেড়ে এসেছি, সবকিছু ভুলে তোমাকে নিয়ে বাঁচতে চাই, আমার বাবা-মাও এখন আমাকে নিতে চাইবে না, এখন তুমি যদি আমাকে বউ হিসেবে স্বীকৃতি না দাও তাহলে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না- গত বুধবার রাতে এ কথাগুলোই ছিল রানার সঙ্গে বর্ণির শেষ কথা। বিয়ে করার প্রতিশ্রুতিতে রানার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল বর্ণি। তার সবকিছু উজাড় করে দিয়েছিল রানাকে। সম্পর্কের গভীরতা যখন বাড়তে শুরু করে তখন বর্ণি রানাকে বিয়ে করার কথা বলে, তখন সে ‘না’ বলে দেয়।
এই প্রতারণা সইতে না পেরে শেষ পর্যন্ত আত্মহননের পথ বেছে নেয় বর্ণি। রাজধানীর বনানী এলাকায় বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ইসরাত জাহান বর্ণির (২৪) সঙ্গে লিভ টুগেদার করছিল আবদুর রহমান রানা। ১৫ দিন একসঙ্গে এক ছাদের নিচে ছিল তারা। রানার ইচ্ছা ছিল এভাবেই তাদের সম্পর্ক যাতে চলে যায়। কিন্তু এই বিষয়টি মানতে পারেনি বর্ণি। বারবার রানাকে বিয়ে করার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু রানা তার সিদ্ধান্তে অনড় ছিল। বর্ণিকে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছিল না রানা। বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত জানতে পেরে বর্ণি বৃহস্পতিবার সকালে বিষ পান করে আত্মহত্যা করে। বর্ণির মা সুফিয়া বেগম জানান, বর্ণি এই ছেলের সঙ্গে থাকতো তা আমাদের জানা ছিল না। সে আমার সঙ্গে রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। আমি ভাবলাম রাগ কমে গেলে সে আবার আমার কাছে ফিরে যাবে। কিন্তু তা সে করলো না। তার বাবাকে জানিয়েছিল সে মহিলা হোস্টেলে থাকে। আমি আর তেমন কোন খোঁজখবর নেইনি। আমার মেয়ে এভাবে আত্মহত্যা করবে তা আমি বুঝিনি।
বর্ণির প্রেমিক আবদুর রহমান রানা বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন, আমার সঙ্গে বর্ণির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আমরা ১৫ দিন একসঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস করেছি। কিন্তু কয়েক দিন যাবত বর্ণি আমাকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিচ্ছিল। আমার পক্ষে তা সম্ভব ছিল না। কারণ, এখন আমি কিছু করি না। সেও কিছু করে না। আমি চেয়েছিলাম তাকে তার বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে। কিন্তু আমার কথাগুলো সে বুঝতে চায়নি। আমাদের এই সম্পর্কের কথা বর্ণির মা জানতেন। তিনি কয়েকবার আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। এমনকি আমি উনাকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতেও গিয়েছি। তিনি তার মেয়েকে নিতে চাননি। রানা ফ্রিল্যান্স ফিল্মমেকার নামে একটি নাটক তৈরির প্রতিষ্ঠানে পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। মহাখালীর চ-১৪৪/৬ নম্বর বাড়ির পঞ্চম তলায় একটি রুমে থাকতেন। গত এক বছর আগে ইসরাত জাহান বর্ণির সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
বর্ণির বাবা আহসান উল্লাহ জানান, বর্ণি তার মায়ের সঙ্গে মুগদার মদিনাবাগের ১৩১/৩/এ নম্বর বাড়িতে বসবাস করতো। সে মহাখালী আয়শা মেমোরিয়ালে চাকরি নেয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়। এই পর্যন্ত সে তার মায়ের ব্যাংক একাউন্ট থেকে এটিএম কার্ড দিয়ে ২ লাখ টাকা উঠিয়ে নিয়েছে। তবে সে কি কারণে আত্মহত্যা করেছে তা আমি সঠিকভাবে বলতে পারবো না। লাশ ময়নাতদন্তের পর গ্রামের বাড়ি নরসিংদীতে নিয়ে গেছে তার স্বজনরা।
বনানী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফুর রহমান জানান, বুধবার রাতে বর্ণি প্রথম দফা আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। বর্ণি চায়ের সঙ্গে বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য পটাশিয়াম মিশিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করলে রানা তাতে বাধা দেয়। কিন্তু বর্ণি রাগে ক্ষোভে রানার অজান্তে বৃহস্পতিবার সকালে বিষপান করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। রানা তা বুঝতে পেরে তরিঘড়ি করে বর্ণির বাবা আহসান উল্লাহকে মোবাইলে সংবাদ দেয়। পরে রানা বর্ণিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বেলা পৌনে ৩টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বিষপানে বর্ণি আত্মহত্যা করতে পারে প্রাথমিক আলামতে এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে বর্ণি ছিল সবার ছোট। বৃহস্পতিবার দুপুরে বর্ণির আত্মহত্যার পরপরই পুলিশ প্রেমিক আবদুর রহমান রানাকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি আরও জানান, এ বিষয়ে বনানী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত রানা রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার দুর্গাপুর গ্রামের আবদুল মজিদের ছেলে।

No comments

Powered by Blogger.