রাজধানীর রাস্তাগুলো যেন পরিত্যক্ত সম্পত্তি by মোর্শেদ নোমান

‘তিন বছর যাবত্ রাস্তাগুলো মেরামতে ঢাকা সিটি করপোরেশনের কোনো উদ্যোগ নেই। গ্রামের এবড়োখেবড়ো রাস্তাগুলোও এর চেয়ে ভালো। এখানকার রাস্তাগুলো অনেকটাই পরিত্যক্ত সম্পত্তির মতো পড়ে আছে।’ রাজধানীর গুলশান এলাকার ২২ নম্বর সড়কে এভাবেই নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন ব্যবসায়ী এম এ মোহাইমিন সালেহ।

সায়মন গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট অব বাংলাদেশের (আটাব) সাবেক সভাপতি এম এ মোহাইমিন অভিযোগ করে বললেন, ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে বেশ কয়েকবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাদের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

গুলশান ১ নম্বর এলাকায় উদয় টাওয়ারের পেছনে সড়কগুলোর বেহাল অবস্থায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী। খানাখন্দ, এবড়োখেবড়ো রাস্তা, রাস্তায় গর্ত এখানকার চিত্র। পিচবিহীন রাস্তা দেখে মনেই হবে না, এটা রাজধানীর অভিজাত এলাকার কোনো সড়ক। এখান থেকে মাত্র কয়েক শ গজ দূরেই ডিসিসি উত্তরের সদর দপ্তর। কারোরই যেন নজর নেই এদিকে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, অনেকবার ডিসিসির সঙ্গে যোগাযোগ করে রাস্তা মেরামতের অনুরোধ জানানো হলেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

রাস্তাঘাটের বেহাল দশার বিষয়ে ডিসিসি উত্তরের প্রধান প্রকৌশলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
শুধু গুলশান নয়, রাজধানীর অনেক এলাকার চিত্র এমনই। ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ চলায় রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকার প্রধান সড়কের অবস্থা বেহাল। মগবাজার, ইস্কাটন, এফডিসির সামনের সড়ক, সাত রাস্তার মোড়, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী এলাকার সড়কগুলোতে যানবাহনে চড়লে ‘শরীরের হাড়গোড় নড়বড়ে হয়ে যায়’ বলে মন্তব্য করেছেন ওইসব এলাকার বাসিন্দারা। তবে উন্নয়নকাজের কারণে এ সমস্যাকে সহজভাবে নিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু অধিকাংশ এলাকার প্রধান সড়কের পাশাপাশি অন্য সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা কোনভাবেই মানতে নারাজ তাঁরা।

গুলশানের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াজির আলম বলেন, এ এলাকায় প্রচুর বিদেশি নাগরিক বসবাস করেন। ব্যবসায়িক কাজে এখানে যাঁরা আসেন, রাস্তাঘাটের অবস্থা দেখে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয় তাঁদের মধ্যে। কয়েক দিন আগে একাধিক পশ্চিমা দেশের কূটনীতিক তাঁর অফিসে আসার সময় রাস্তার বেহাল অবস্থা দেখে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন বলেও জানান তিনি।

মোহাম্মদপুর রিং রোডের বাসিন্দা সাইদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, রিং রোডের শ্যামলী অংশের রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে এবড়োখেবড়ো হয়ে আছে। কিন্তু মেরামতের উদ্যোগ কোনোভাবেই দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘সামনে বৃষ্টির সময় আসছে। অবস্থা যা, তাতে নৌকা চলতে পারবে এই সড়কে।’

একই অভিযোগ লালমাটিয়ার সাদিয়া জাহানের। আড়ংয়ের পেছনের এলাকায় ওয়াসার উন্নয়নকাজের জন্য সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করার পর সেখানকার অবস্থা বেশ নাজুক। যানবাহনে চলতে খুবই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। রাজধানীর আসাদগেট থেকে শুক্রাবাদ মোড়, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে রায়ের বাজার, একই এলাকা থেকে শিয়া মসজিদ এলাকার সড়কগুলোর কথাও তুলে ধরলেন এই গৃহিণী। বললেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই এসব সড়কে চলা দুষ্কর হয়ে পড়ে। রাস্তায় কোনো পথচারী হেঁটে যাওয়ার সময় সড়কে তৈরি হওয়া গর্তে পড়ার ঝুঁকি থাকে।
গাবতলী থেকে নিউমার্কেট হয়ে গুলিস্তান সড়কে নিয়মিত চলাফেরা করেন এমন একজন গাড়িচালক সবুর মিয়া বললেন, ‘হাড্ডিগুড্ডি ভাইঙ্গা যায়। গাড়ির অবস্থাও হইয়া পড়ে খারাপ।’
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে প্রায় প্রতিটি এলাকায়ই এ ধরনের সমস্যা দেখা গেছে। প্রধান সড়কের বাইরে বিশেষ করে মহল্লার সড়কগুলোর অবস্থা অনেকটাই নাজুক। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের অন্ত নেই। তাঁদের মতে, জনপ্রতিনিধি না থাকায় এ ধরনের উন্নয়নকাজের দিকে কারও কোনো নজর নেই।

যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা মিশু চৌধুরী বলেন, ‘ডিসিসির দুই অংশেই অল্প সময়ের জন্য প্রশাসক দায়িত্ব পান। সিটি করপোরেশন ভাগ করার পর থেকেই দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন চোখে পড়ছে না।’ ডিসিসির প্রশাসকেরা মাত্র ছয় মাসের জন্য দায়িত্ব পান বলে রুটিন কাজের বাইরে তেমন কোনো উন্নয়নকাজে হাত দেন না বলে ধারণা এই তরুণ প্রকৌশলীর।

ডিসিসি দক্ষিণের প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, খুবই অল্প সংখ্যক সড়ক মেরামত করা সম্ভব হয়নি। তবে এ বছর অনেক সড়কেই কাজ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আর্থিক সংকটের কারণে ঠিকাদারদের বিল দেওয়া যাচ্ছে না। যে রাজস্ব আদায় হচ্ছে সেটা বেতন-ভাতাসহ অগ্রাধিকার খাতে ব্যয় হচ্ছে। আর বাজেট সংকটের কারণে সব রাস্তার সংস্কারও করা সম্ভব হয় না।’

No comments

Powered by Blogger.