সন্ত্রাসের শাস্তি সাময়িক বহিষ্কার?- আবারও ছাত্রলীগ!

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পর এবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) সংবাদের শিরোনামে এনেছে ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নতুন উপাচার্য নিযুক্ত হওয়ার দিনটিতেই ছাত্রলীগ নিজেদের মধ্যে হানাহানিতে লিপ্ত হওয়ার ঘটনাটি কৌতূহলজনক।

এবার সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে ছাত্রলীগ জাবি শাখার দুই গ্রুপের মধ্যে। ছাত্রলীগের এক পক্ষ দোকানে খাওয়াদাওয়া করে বিল না দিয়ে চলে যাওয়া থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। এক পক্ষ পাঁচ হাজার টাকার বিল পরিশোধ না করায় অন্য পক্ষ তা নিয়ে আপত্তি
করে। বিশেষত, খাবারের দোকানি অন্য পক্ষের কাছে অভিযোগ করলে তারা ঘটনাটিকে ইস্যু করে। এতেই দফায় দফায় সংঘাত
হয় এবং একজন গুলিবিদ্ধ হওয়াসহ মোট আহত হন ১৮ জন। পুলিশ এসে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে বিবদমান দুই পক্ষকে নিরস্ত করে।
এর কিছুদিন আগেই আদালত থেকে জুবায়ের হত্যা মামলার চার আসামি পলায়ন করেন। জুবায়ের ও তাঁর ঘাতকেরা সবাইই ছিলেন ছাত্রলীগেরই নেতা-কর্মী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মীরা গত এক যুগে নানা ধরনের অনৈতিক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা, কুপিয়ে হত্যাসহ নিয়মিতভাবেই তাঁরা ক্যাম্পাসকে সন্ত্রাসের কাছে জিম্মি করে রাখছেন। এসব ঘটনার দায়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আচরণ করেছে। কাউকে ছাড় দিয়েছে, কাউকে বহিষ্কার বা সাময়িক বহিষ্কার করেছে।
এবারের ঘটনায়ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চারজনকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে। এই সাময়িক বহিষ্কৃতদের তাতে কোনো ক্ষতি হবে না। তাঁরা দিব্যি ক্যাম্পাসে বহাল তবিয়তে থাকবেন এবং একটা সময় পর দেনদরবার, তদবির ইত্যাদি করে সংগঠনে পুনর্বহালও হবেন। যে ঘটনার জন্য ছাত্রত্ব বাতিলসহ ফৌজদারি মামলায় শাস্তি হওয়ার কথা, সে রকম সন্ত্রাসী ঘটনায় সাময়িক বহিষ্কারকে তাই শাস্তির নামে কৌশলগত ছাড় বৈকি। আইন যদি সবার জন্য সমান হয়, তাহলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অপকর্মকেও আইনের মাধ্যমে প্রতিকার করতে হবে। সাময়িক বহিষ্কারের নামে এই ছাড় দেওয়ার সংস্কৃতি যে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস চলতে থাকার অন্যতম কারণ, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
গত রোববারই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য নিযুক্ত হয়েছেন। বলা দরকার যে তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম নারী উপাচার্য। তাঁর যোগদানের দিনেই ছাত্রলীগের দুই পক্ষ যেভাবে ছোট্ট ঘটনা নিয়ে এ রকম সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ল, তাতে শিক্ষকরাজনীতির সঙ্গে জড়িতদের ইন্ধন থাকা সম্ভব বলে সংশ্লিষ্ট অনেকের বিশ্বাস। সবাই জানে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্ররাজনীতি অনেকটাই ক্ষমতাশালী শিক্ষকরাজনীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ছাত্রসংগঠনকে ব্যবহার করে তাঁরা দলীয়, গোষ্ঠীগত বা ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি করিয়ে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই ঘটনাও সেই আদলেই ঘটেছে কি না, তা জানা ও জানানোর দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়টির শীর্ষ মহলের।

No comments

Powered by Blogger.