নির্বাচন কমিশনের দৃঢ় ভূমিকা কই?- উপজেলা নির্বাচন ও অস্ত্রবাজি

১৫ মার্চ তৃতীয় দফা উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে যেমন আচরণবিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে, তেমনি অস্ত্র হাতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকের ওপর হামলা ও ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। নির্বাচন কমিশন বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে এমন বলা যাবে না।

রোববারের প্রথম আলো পত্রিকায় অস্ত্র হাতে এক প্রার্থীর দেহরক্ষীকে অন্য প্রার্থীর সমর্থকদের তাড়া করার ছবি ছাপা হয়েছে। গাজীপুরের শ্রীপুরে প্রতিদ্বন্দ্বী এ দুই প্রার্থীই সরকারি দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত এবং সংঘর্ষ হয়েছে দলটির দুই গ্রুপের মধ্যে। অস্ত্র নিয়ে এ ধরনের সংঘর্ষ পুলিশের সামনেই ঘটেছে। পুলিশ কেন অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারল না, দুই পক্ষই সরকারি দলের বলে? তা-ই যদি হয়, তবে নির্বাচন কমিশন যে তার ভূমিকা পালন করতে পারছে না, সেটা স্পষ্ট।
প্রকাশ্যে এ ধরনের অস্ত্রবাজির ছবি পত্রিকায় ছাপা হওয়ার পর সম্ভবত টনক নড়েছে পুলিশ প্রশাসনের। অস্ত্রবাজদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, উচ্চপর্যায় থেকে শ্রীপুর থানাকে দুই ঘণ্টার সময় দেওয়া হয়েছে। এরপর অস্ত্র উদ্ধার না হলেও নয়জন আটক হয়েছে। নির্বাচনকালীন সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর বাড়তি নজর ও যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ তৎপর থাকবে, সেটাই তো প্রত্যাশিত। এ ধরনের ঘটনা ঘটার পর যদি পুলিশের উচ্চপর্যায় থেকে অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিতে হয়, তবে তো ধরে নিতে হচ্ছে যে আইন নিজের মতো চলছে না। শুধু অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার নয়, শ্রীপুর থানার পুলিশ কেন অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে তখনই ব্যবস্থা নিল না, সেই জবাবদিহির বিষয়টি জরুরি।
নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন ঘটে গেলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না। ফরিদপুরে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীর অ্যাম্বুলেন্স শোভাযাত্রার ছবি ছাপা হয়েছে পত্রিকায়। নানা স্থানে এ ধরনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। এর আগে যে দুই দফা নির্বাচন হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে প্রথম দফার তুলনায় দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনী অনিয়মের ঘটনা ও কারচুপির অভিযোগ বেশি এবং সহিংসতায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তৃতীয় দফা নির্বাচনের আগেই অস্ত্রবাজি ও এ ধরনের শক্তি প্রদর্শনের ঘটনা আশঙ্কাকেই আরও বাড়িয়ে তুলছে।
আমরা দেখেছি, ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের অসংখ্য নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা যেমন থাকে, তেমনি নির্বাচন কমিশনের কঠোর অবস্থান ও আচরণই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে সবাইকে নির্বাচনী বিধিবিধান মেনে চলতে বাধ্য করার মতো দৃঢ়তা দেখাতে পারলে এটা সম্ভব বলে আমরা মনে করি।
এবারের দুই দফা উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আমাদের যে অভিজ্ঞতা হলো তাতে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট দৃঢ়তার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারেনি। তৃতীয় দফা নির্বাচন সামনে রেখে আগের ভুলগুলো শোধরানোর সুযোগ নির্বাচন কমিশন নেবে কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়।

No comments

Powered by Blogger.