রোহিঙ্গাদের জন্য ঝুঁকি না পুরস্কার?

মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলের জরাজীর্ণ শরণার্থী শিবিরগুলোর বাসিন্দা উদ্বাস্তু মুসলমানেরা নিজেদের রোহিঙ্গা হিসেবে পরিচয় দিতে চান। তাঁদের এই অধিকার পাওয়ার দাবি বহু বছরের পুরোনো। দেশটিতে এবারের আদমশুমারির মধ্য দিয়ে সেই দাবি পূরণ হতেও পারে। তবে এতে নতুন করে অস্থিতিশীলতার আশঙ্কাও রয়েছে। জাতিসংঘের সহায়তায় মিয়ানমারে ৩০ বছর পর চলতি মাসের শেষ নাগাদ আদমশুমারি হচ্ছে। এতে দেশটির ব্যাপারে বিভিন্ন নতুন তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাবে। জনসংখ্যা নিয়ে কর্তৃপক্ষ এখনো সেই ১৯৮৩ সালের ত্রুটিপূর্ণ হিসাবের ওপর নির্ভর করছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিভক্তির মূলে রয়েছে জাতিগত পরিচয়ের প্রশ্ন। সেখানকার মুসলমান ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিদ্বেষ দুই বছর আগে রক্তাক্ত রূপ নিয়েছিল। এতে বহু মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি এক লাখ ৪০ হাজার মানুষ বাড়ি এমনকি দেশ ছাড়া হয়। আর তাঁদের অধিকাংশই রোহিঙ্গা মুসলিম, কোথাও যাঁদের আশ্রয় নেই। রাখাইনের রাজধানী সিত্তে শহরের উপকণ্ঠে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রও সহিংসতার শিকার হচ্ছে। তাই নতুন করে আদমশুমারির পর সেখানে আবার অস্থিরতার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
তাই ভীতসন্ত্রস্ত অনেকেই সেখান থেকেও পালানোর চিন্তাভাবনা করছেন। কিন্তু তাতে বাধা দিচ্ছে স্থানীয় লোকজন। মিয়ানমারের আট লাখ রোহিঙ্গাকে নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হয় না। জাতিসংঘের বিবেচনায়, তাঁরা বিশ্বের সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। ভ্রমণ, কর্ম, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা গ্রহণ এবং বিয়ের ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন বাধার মুখে পড়ে। সরকারের দাবি, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের কেউ নন; তারা মূলত প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে অনুপ্রবেশ করেছে। রোহিঙ্গাদের একটি অংশ আশঙ্কা করছে, এবারের আদমশুমারির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার আশার প্রদীপ হয়তো একেবারেই নিভিয়ে দেওয়া হবে। আদমশুমারির ফরমে রোহিঙ্গাদের পরিচয় চিহ্নিতকরণে কোনো জায়গা (বক্স) রাখা হয়নি। অথচ তারা দেশটিতে সরকারিভাবে স্বীকৃত ১৩৫টি সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। সর্বশেষ আদমশুমারিতে রাখাইনের মুসলমানদের অনেককে বাঙালি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যায়, এবারের আদমশুমারির কারণে উত্তেজনা বৃদ্ধির ঝুঁকি বেড়েছে। এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.