ভারতে কে গড়ছে সরকার?

ভারতে লোকসভা নির্বাচনের তফসিল ইতিমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনকে ঘিরে চলছে জোট ভাঙা-গড়ার খেলা। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা (ইউপিএ) ও প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক মোর্চার (এনডিএ) মধ্যেই। এ ছাড়া রয়েছে বামপন্থী ও স্থানীয় কিছু দলকে নিয়ে গঠিত জোট তৃতীয় ফ্রন্ট বা ফেডারেল ফ্রন্ট আর রাজনীতিতে সাড়া জাগানো অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল আম আদমি পার্টি (এএপি)। প্রতিদ্বন্দ্বী এই জোট ও দলগুলোর যেমন রয়েছে শক্তিশালী দিক, তেমনি রয়েছে কিছু দুর্বল দিক। তাদের এসব দিক নিয়ে চলছে নানা বিচার-বিশ্লেষণ। কংগ্রেস ও ইউপিএ শক্তিশালী দিক: কংগ্রেসের অবিসংবাদিত নেতা রাহুল গান্ধী। এ নিয়ে দলে কোনো মতভেদ নেই। দলীয় সংহতির বিবেচনায় এটা কংগ্রেসের শক্তির দিক। দুর্বলতা: গত বছরের ডিসেম্বরে চারটি বিধানসভা নির্বাচনে হেরেছে কংগ্রেস। এটা লোকসভা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে।
এ ছাড়া মুদ্রাস্ফীতি ও দলীয় নেতাদের দুর্নীতির বিষয়গুলো তো আছেই। নির্বাচনী সমাবেশে রাহুলের বক্তব্যও ইউপিএ সরকারের এই দুর্বলতার বিপরীতে বড় প্রভাব ফেলতে পারছে না। কংগ্রেসের সবচেয়ে ভয় টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে নির্বাচনে যাওয়া। সব মিলিয়ে দলটির রেকর্ড পরিমাণ আসন কমে যাওয়ারও শঙ্কা রয়েছে। সুযোগ: বিজেপি সরকার গঠনের মতো প্রয়োজনীয় আসন না পেলে এবং তৃতীয় ফ্রন্ট একক নেতা নির্বাচন নিয়ে মতৈক্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে সুযোগ আসতে পারে কংগ্রেসের। সেটা নিজে সরকার গঠন কিংবা কোনো পক্ষকে সমর্থন দিয়ে সরকার গঠনে সহায়তা করা। বিজেপি ও এনডিএ শক্তিশালী দিক: নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে অসম্ভব উদ্যমী ব্যক্তিত্ব নরেন্দ্র মোদিকে পাওয়া বিজেপির দারুণ শক্তির জায়গা। প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মোদির মনোনয়ন প্রশ্নে শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে যে টানাপোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, তা-ও কাটিয়ে উঠেছে দলটি। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জরিপ এনডিএর জয়ের আভাস দিয়েছে। দুর্বলতা: ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গা এখনো মোদির সবচেয়ে দুর্বল দিক হিসেবে বিবেচিত। ওই দাঙ্গা দমনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। বিষয়টি নির্বাচনে এনডিএকে ভোগাতে পারে। দেশের দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিজেপির অবস্থান বেশ দুর্বল। কংগ্রেসবিরোধী ভোটগুলো এএপির বাক্সে চলে যাওয়ার আশঙ্কাও মাথায় রাখতে হবে বিজেপিকে।
সুযোগ: এই মুহূর্তে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের অবস্থান দুর্বলতম পর্যায়ে, যাকে ১৯৯৬-৯৮ সালে কংগ্রেসের অবস্থার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। এটাই বিজেপির ক্ষমতায় আসার অন্যতম সুযোগ। তৃতীয় বা ফেডারেল ফ্রন্ট শক্তিশালী দিক: কংগ্রেস ও বিজেপির মতো সাংগঠনিক কাঠামোর প্রয়োজন নেই তৃতীয় ফ্রন্টের। বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা দল নিয়ে ফ্রন্ট হওয়ায় স্থানীয়ভাবে শক্তিশালী থাকবে তারা। দুর্বলতা: ফ্রন্টে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-প্রকাশ কারাত, এম করুণানিধি-জে জয়ললিতা, মুলায়েম সিং-মায়াবতীর মতো প্রতিদ্বন্দ্বী নেতারা আছেন। তাঁদের নিয়ে এক টেবিলে বসাই এই ফ্রন্টের জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ হবে। সুযোগ: জরিপ এনডিএর জয়ের আভাস দিলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। আর কংগ্রেস তো দুর্বলতম অবস্থায়। তখন সুযোগ আসতে পারে এই ফ্রন্টের। নতুন দল এএপির মূল শক্তি শহুরে নাগরিকদের সমর্থন। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ব্যক্তিত্বও দলটির জন্য ইতিবাচক। তাঁর দুর্নীতিবিরোধী শক্ত অবস্থান ও বিজেপি-কংগ্রেসবিরোধী ভোটগুলো এএপির বাক্সে পড়বে। তবে দেশজুড়ে নির্বাচন করার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই দলটির। সব আসনে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীও নিশ্চিত করতে পারেনি এএপি। টাইমস অব ইন্ডিয়া।

No comments

Powered by Blogger.