আমার ময়না প্রকল্প শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছিল... by মোকাম্মেল হোসেন
প্রধান
নির্বাচন কমিশনার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। গভীর আগ্রহ নিয়ে টেলিভিশনের
সামনে বসে আছি। ভাষণ শুরু হল। ভাষণের এক পর্যায়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের
তফসিল ঘোষণার সময় তার কথাবার্তা শুনে হোঁচট খেলাম। আরে! একই কথা তিনি
দু’বার বলছেন কেন! এ রকম রিপিটেশনের প্রবণতা তো পাখিদের মধ্যে লক্ষ্য করা
যায়! প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে রিপিটেশন করতে দেখে আমার ময়না প্রকল্পের
কথা মনে পড়ে গেল। অনেক বছর আগের কথা। বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার পর ঝিগাতলার একটা
বাড়িতে কয়েকজন মিলে মেস করে থাকি। চাকরি করি বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদ নামের
একটা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে। গাঁট্টি-বোচকা নিয়ে মেসে ওঠার পর পাশের বাড়ির
জানালায় একটা চাঁদমুখ দেখে হৃদয়টা মোচড় দিয়ে উঠল। উদ্যোগ ও উদ্যম থাকা
সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রেমে সফল হতে পারিনি। মনে হল, এবার একটা
চান্স নেয়া যেতে পারে। ভাবনা অনুযায়ী প্রেমসমুদ্রে ঝাঁপ দিলাম।
ঝাঁপ তো দিলাম- এখন মেয়েটিকে এ কথা জানাব কীভাবে? একবার ভাবলাম, মেয়েটির বাসায় যে হকার রোজ পত্রিকা দেয়- তার শরণাপন্ন হই। আবার মনে হল, আমাদের বুয়াকে কাজে লাগালে কেমন হয়! দুটি পদক্ষেপই সম্ভাবনাময়, তবে ঝুঁকি আছে। হকার কিংবা বুয়ার দূতিয়ালি কোনোক্রমে লিক হলে মানসম্মান নিয়ে টানাটানি শুরু হতে পারে। নিরাপদ কোনো পদ্ধতির কথা ভাবতে ভাবতে একদিন অফিস থেকে ফিরছি- রাস্তায় এক পাখি বিক্রেতার সঙ্গে দেখা হল। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম-
: ভাই, কথা বলতে পারে, এমন কোনো পাখি আছে?
- আছে, স্যার।
খাঁচায় বন্দি একটা ময়নার বাচ্চার দিকে আমার মনোযোগ আকর্ষণ করে পাখিওয়ালা বলল-
: এইটা নিয়া যান স্যার। খুবই গুণের পাখি। আপনে ওরে যে কথা শিখাইবেন, ও তাই শিখবে; তাই বলবে...
খাঁচা হাতে মেসে ফিরলাম। বুয়া চা-নাস্তা দিতে এসে অবাক হয়ে বলল-
: মুকু মামা, শালিক পক্ষীরে খাঁচার মধ্যে বন্দি কইরা রাখছেন কী জন্য?
বুয়ার কথা শুনে বিরক্ত হলাম। নাদান আওরাত! ময়নাকে বলছে শালিকের বাচ্চা! সরু চোখে বুয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম-
: এইটা জাইন্যা তুমি কী করবা? তুমি তোমার কাজ কর।
আমার কথায় ভ্রুক্ষেপ না করে বুয়া বলল-
: মামা! এইটা কি ছেলে পক্ষী, না মেয়ে পক্ষী?
- ছেলে হইলে কী করবা! বিবাহ করবা?
: হায় আল্লাহ, মামা কী কয়! পক্ষীর সঙ্গে মানুষের কখনও বিবাহ হয়? মানুষের বিবাহ হয় মানুষের সঙ্গে। যেমন আমার বিবাহ হইছিল সুলতানের বাপের সঙ্গে।
ময়না নিয়ে আমার ভেতরে অন্যরকম একটা উত্তেজনা কাজ করছিল। বুয়ার কচকচানিতে রেগে গিয়ে বললাম-
: তোমার বিবাহ সুলতানের বাপের সঙ্গে হইছিল, না হুরমুজের বাপের সঙ্গে হইছিল- সেইটা জানার কোনো আগ্রহ আমার নাই। তুমি দয়া কইরা এইখান থেইক্যা বিদায় হও।
ধমক খেয়েও বুয়াকে বিচলিত মনে হল না। সে প্রবল উৎসাহ নিয়ে পুনরায় বলল-
: মামা দেখেন, শালিকের বাচ্চাটা কেমন কেক্কর-মেক্কর করতেছে। মনে অয়, পক্ষীটার ভুখ লাগছে।
আরে যন্ত্রণা! বারবার বলার পরও সে শালিকের বাচ্চা, শালিকের বাচ্চা করছে। চিৎকার করে বললাম
: বুয়া, রিমেম্বার ইট- এইটা শালিকের বাচ্চা না, ময়নার বাচ্চা।
ময়না প্রকল্পের কাজ শুরু করে দিলাম। খাঁচা সামনে নিয়ে ময়নার উদ্দেশে বললাম
: বল ময়না, বল- আই লাভ ইউ; আমি তোমাকে ভালোবাসি। বল, বল। লজ্জার কিছু নাই। বল- আমি তোমাকে...
এ সময় সোলেমান এসে বলল-
: কার সঙ্গে কথা বলছ?
--ময়নার সঙ্গে।
: ময়না?
- হ্যাঁ, ময়না। খাঁটি পাহাড়ি ময়না। অফিস থেইক্যা ফেরার পথে কিনছি।
সোলেমান খাঁচাটা নেড়েচেড়ে বলল-
: এটা তো একেবারেই বাচ্চা!
ঠোঁটের কোনায় রহস্যময় হাসি ঝুলিয়ে রেখে বললাম-
: এইটাই হাতেখড়ি দেওয়ার উপযুক্ত বয়স।
- হাতেখড়ি! ময়নাকে তুমি স্কুলে পাঠাবে নাকি?
: স্কুলে ঠিক পাঠাব না, তবে শিক্ষিত কইরা তুলব!
- ইন্টারেস্টিং! কী রকম?
: আমার ময়নারে আজ থেইক্যা শিখাব...
- কী শিখাবে!
: আই লাভ ইউ- আমি তোমাকে ভালোবাসি।
- তারপর?
: তারপর জানালার পাশে ময়নারে রাইখ্যা দিয়া বলব- সামনের বাসার জানালায় সেই চাঁদমুখ দ
ঝাঁপ তো দিলাম- এখন মেয়েটিকে এ কথা জানাব কীভাবে? একবার ভাবলাম, মেয়েটির বাসায় যে হকার রোজ পত্রিকা দেয়- তার শরণাপন্ন হই। আবার মনে হল, আমাদের বুয়াকে কাজে লাগালে কেমন হয়! দুটি পদক্ষেপই সম্ভাবনাময়, তবে ঝুঁকি আছে। হকার কিংবা বুয়ার দূতিয়ালি কোনোক্রমে লিক হলে মানসম্মান নিয়ে টানাটানি শুরু হতে পারে। নিরাপদ কোনো পদ্ধতির কথা ভাবতে ভাবতে একদিন অফিস থেকে ফিরছি- রাস্তায় এক পাখি বিক্রেতার সঙ্গে দেখা হল। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম-
: ভাই, কথা বলতে পারে, এমন কোনো পাখি আছে?
- আছে, স্যার।
খাঁচায় বন্দি একটা ময়নার বাচ্চার দিকে আমার মনোযোগ আকর্ষণ করে পাখিওয়ালা বলল-
: এইটা নিয়া যান স্যার। খুবই গুণের পাখি। আপনে ওরে যে কথা শিখাইবেন, ও তাই শিখবে; তাই বলবে...
খাঁচা হাতে মেসে ফিরলাম। বুয়া চা-নাস্তা দিতে এসে অবাক হয়ে বলল-
: মুকু মামা, শালিক পক্ষীরে খাঁচার মধ্যে বন্দি কইরা রাখছেন কী জন্য?
বুয়ার কথা শুনে বিরক্ত হলাম। নাদান আওরাত! ময়নাকে বলছে শালিকের বাচ্চা! সরু চোখে বুয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম-
: এইটা জাইন্যা তুমি কী করবা? তুমি তোমার কাজ কর।
আমার কথায় ভ্রুক্ষেপ না করে বুয়া বলল-
: মামা! এইটা কি ছেলে পক্ষী, না মেয়ে পক্ষী?
- ছেলে হইলে কী করবা! বিবাহ করবা?
: হায় আল্লাহ, মামা কী কয়! পক্ষীর সঙ্গে মানুষের কখনও বিবাহ হয়? মানুষের বিবাহ হয় মানুষের সঙ্গে। যেমন আমার বিবাহ হইছিল সুলতানের বাপের সঙ্গে।
ময়না নিয়ে আমার ভেতরে অন্যরকম একটা উত্তেজনা কাজ করছিল। বুয়ার কচকচানিতে রেগে গিয়ে বললাম-
: তোমার বিবাহ সুলতানের বাপের সঙ্গে হইছিল, না হুরমুজের বাপের সঙ্গে হইছিল- সেইটা জানার কোনো আগ্রহ আমার নাই। তুমি দয়া কইরা এইখান থেইক্যা বিদায় হও।
ধমক খেয়েও বুয়াকে বিচলিত মনে হল না। সে প্রবল উৎসাহ নিয়ে পুনরায় বলল-
: মামা দেখেন, শালিকের বাচ্চাটা কেমন কেক্কর-মেক্কর করতেছে। মনে অয়, পক্ষীটার ভুখ লাগছে।
আরে যন্ত্রণা! বারবার বলার পরও সে শালিকের বাচ্চা, শালিকের বাচ্চা করছে। চিৎকার করে বললাম
: বুয়া, রিমেম্বার ইট- এইটা শালিকের বাচ্চা না, ময়নার বাচ্চা।
ময়না প্রকল্পের কাজ শুরু করে দিলাম। খাঁচা সামনে নিয়ে ময়নার উদ্দেশে বললাম
: বল ময়না, বল- আই লাভ ইউ; আমি তোমাকে ভালোবাসি। বল, বল। লজ্জার কিছু নাই। বল- আমি তোমাকে...
এ সময় সোলেমান এসে বলল-
: কার সঙ্গে কথা বলছ?
--ময়নার সঙ্গে।
: ময়না?
- হ্যাঁ, ময়না। খাঁটি পাহাড়ি ময়না। অফিস থেইক্যা ফেরার পথে কিনছি।
সোলেমান খাঁচাটা নেড়েচেড়ে বলল-
: এটা তো একেবারেই বাচ্চা!
ঠোঁটের কোনায় রহস্যময় হাসি ঝুলিয়ে রেখে বললাম-
: এইটাই হাতেখড়ি দেওয়ার উপযুক্ত বয়স।
- হাতেখড়ি! ময়নাকে তুমি স্কুলে পাঠাবে নাকি?
: স্কুলে ঠিক পাঠাব না, তবে শিক্ষিত কইরা তুলব!
- ইন্টারেস্টিং! কী রকম?
: আমার ময়নারে আজ থেইক্যা শিখাব...
- কী শিখাবে!
: আই লাভ ইউ- আমি তোমাকে ভালোবাসি।
- তারপর?
: তারপর জানালার পাশে ময়নারে রাইখ্যা দিয়া বলব- সামনের বাসার জানালায় সেই চাঁদমুখ দ
No comments