প্যারিস সম্মেলনের আগে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর করণীয় by অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম
১৭
নভেম্বর ২০১৩ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকায় একসঙ্গে একাধিক
টর্নেডো আঘাত হানার ঘটনায় বিস্মিত হয়েছেন দেশটির বিশেষজ্ঞরাও। তারা একমত
হতে পারছিলেন না- প্রকৃতপক্ষে কয়টি টর্নেডো সৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা
ওইদিন সকালেই সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিলেন সর্বত্র। আর সন্ধ্যায় একের পর এক
টর্নেডো আঘাত হানে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকায়। ১৭ নভেম্বরের এ ঘটনায়
হতবাক হয় বিশ্ববাসীও। স্বল্পোন্নত কোনো দেশের আবহাওয়াবিদরা এমন সতর্কবার্তা
প্রেরণ করলে তাদের ব্যবহৃত যন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে নানা রকম বিতর্ক
হতো। কারণ আবহাওয়াবিদরা একই দিনে ৩০ থেকে ৪০টি টর্নেডো সৃষ্টির তথ্য পেয়ে এ
বিষয়ে জনগণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের
বিশেষজ্ঞরা এ সতর্কবার্তা প্রেরণ করেছেন, তাই এ নিয়ে জোরালো বিতর্কের
সৃষ্টি হয়নি। একসঙ্গে এত সংখ্যক টর্নেডো সৃষ্টির বিষয়টিকে অত্যন্ত
গুরুত্বের সঙ্গেই বিবেচনায় নিতে হবে। স্বল্পোন্নত কোনো দেশে একসঙ্গে একাধিক
টর্নেডো আঘাত হানলে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তা বিবেচনায় নিয়ে
সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্ববাসীকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
গ্রহণ করতে হবে। ১৭ নভেম্বর ২০১৩ সন্ধ্যায় টর্নেডোর আঘাতের পর ইলিনয়,
ইন্ডিয়ানা, আইওয়া, মিশিগান, ওহায়ো, মিসৌরি, উইসকনসিন- এসব এলাকায় যে
ধ্বংসের চিহ্ন স্পষ্ট হয়েছে, তাতে স্বল্পোন্নত দেশের যে কোনো নাগরিক
নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে আতংকিত হবে। সাধারণভাবে মনে করা হয়Ñ উন্নত
দেশের জনগণ সুরক্ষিত ভবনে বসবাস করার ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে তাদের তেমন
ক্ষয়ক্ষতি হয় না। কিন্তু সাম্প্রতিক টর্নেডোর তাণ্ডব আমাদের আগের অনুমানকে
ভুল প্রমাণিত করেছে। এখন এটাই স্পষ্ট হচ্ছে যে, এভাবে টর্নেডোর গতি বাড়তে
থাকলে শিল্পোন্নত দেশের জনগণও টর্নেডোর তাণ্ডব থেকে নিজেদের রক্ষা করতে
পারবে না। কাজেই সময় থাকতেই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। টর্নেডো
মোকাবেলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ প্রস্তুত থাকে, কারণ এটা তাদের কাছে
নতুন কোনো অভিজ্ঞতা নয়। কিন্তু এবার একসঙ্গে অনেক টর্নেডো আঘাত করেছে। এটা
তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে অনেক আগেই সতর্ক করে বলেছেন,
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অসময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত করবে এবং দিন দিন এসব
ঝড়ের গতি বাড়তে থাকবে।
আজ থেকে কোটি বছর আগে মানবসৃষ্ট দূষণ না থাকার পরও নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি হয়েছে। অব্যাহত গবেষণার পর একদিন অতীতের সেসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ স্পষ্ট হবে। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন নিয়ন্ত্রণ না করলে বিশ্ববাসীর ভোগান্তি বাড়তে থাকবে। বিজ্ঞানীদের এসব সতর্কবার্তা প্রকাশের পর গত কয়েক দশকে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও শিল্পোন্নত দেশগুলো গ্রিন হাউস গ্যাস নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক এত বৈঠকের পর ২০১২ সালে বিশ্বে হাজার কোটি টন কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গমনের প্রেক্ষাপটে ওইসব বৈঠকের কার্যকারিতার বিষয়টিই প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
ফিলিপাইনে টাইফুনের তাণ্ডবের পর অল্প সময়ের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রে একই সন্ধ্যায় পর পর ৩০ বা ৪০টি টর্নেডোর আঘাত, এর কয়েক দিন পর ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে ‘হেলেন’-এর আঘাত- এত ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরও কি শিল্পোন্নত দেশগুলো সতর্ক হবে না। এত ক্ষয়ক্ষতির পরও ওয়ারশতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে শিল্পোন্নত দেশগুলো দ্রুত সিদ্ধান্তে না আসার বিষয়টি দুঃখজনক। লিমা ও প্যারিস সম্মেলনে ইতিবাচক প্রাপ্তি ঘটবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে ওয়ারশ সম্মেলনে। লিমা ও প্যারিস সম্মেলন থেকে বড় ধরনের প্রাপ্তির জন্য মূল সম্মেলন শুরুর আগেই বিশ্ববাসীর করণীয় নির্ধারণে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির জন্য সম্মিলিতভাবে বহুমুখী তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে।
পৃথিবীতে মোট জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব লক্ষ্য করা যায়। ধারাবাহিক অপুষ্টির কারণে এসব দরিদ্র মানুষ নানা রকম রোগে আক্রান্ত হয়। যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাতের পর এসব হতদরিদ্র মানুষের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করে। এসব দরিদ্র মানুষের ভোগান্তি দূর করে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিত করতে হলে শিল্পোন্নত দেশগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। শিল্পোন্নত দেশগুলোর জনগণ বিলাসপণ্য ব্যবহারে কৃচ্ছ্রতার পরিচয় দিলে বিশ্বব্যাপী কার্বন-ডাই অক্সাইডের নির্গমন অনেক কমবে।
শিল্পোন্নত দেশগুলো যদি গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন অব্যাহত রাখে, তাহলে বৈশ্বিক উষ্ণতা দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাবে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে মানব সভ্যতা কতটা হুমকির মুখে পড়বে, এ বিষয়টি সাধারণ মানুষের কাছেও এখন স্পষ্ট। ভয়াবহ পরিণতির কথা জেনেও শিল্পোন্নত দেশগুলো কয়লার ব্যবহার কাক্সিক্ষত মাত্রায় কমাতে পারছে না। বিদ্যমান বাস্তবতায় বিজ্ঞানের মৌলিক গবেষণায় সব দেশের বরাদ্দ বাড়াতে হবে। ধারাবাহিক গবেষণার মাধ্যমে বিকল্প জ্বালানি খাতে বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করতে হবে।
সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে গত তিন দশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষয়ক্ষতি তুলে ধরা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়- উল্লিখিত সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে চার ট্রিলিয়ন ডলার। এর দুই-তৃতীয়াংশ হয়েছে তীব্র ঝড়, বন্যা ও খরার কারণে। উল্লিখিত প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে প্রাণহানি, সম্পদ ও অবকাঠামোগত ক্ষতির হিসাব তুলে ধরা হয়। প্রকৃতপক্ষে এক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষকে উদ্বাস্তু জীবনের ভাগ্য বরণ করতে হয়। স্বজনহারা মানুষের ক্ষয়ক্ষতির সাময়িক হিসাব পাওয়া গেলেও তাদের প্রকৃত ক্ষতি কোনোভাবেই নিরূপণ করা সম্ভব নয়।
বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৮০ সালে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বছরে ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার, যা গত কয়েক বছরে চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্লিখিত প্রতিবেদনে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশ্বে বছরে ২০০ বিলিয়ন ডলারের যে ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তার বেশিরভাগ ক্ষতিই হয় স্বল্পোন্নত দেশে। স্বল্পোন্নত দেশের দরিদ্র জনগণকে এই ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে সুরক্ষার জন্য টেকসই আবাস ও অন্যান্য সহায়তা প্রদানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে চিকিৎসা ও ত্রাণ কার্যে যাতে কোনো রকম বিলম্ব না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণে বিজ্ঞানীরা শস্য কিংবা ফলের নতুন জাত আবিষ্কারে সাফল্যের পরিচয় দিতে সক্ষম হলেও নতুন জাতের ফসলের কারণে দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশের ওপর কী প্রভাব পড়ে এটাও গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার বিষয়। শস্য বা ফলের নতুন জাত আবিষ্কারে বিপুল অর্থের প্রয়োজন, যা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষে জোগান দেয়া সম্ভব নয়। এ অবস্থায় শস্য বা ফলের নতুন জাত শিল্পোন্নত দেশের ল্যাবরেটরিতে আবিষ্কার হলে মেধাসত্ত্বের কারণে শিল্পোন্নত ও স্বল্পোন্নত দেশের মধ্যকার বৈষম্য আরও বেড়ে যেতে পারে। এসব সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া ল্যাবরেটরির প্রাপ্ত ফলাফল সামনে রেখে অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস প্রকাশ করাও অনুচিত। কারণ ল্যাবরেটরির সাফল্য আর কৃষক পর্যায়ের সাফল্যের মধ্যে মিল না থাকলে তাকে প্রকৃত সাফল্য বলা যায় না। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত সুফল পাওয়ার জন্য প্রান্তিক কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
শিল্পোন্নত দেশগুলো পৃথিবীর পরিবেশ সুরক্ষায় বিভিন্ন সময়ে অনেক অঙ্গীকার করেছে। তারা তাদের অঙ্গীকার রক্ষায় যত্নবান না হলে পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে, তা ইতিমধ্যে বহুবার স্পষ্ট হয়েছে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ের কথাও উল্লেখ করা যায়। অল্প সময়ের ব্যবধানে এতগুলো সামুদ্রিক ঝড় আর কখনোই দেখা যায়নি। কাজেই বিশ্বকে সুরক্ষার জন্য সবাইকেই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হব। এক্ষেত্রে যেহেতু শিল্পোন্নত দেশগুলোর দায় বেশি, তাই তাদেরই অধিক দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।
২.
গত এক দশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এত আলোচনার পরও গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব সম্প্রদায় কোনো সমঝোতায় আসতে না পারার বিষয়টি দুঃখজনক। সব দেশই কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রাখে। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে পৌঁছানোর পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের বিষয়েও সবাইকে সচেতন হতে হবে। কয়লার মতো সাশ্রয়ী জ্বালানি ব্যবহারের ফলাফল সম্পর্কে সবাই সচেতন থাকার পরও এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। গত দুই দশকে বিভিন্ন জ্বালানির অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির তথ্যগুলোকে বিবেচনায় নিলে এটাই স্পষ্ট হয়, আগামীতেও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। সম্প্রতি জাপানের পারমাণবিক চুল্লিতে সংঘটিত দুর্ঘটনার পর জ্বালানি খাতে বিশ্ববাসীর উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। যে কোনো প্রযুক্তির ব্যবহারে সামান্য ত্র“টি বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। পারমাণবিক চুল্লির ক্ষেত্রে এ বিপর্যয় কী ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে, তা আমরা জাপানে সংঘটিত দুর্ঘটনার পর লক্ষ্য করেছি। বিদ্যমান বাস্তবতায় পরমাণু প্রযুক্তিকে পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত করা না গেলে জ্বালানি খাতের অনিশ্চয়তা সহজে দূর হবে না। কাজটি অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু বিশ্ববাসীর যৌথ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে এ লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। একই সঙ্গে নবায়নযোগ্য অন্যান্য জ্বালানি খাতে ব্যাপক সাফল্য অর্জনের লক্ষ্য নিয়েও যৌথ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। জ্বালানি খাতে বিদ্যমান অনিশ্চয়তার অবসান কবে হবে- এ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারছেন না। এ অবস্থায় শিল্পোন্নত দেশের পাশাপাশি দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে গ্রিন হাউস গ্যাস নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।
বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর উপকূলীয় এলাকায় হতদরিদ্র জনগণের ভোগান্তি কী চরম আকার ধারণ করে, তা ২০০৭ সালে সাইক্লোন সিডরের পর বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার কয়েকটি জেলায় লক্ষ্য করা গেছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বহুমুখী উদ্যোগের ফলে সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জনগণ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে শুরু করে। সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ আশা করেছিল, ২০০৭ সালের ওই সামুদ্রিক ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির কথা বিবেচনায় নিয়ে উপকূলীয় এলাকায় টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হবে। কিন্তু বাস্তবতা হল, উপকূলীয় এলাকার সর্বত্র এখনও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মিত হয়নি। ফলে উপকূলীয় এলাকার হতদরিদ্র মানুষ সব সময় আতংকে দিন কাটায়। বেড়িবাঁধ নির্মাণে জমি অধিগ্রহণবিষয়ক কিছু জটিলতা থাকলেও এসব সমস্যার সমাধান করে উপকূলীয় এলাকার সর্বত্র টেকসই বাঁধ নির্মাণে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
শিল্পোন্নত দেশগুলোর অর্থনীতিতে বিদ্যমান নানা অনিশ্চয়তা লক্ষ্য করে অনুমান করা যায়, স্বল্পোন্নত কোনো দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত হলে কাক্সিক্ষত মাত্রায় অনুদান মিলবে না। তাই স্বল্পোন্নত দেশগুলো যাতে স্বউদ্যোগে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে পারে সেজন্য শিল্পোন্নত দেশগুলোকে উদারতার পরিচয় দিতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গত কয়েক বছর ধরে ‘ক্ষতিপূরণ প্রদান’ বিষয়ে বহুমুখী আলোচনা চলছে। শিল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতিনিধিদের আলোচনায় আন্তরিকতা স্পষ্ট হলেও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর প্রকৃত ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা কাটছে না।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে যথাযথভাবে তুলে না ধরলে প্রকৃত ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির বিষয়টি অনিশ্চিতই থেকে যাবে। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হলেও সম্প্রতি ফিলিপাইনে হাইয়ানের তাণ্ডবের দীর্ঘ সময় পরও ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্ট হয়নি। কাজেই আজ থেকে শতবর্ষ আগে আমাদের দেশের উপকূলীয় এলাকার মানুষ সামুদ্রিক ঝড়ে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার প্রকৃত তথ্য হয়তো কখনোই পাওয়া যাবে না। ১৯৭০ সালের সাইক্লোনে পাঁচ লাখ মানুষের প্রাণহানির তথ্যটিকে বিবেচনায় নিলে অনুমান করা যায়, অতীতে এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শক্তিশালী সাইক্লোনের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শতবর্ষ আগে প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমাদের দেশ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে- একবার সেদিকে দৃষ্টি দেয়া যাক। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১৭৬৭ সালে বরিশাল অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সাইক্লোনে ৩০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। ওই সাইক্লোনে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য জানা না গেলেও ৪৩ ফুট জলোচ্ছ্বাসে ফসল ও অন্যান্য ক্ষেত্রে কী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা অনুমান করা যায়। ১৮২২ সালে বরিশাল অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সাইক্লোনে ৫০ হাজার মানুষের এবং এক লাখ পশুর প্রাণহানির খবর পাওয়া গেলেও ওই সাইক্লোনের অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি। ১৮৩১ সালের ৩১ অক্টোবর বরিশাল অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সাইক্লোনে ২২ হাজার মানুষের এবং ৫০ হাজার পশুর প্রাণহানির তথ্য পাওয়া গেলেও ওই সাইক্লোনের ক্ষয়ক্ষতির অন্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ১৮৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর বরিশাল অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সাইক্লোনের পর দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হওয়ার তথ্য থেকে ওই সাইক্লোনের ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহতা সম্পর্কে কিছু অনুমান করা যায়। ১৯৫৮ সালের ২১ থেকে ২৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সাইক্লোনে বিপুলসংখ্যক মানুষের বাস্তুহারার তথ্য ছাড়া অন্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
১৯৭০ সালের ৭ এবং ১৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম, ভোলা ও বরগুনা অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সাইক্লোনে ৫ লাখ মানুষের প্রাণহানি ছাড়াও ১০ লাখের বেশি পশুর প্রাণহানি ঘটেছে। ওই সাইক্লোনে ৪ লাখ বাড়িঘর এবং ৩ হাজার ৫০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
১৯৯১ সালের ২৯-৩০ এপ্রিল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও অন্যান্য অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ে ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষের এবং ৭০ হাজার পশুর প্রাণহানি ঘটেছে। এ সাইক্লোনে প্রায় ৬০ বিলিয়ন টাকার ক্ষতি হয়েছে। ওই সাইক্লোনের মাত্র কিছুদিন পর ১৯৯১ সালের ৩১ মে এবং ২ জুন পটুয়াখালী, বরিশাল, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামে আবারও সাইক্লোন আঘাত হানে। ওই সাইক্লোনের গতি কম ছিল বলে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
অতীতে যেখানে দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে কোনো এলাকার মানুষ সাইক্লোনে ক্ষতিগ্রস্ত হতো, বর্তমানে একই এলাকার ওপর দিয়ে অল্প সময়ের ব্যবধানে সাইক্লোন বয়ে যেতে দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এ অবস্থা আরও তীব্র আকার ধারণ করবে। কাজেই এ বিষয়ে সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। ১৯৯৪ সালের এপ্রিল এবং ১৯৯৫ সালের নভেম্বরে কক্সবাজারের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সামুদ্রিক ঝড়ো হাওয়ায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হলেও কয়েক দিন ধরে বয়ে যাওয়া এসব সামুদ্রিক ঝড়ো হাওয়ায় জনমনে আতংকের সৃষ্টি হয়েছে। এ ধরনের অভিজ্ঞতার পর উপকূলীয় এলাকার মানুষ বিভ্রান্ত হয়। অর্থাৎ এ ধরনের সামুদ্রিক ঝড়ো হাওয়ার তথ্য বিবেচনায় নিয়ে উপকূলীয় এলাকার স্বল্পশিক্ষিত ও অশিক্ষিত মানুষ সাইক্লোনের সতর্ক সংকেত পাওয়ার পর আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে দেরি করে। ফলে সাইক্লোনের আঘাতে অনেক মানুষ হতাহত হয়।
ওয়ারশ সম্মেলনে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাসী আশা করছে, ২০১৫ সালের প্যারিস সম্মেলনে বড় ধরনের প্রাপ্তির খবর মিলবে। প্যারিস সম্মেলনে প্রত্যাশা পূরণের জন্য আগামী বছরের মধ্যেই এ বিষয়ক প্রাথমিক খসড়ার বিষয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। তা না হলে প্যারিস সম্মেলনেও কোপেনহেগেন সম্মেলনের মতো হতাশার সৃষ্টি হতে পারে।
শিল্পোন্নত দেশের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য ও বিবৃতির প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাসী বারবার আশাবাদী হলেও গ্রিন হাউস গ্যাস নিয়ন্ত্রণে শিল্পোন্নত দেশের নেতারা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উন্নত দেশের জনগণও বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশের জনগণের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টিকে এক দৃষ্টিতে দেখলে চলবে না। কারণ শিল্পোন্নত দেশের জনগণ যত সফলভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে পারে, স্বল্পোন্নত দেশের মানুষ তা পারে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর কোনো উন্নত দেশের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড অল্প সময়ের ব্যবধানে শুরু হলেও স্বল্পোন্নত দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের দীর্ঘ সময় পরও স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড শুরু হয় না। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতদরিদ্র মানুষ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে পা বাড়ায়। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণকে বড় কোনো দেশ এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যত দ্রুত পুনর্বাসন করতে পারে, ছোট কোনো দেশে তা সহজে সম্ভব হয় না। এ ধরনের আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর হতদরিদ্র মানুষ দিশাহারা। প্রকৃতির নিয়ম বদলে যাওয়ার কারণে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভোগান্তি বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতিকে বিবেচনার বাইরে রাখলে উল্লিখিত কারণে বিশ্বের ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র খুঁজে পাওয়া যাবে না। উল্লিখিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে
আজ থেকে কোটি বছর আগে মানবসৃষ্ট দূষণ না থাকার পরও নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি হয়েছে। অব্যাহত গবেষণার পর একদিন অতীতের সেসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ স্পষ্ট হবে। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন নিয়ন্ত্রণ না করলে বিশ্ববাসীর ভোগান্তি বাড়তে থাকবে। বিজ্ঞানীদের এসব সতর্কবার্তা প্রকাশের পর গত কয়েক দশকে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও শিল্পোন্নত দেশগুলো গ্রিন হাউস গ্যাস নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক এত বৈঠকের পর ২০১২ সালে বিশ্বে হাজার কোটি টন কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গমনের প্রেক্ষাপটে ওইসব বৈঠকের কার্যকারিতার বিষয়টিই প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
ফিলিপাইনে টাইফুনের তাণ্ডবের পর অল্প সময়ের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রে একই সন্ধ্যায় পর পর ৩০ বা ৪০টি টর্নেডোর আঘাত, এর কয়েক দিন পর ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে ‘হেলেন’-এর আঘাত- এত ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরও কি শিল্পোন্নত দেশগুলো সতর্ক হবে না। এত ক্ষয়ক্ষতির পরও ওয়ারশতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে শিল্পোন্নত দেশগুলো দ্রুত সিদ্ধান্তে না আসার বিষয়টি দুঃখজনক। লিমা ও প্যারিস সম্মেলনে ইতিবাচক প্রাপ্তি ঘটবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে ওয়ারশ সম্মেলনে। লিমা ও প্যারিস সম্মেলন থেকে বড় ধরনের প্রাপ্তির জন্য মূল সম্মেলন শুরুর আগেই বিশ্ববাসীর করণীয় নির্ধারণে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির জন্য সম্মিলিতভাবে বহুমুখী তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে।
পৃথিবীতে মোট জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব লক্ষ্য করা যায়। ধারাবাহিক অপুষ্টির কারণে এসব দরিদ্র মানুষ নানা রকম রোগে আক্রান্ত হয়। যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাতের পর এসব হতদরিদ্র মানুষের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করে। এসব দরিদ্র মানুষের ভোগান্তি দূর করে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিত করতে হলে শিল্পোন্নত দেশগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। শিল্পোন্নত দেশগুলোর জনগণ বিলাসপণ্য ব্যবহারে কৃচ্ছ্রতার পরিচয় দিলে বিশ্বব্যাপী কার্বন-ডাই অক্সাইডের নির্গমন অনেক কমবে।
শিল্পোন্নত দেশগুলো যদি গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন অব্যাহত রাখে, তাহলে বৈশ্বিক উষ্ণতা দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাবে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে মানব সভ্যতা কতটা হুমকির মুখে পড়বে, এ বিষয়টি সাধারণ মানুষের কাছেও এখন স্পষ্ট। ভয়াবহ পরিণতির কথা জেনেও শিল্পোন্নত দেশগুলো কয়লার ব্যবহার কাক্সিক্ষত মাত্রায় কমাতে পারছে না। বিদ্যমান বাস্তবতায় বিজ্ঞানের মৌলিক গবেষণায় সব দেশের বরাদ্দ বাড়াতে হবে। ধারাবাহিক গবেষণার মাধ্যমে বিকল্প জ্বালানি খাতে বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করতে হবে।
সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে গত তিন দশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষয়ক্ষতি তুলে ধরা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়- উল্লিখিত সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে চার ট্রিলিয়ন ডলার। এর দুই-তৃতীয়াংশ হয়েছে তীব্র ঝড়, বন্যা ও খরার কারণে। উল্লিখিত প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে প্রাণহানি, সম্পদ ও অবকাঠামোগত ক্ষতির হিসাব তুলে ধরা হয়। প্রকৃতপক্ষে এক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষকে উদ্বাস্তু জীবনের ভাগ্য বরণ করতে হয়। স্বজনহারা মানুষের ক্ষয়ক্ষতির সাময়িক হিসাব পাওয়া গেলেও তাদের প্রকৃত ক্ষতি কোনোভাবেই নিরূপণ করা সম্ভব নয়।
বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৮০ সালে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বছরে ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার, যা গত কয়েক বছরে চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্লিখিত প্রতিবেদনে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশ্বে বছরে ২০০ বিলিয়ন ডলারের যে ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তার বেশিরভাগ ক্ষতিই হয় স্বল্পোন্নত দেশে। স্বল্পোন্নত দেশের দরিদ্র জনগণকে এই ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে সুরক্ষার জন্য টেকসই আবাস ও অন্যান্য সহায়তা প্রদানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে চিকিৎসা ও ত্রাণ কার্যে যাতে কোনো রকম বিলম্ব না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির কারণে বিজ্ঞানীরা শস্য কিংবা ফলের নতুন জাত আবিষ্কারে সাফল্যের পরিচয় দিতে সক্ষম হলেও নতুন জাতের ফসলের কারণে দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশের ওপর কী প্রভাব পড়ে এটাও গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার বিষয়। শস্য বা ফলের নতুন জাত আবিষ্কারে বিপুল অর্থের প্রয়োজন, যা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষে জোগান দেয়া সম্ভব নয়। এ অবস্থায় শস্য বা ফলের নতুন জাত শিল্পোন্নত দেশের ল্যাবরেটরিতে আবিষ্কার হলে মেধাসত্ত্বের কারণে শিল্পোন্নত ও স্বল্পোন্নত দেশের মধ্যকার বৈষম্য আরও বেড়ে যেতে পারে। এসব সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া ল্যাবরেটরির প্রাপ্ত ফলাফল সামনে রেখে অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস প্রকাশ করাও অনুচিত। কারণ ল্যাবরেটরির সাফল্য আর কৃষক পর্যায়ের সাফল্যের মধ্যে মিল না থাকলে তাকে প্রকৃত সাফল্য বলা যায় না। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত সুফল পাওয়ার জন্য প্রান্তিক কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
শিল্পোন্নত দেশগুলো পৃথিবীর পরিবেশ সুরক্ষায় বিভিন্ন সময়ে অনেক অঙ্গীকার করেছে। তারা তাদের অঙ্গীকার রক্ষায় যত্নবান না হলে পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে, তা ইতিমধ্যে বহুবার স্পষ্ট হয়েছে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ের কথাও উল্লেখ করা যায়। অল্প সময়ের ব্যবধানে এতগুলো সামুদ্রিক ঝড় আর কখনোই দেখা যায়নি। কাজেই বিশ্বকে সুরক্ষার জন্য সবাইকেই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হব। এক্ষেত্রে যেহেতু শিল্পোন্নত দেশগুলোর দায় বেশি, তাই তাদেরই অধিক দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।
২.
গত এক দশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এত আলোচনার পরও গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব সম্প্রদায় কোনো সমঝোতায় আসতে না পারার বিষয়টি দুঃখজনক। সব দেশই কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রাখে। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে পৌঁছানোর পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের বিষয়েও সবাইকে সচেতন হতে হবে। কয়লার মতো সাশ্রয়ী জ্বালানি ব্যবহারের ফলাফল সম্পর্কে সবাই সচেতন থাকার পরও এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। গত দুই দশকে বিভিন্ন জ্বালানির অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির তথ্যগুলোকে বিবেচনায় নিলে এটাই স্পষ্ট হয়, আগামীতেও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। সম্প্রতি জাপানের পারমাণবিক চুল্লিতে সংঘটিত দুর্ঘটনার পর জ্বালানি খাতে বিশ্ববাসীর উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। যে কোনো প্রযুক্তির ব্যবহারে সামান্য ত্র“টি বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। পারমাণবিক চুল্লির ক্ষেত্রে এ বিপর্যয় কী ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে, তা আমরা জাপানে সংঘটিত দুর্ঘটনার পর লক্ষ্য করেছি। বিদ্যমান বাস্তবতায় পরমাণু প্রযুক্তিকে পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত করা না গেলে জ্বালানি খাতের অনিশ্চয়তা সহজে দূর হবে না। কাজটি অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু বিশ্ববাসীর যৌথ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে এ লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। একই সঙ্গে নবায়নযোগ্য অন্যান্য জ্বালানি খাতে ব্যাপক সাফল্য অর্জনের লক্ষ্য নিয়েও যৌথ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। জ্বালানি খাতে বিদ্যমান অনিশ্চয়তার অবসান কবে হবে- এ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারছেন না। এ অবস্থায় শিল্পোন্নত দেশের পাশাপাশি দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে গ্রিন হাউস গ্যাস নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।
বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর উপকূলীয় এলাকায় হতদরিদ্র জনগণের ভোগান্তি কী চরম আকার ধারণ করে, তা ২০০৭ সালে সাইক্লোন সিডরের পর বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার কয়েকটি জেলায় লক্ষ্য করা গেছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বহুমুখী উদ্যোগের ফলে সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জনগণ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে শুরু করে। সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ আশা করেছিল, ২০০৭ সালের ওই সামুদ্রিক ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির কথা বিবেচনায় নিয়ে উপকূলীয় এলাকায় টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হবে। কিন্তু বাস্তবতা হল, উপকূলীয় এলাকার সর্বত্র এখনও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মিত হয়নি। ফলে উপকূলীয় এলাকার হতদরিদ্র মানুষ সব সময় আতংকে দিন কাটায়। বেড়িবাঁধ নির্মাণে জমি অধিগ্রহণবিষয়ক কিছু জটিলতা থাকলেও এসব সমস্যার সমাধান করে উপকূলীয় এলাকার সর্বত্র টেকসই বাঁধ নির্মাণে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
শিল্পোন্নত দেশগুলোর অর্থনীতিতে বিদ্যমান নানা অনিশ্চয়তা লক্ষ্য করে অনুমান করা যায়, স্বল্পোন্নত কোনো দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত হলে কাক্সিক্ষত মাত্রায় অনুদান মিলবে না। তাই স্বল্পোন্নত দেশগুলো যাতে স্বউদ্যোগে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে পারে সেজন্য শিল্পোন্নত দেশগুলোকে উদারতার পরিচয় দিতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গত কয়েক বছর ধরে ‘ক্ষতিপূরণ প্রদান’ বিষয়ে বহুমুখী আলোচনা চলছে। শিল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতিনিধিদের আলোচনায় আন্তরিকতা স্পষ্ট হলেও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর প্রকৃত ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা কাটছে না।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে যথাযথভাবে তুলে না ধরলে প্রকৃত ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির বিষয়টি অনিশ্চিতই থেকে যাবে। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হলেও সম্প্রতি ফিলিপাইনে হাইয়ানের তাণ্ডবের দীর্ঘ সময় পরও ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্ট হয়নি। কাজেই আজ থেকে শতবর্ষ আগে আমাদের দেশের উপকূলীয় এলাকার মানুষ সামুদ্রিক ঝড়ে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার প্রকৃত তথ্য হয়তো কখনোই পাওয়া যাবে না। ১৯৭০ সালের সাইক্লোনে পাঁচ লাখ মানুষের প্রাণহানির তথ্যটিকে বিবেচনায় নিলে অনুমান করা যায়, অতীতে এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শক্তিশালী সাইক্লোনের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শতবর্ষ আগে প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমাদের দেশ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে- একবার সেদিকে দৃষ্টি দেয়া যাক। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১৭৬৭ সালে বরিশাল অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সাইক্লোনে ৩০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। ওই সাইক্লোনে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য জানা না গেলেও ৪৩ ফুট জলোচ্ছ্বাসে ফসল ও অন্যান্য ক্ষেত্রে কী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা অনুমান করা যায়। ১৮২২ সালে বরিশাল অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সাইক্লোনে ৫০ হাজার মানুষের এবং এক লাখ পশুর প্রাণহানির খবর পাওয়া গেলেও ওই সাইক্লোনের অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি। ১৮৩১ সালের ৩১ অক্টোবর বরিশাল অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সাইক্লোনে ২২ হাজার মানুষের এবং ৫০ হাজার পশুর প্রাণহানির তথ্য পাওয়া গেলেও ওই সাইক্লোনের ক্ষয়ক্ষতির অন্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ১৮৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর বরিশাল অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সাইক্লোনের পর দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হওয়ার তথ্য থেকে ওই সাইক্লোনের ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহতা সম্পর্কে কিছু অনুমান করা যায়। ১৯৫৮ সালের ২১ থেকে ২৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সাইক্লোনে বিপুলসংখ্যক মানুষের বাস্তুহারার তথ্য ছাড়া অন্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
১৯৭০ সালের ৭ এবং ১৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম, ভোলা ও বরগুনা অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সাইক্লোনে ৫ লাখ মানুষের প্রাণহানি ছাড়াও ১০ লাখের বেশি পশুর প্রাণহানি ঘটেছে। ওই সাইক্লোনে ৪ লাখ বাড়িঘর এবং ৩ হাজার ৫০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
১৯৯১ সালের ২৯-৩০ এপ্রিল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও অন্যান্য অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ে ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষের এবং ৭০ হাজার পশুর প্রাণহানি ঘটেছে। এ সাইক্লোনে প্রায় ৬০ বিলিয়ন টাকার ক্ষতি হয়েছে। ওই সাইক্লোনের মাত্র কিছুদিন পর ১৯৯১ সালের ৩১ মে এবং ২ জুন পটুয়াখালী, বরিশাল, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামে আবারও সাইক্লোন আঘাত হানে। ওই সাইক্লোনের গতি কম ছিল বলে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
অতীতে যেখানে দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে কোনো এলাকার মানুষ সাইক্লোনে ক্ষতিগ্রস্ত হতো, বর্তমানে একই এলাকার ওপর দিয়ে অল্প সময়ের ব্যবধানে সাইক্লোন বয়ে যেতে দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এ অবস্থা আরও তীব্র আকার ধারণ করবে। কাজেই এ বিষয়ে সবাইকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। ১৯৯৪ সালের এপ্রিল এবং ১৯৯৫ সালের নভেম্বরে কক্সবাজারের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সামুদ্রিক ঝড়ো হাওয়ায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হলেও কয়েক দিন ধরে বয়ে যাওয়া এসব সামুদ্রিক ঝড়ো হাওয়ায় জনমনে আতংকের সৃষ্টি হয়েছে। এ ধরনের অভিজ্ঞতার পর উপকূলীয় এলাকার মানুষ বিভ্রান্ত হয়। অর্থাৎ এ ধরনের সামুদ্রিক ঝড়ো হাওয়ার তথ্য বিবেচনায় নিয়ে উপকূলীয় এলাকার স্বল্পশিক্ষিত ও অশিক্ষিত মানুষ সাইক্লোনের সতর্ক সংকেত পাওয়ার পর আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে দেরি করে। ফলে সাইক্লোনের আঘাতে অনেক মানুষ হতাহত হয়।
ওয়ারশ সম্মেলনে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাসী আশা করছে, ২০১৫ সালের প্যারিস সম্মেলনে বড় ধরনের প্রাপ্তির খবর মিলবে। প্যারিস সম্মেলনে প্রত্যাশা পূরণের জন্য আগামী বছরের মধ্যেই এ বিষয়ক প্রাথমিক খসড়ার বিষয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। তা না হলে প্যারিস সম্মেলনেও কোপেনহেগেন সম্মেলনের মতো হতাশার সৃষ্টি হতে পারে।
শিল্পোন্নত দেশের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য ও বিবৃতির প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাসী বারবার আশাবাদী হলেও গ্রিন হাউস গ্যাস নিয়ন্ত্রণে শিল্পোন্নত দেশের নেতারা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উন্নত দেশের জনগণও বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশের জনগণের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টিকে এক দৃষ্টিতে দেখলে চলবে না। কারণ শিল্পোন্নত দেশের জনগণ যত সফলভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে পারে, স্বল্পোন্নত দেশের মানুষ তা পারে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর কোনো উন্নত দেশের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড অল্প সময়ের ব্যবধানে শুরু হলেও স্বল্পোন্নত দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের দীর্ঘ সময় পরও স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড শুরু হয় না। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতদরিদ্র মানুষ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে পা বাড়ায়। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণকে বড় কোনো দেশ এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যত দ্রুত পুনর্বাসন করতে পারে, ছোট কোনো দেশে তা সহজে সম্ভব হয় না। এ ধরনের আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর হতদরিদ্র মানুষ দিশাহারা। প্রকৃতির নিয়ম বদলে যাওয়ার কারণে এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভোগান্তি বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতিকে বিবেচনার বাইরে রাখলে উল্লিখিত কারণে বিশ্বের ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র খুঁজে পাওয়া যাবে না। উল্লিখিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে
No comments