সন্ত্রাস দমন হোক আইনের সীমার মধ্যে থেকে- যৌথ বাহিনীর অভিযান

গতকাল সোমবার যৌথ বাহিনীর অভিযানে সাতক্ষীরায় পাঁচজন নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। জামায়াত অবশ্য দুজনের মৃত্যুর কথা বলেছে। লক্ষ্মীপুরে নিহত হয়েছে একজন। গত রোববারও লক্ষ্মীপুরে র‌্যাবের গুলিতে আরও একজনের নিহত হওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
অব্যাহত নাশকতা ও সন্ত্রাসী তৎপরতা দমন করে জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনা যেমন দরকার, তেমনি দরকার খেয়াল রাখা যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে যেন নতুন আতঙ্কের সৃষ্টি না হয়।

ছবিঃ ফেসবুক থেকে প্রাপ্ত।
হরতাল-অবরোধের নামে জনপরিবহনে আগুন দিয়ে হত্যা, রেলে নাশকতার হত্যা, প্রতিপক্ষকে বেছে বেছে হত্যার সঙ্গে যোগ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে হত্যা; বিশেষ করে লক্ষ্মীপুরে যেভাবে বাড়ির ভেতর ঢুকে পর পর দুজন বিরোধী নেতাকে হত্যা করা হয়েছে, তাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজের ধরন নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। যাঁরা আন্দোলনের নামে নির্বিচার হত্যা-ধ্বংসের পথ বেছে নিয়েছেন, তাঁদের অবশ্যই দমন করতে হবে। এসব দাবি আদায়ের পথ হলে খুনি-সন্ত্রাসীদেরই আন্দোলনের শিরোপা দিতে হয়। এভাবে কেবল রাজনীতি সম্পর্কেই মানুষের ঘৃণা জাগছে না, তা দেশের স্থিতিশীলতা ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাকেই আঘাত করছে।

রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা, সেসব অঞ্চলের জনজীবনকে দিনের পর দিন অবরুদ্ধ রেখে প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে আগুন ও হত্যা বন্ধে সরকারি বাহিনীর অভিযান তাই খুবই প্রত্যাশিত। কিন্তু অভিযানের নামে অভিযুক্তকে দেখামাত্র গুলি করে হত্যা কোনো আইনানুগ বাহিনীর কাজ হতে পারে না। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে এসব সন্ত্রাসীকে ধরে বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

আইন দ্বারা ক্ষমতায়িত বাহিনীর আচরণ অবশ্যই আইনের সীমা অনুযায়ীই হতে হবে। বিনা বিচারে কাউকে হত্যার রীতি সভ্য সমাজে নেই। হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা যে পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছে, সেই একই পদ্ধতি র‌্যাব-পুলিশ-বিজিবি নিতে পারে না। সন্ত্রাসীদের যে বিচার-বিবেচনা করতে হয় না, সেটা করতে হয় রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে।

পরিস্থিতি উদ্বেগজনক সন্দেহ নেই। জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করা এবং সেই কাজে যারা বাধা দিয়ে আসছে, তাদের মোকাবিলা করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তারা এমন কিছু করতে পারে না যাতে জনগণ আরও বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। আইনি সীমার মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কাজ করতে হবে। নির্বিচারে ধরপাকড়, গ্রেপ্তারের নামে বাণিজ্য, বিনা বিচারে হত্যার চর্চা তাদের এই বিশেষাধিকারের অপপ্রয়োগ বলে গণ্য হবে। তাতে জনমনে অনাস্থা বাড়বে, তার সুযোগ নেবে নাশকতাকারীরা।

আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েছে, র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে তারাও পাশে থাকবে। সরকারি বাহিনীর মতো বলপ্রয়োগের এখতিয়ার কি সরকারে আসীন দলের রয়েছে? পুলিশের কাজ তারা করা মানে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া। আমরা সহিংসতা-নাশকতা বন্ধে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ যেমন চাই, তেমনি কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবে, সেটা প্রত্যাশিত নয়।

No comments

Powered by Blogger.