বাড়ছে মারওয়ান বারগোতির জনপ্রিয়তা

মারওয়ান বারগোতি। ইসরাইলের কারাগারে আটক এই ফিলিস্তিনি নেতার জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে। তার এ জনপ্রিয়তাকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রাম নতুন মাত্রা পাবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
২৭শে অক্টোবর কুখ্যাত সেই রবেন আইল্যান্ড থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শুরু হয়েছে আহমেদ কাথ্রাদা ফাউন্ডেশনের প্রচারণা। তারা মারওয়ান বারগোতি ও ফিলিস্তিনি সব বন্দির মুক্তি দাবিতে প্রচারণা চালাচ্ছে। এই রূপক অর্থ খুব শক্তিশালী। কারণ, ১৯৬৩ সালে এই কাথ্রাদা শুরু করেছিলেন ‘রিলিজ ম্যান্ডেলা’ আন্দোলন। ঠিকই রবেন আইল্যান্ড থেকে মুক্ত হয়ে এসেছেন নেলসন ম্যান্ডেলা। তারপর প্রায় অর্ধ শতাব্দী কেটে গেছে। ৮৪ বছর বয়সী এই কাথ্রাদা এবার আরেক মুক্তি সংগ্রামীর মুক্তি দাবিতে প্রচারণা শুরু করেছেন। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ৫ ব্যক্তির সঙ্গে কয়েক শত বিশেষ অতিথির সঙ্গে রবেন আইল্যান্ড সফরে গিয়েছিলেন বারগোতির স্ত্রী ফাদওয়া। তাদের সঙ্গে ছিলেন ফিলিস্তিনি বন্দিবিষয়ক মন্ত্রীও। বারগোতি হলেন ইসরাইলের হাতে আটক প্রথম প্যালেস্টাইনিয়ান লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য। ইসরাইলের জেলে ৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি বন্দি রয়েছেন। তাদের মধ্যে এই বারগোতি হলেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তার মুক্তি দাবি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন। এ বিষয়ে অনলাইন আল জাজিরায় একটি মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছেন শ্যানোন ইব্রাহিম। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকাবিষয়ক কলামনিস্ট, ফ্রিল্যান্সার ও রাজনৈতিক পরামর্শক। এতে তিনি লিখেছেন, ২০০১ সালে গাজা উপত্যকায় একটি রেস্তরাঁর স্মৃতিতে ফিরে যাওয়া যাক। তখন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের কয়েকজন পার্লামেন্ট সদস্য ও আমি ওই রেস্তরাঁয় বসে মারওয়ান বারগোতির বিষয়ে আলোচনা করছিলাম। আমরা জানতাম তিনি ছিলেন ইসরাইলের হিট লিস্টে। কিন্তু নয় মাসের মধ্যে তাকে ইসরাইলি বাহিনী অপহরণ করবে, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে, ১০০ দিন ধরে নির্যাতন করবে, ১০০০ দিন আটকে রাখবে তারপর ১১ বছরের বেশি সময় কেটে যাবে এ বিষয়টি আমাদের কাছে জানা ছিল না। সেই মারওয়ান বারগোতি এখন ‘ফিলিস্তিনের ম্যান্ডেলা’ হয়ে উঠছেন। এ বছরের মে মাসে আল মনিটর পত্রিকাকে একটি সাক্ষাৎকার দেন মারওয়ান বারগোতি। এতে তিনি বর্ণনা করেন, কিভাবে তাকে একটি ছোট্ট কক্ষে ইসরাইলিরা আটক করে রেখেছে। তিন বছরের বেশি সময় তাকে ওই কক্ষে আটকে রেখে তাতে তেলাপোকা, ইঁদুর ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। তার কক্ষটিতে ছিল না কোন জানালা। কোন আলো-বাতাস প্রবেশের পথ ছিল না। শুধু সিলিং থেকে খসে পড়েছে পলেস্তরা। হাতকড়া পরা অবস্থায় তাকে দিনে মাত্র এক ঘণ্টা শরীর চর্চা করতে অনুমতি দেয়া হয়। মারওয়ান বারগোতির সঙ্গে আমাদের যখন সাক্ষাৎ হয়েছিল তখন তিনি ছিলেন ফাতাহ’র জেনারেল সেক্রেটারি। ফাতাহ’র সশস্ত্র শাখা তানজিমের নেতা। তার ছিল বিদ্যুতের মতো বৈপ্লবিক চেতনা। তিনি জানতেন আজ হোক কাল হোক তাকে আটক করবে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। ২০০১ সালে তাকে হত্যা করতে অনেকগুলো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তার মধ্যে একটি অভিযানে অল্পের জন্য তিনি রক্ষা পান। নিহত হন তার এক দেহরক্ষী। ২০০২ সালের এপ্রিলে একটি এম্বুলেন্সের পিছনে লুকিয়ে ছিলেন। তারপর তারা তার বাড়ি ঘেরাও করে ফেলে। আটক করে মারওয়ান বারগোতিকে। তানজিমের হয়ে কাজ করার অভিযোগে তাকে অভিযুক্ত করা হয়। দেয়া হয় ৫ বছরের জেল। কিন্তু তার রয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী স্বাধীন চেতনা এবং ব্যক্তিত্ব। ফলে জেলের ভিতরেই তার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ফিলিস্তিনের হামাস ও ফাতাহ- দু’ পক্ষের নেতাদের পাশ কাটিয়ে তিনি জনপ্রিয়তায় এগিয়ে যান। তাকে ফিলিস্তিনিরা অনন্য এক নেতা হিসেবে বিবেচনা করেন, যিনি তার দেশবাসীকে স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দিতে পারেন। ১৯৬৭ সালে দ্বি-রাষ্ট্র তত্ত্বের অধীনে তিনি ফাতাহ ও হামাসকে এক করে একটি শক্তিশালী স্বাধীনতা আন্দোলন গড়ে তোলেন। এতে ইসরাইলের কাছে তিনি ভয়ঙ্কর এক হুমকি হয়ে উঠেন। মারওয়ান বারগোতির ক্ষমতা এত বেশি ছিল যে, তার পিছনে র‌্যালি করতে বাধ্য হয় হামাস। সমপ্রতি ইসরাইলের সঙ্গে ফিলিস্তিন বন্দি বিনিময় করে। এ সময় ফিলিস্তিন যেসব বন্দিকে ফেরত চায় তার শীর্ষে ছিল মারওয়ান বারগোতির নাম। কিন্তু ইসরাইলের পক্ষে বারগোতির মুক্তির বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়। বারগোতি ফাতাহ ও হামাসকে এক করে তোলায় একীভূত শক্তি ছিল ইসরাইলের জন্য বড় একটি কৌশলগত হুমকি। এতে ইসরাইল অধিক হারে বসতি স্থাপনের জন্য ভূমি দখলের ক্ষেত্রে হোঁচট খায়। এ অবস্থা চলতে থাকে অনেকটা সময়।

No comments

Powered by Blogger.