প্রার্থীদের সম্পদের তথ্য

নির্বাচন কমিশনে গিয়ে রোববার আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল তাদের যে অবস্থান প্রকাশ করেছে, তা চরম অনৈতিক। আওয়ামী লীগ চায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীরা হলফনামায় নিজেদের সম্পদের যে হিসাব দেন, তা যেন প্রকাশ করা না হয়। এ ধরনের আবদারের পেছনে যে যুক্তি থাকতে পারে তা হচ্ছে, ক্ষমতায় থেকে দলের অনেকের সম্পদ যে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, তা যেন জনগণ জানতে না পারে। অস্বাভাবিক সম্পদ বাড়ার একটাই পথ, সেটা হচ্ছে দুর্নীতি। আওয়ামী লীগের চাওয়া হচ্ছে, দলের কেউ দুর্নীতি করলেও তা যেন জনগণ জানতে না পারে! নির্বাচন করে জনগণের সমর্থন বা ভোট পেয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়—এমন কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এ ধরনের চাওয়া বিস্ময়কর। গণতন্ত্রের মূল বিষয় হচ্ছে, জনগণকে তার প্রতিনিধি বাছাইয়ের সুযোগ করে দেওয়া এবং জনগণের জানতে হবে যে তারা কোন প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছে, তার অতীত রেকর্ড কী। ক্ষমতায় থেকে কেউ সম্পদের পাহাড় গড়বেন আর সেই তথ্য লুকিয়ে আবার ভোটের জন্য জনগণের সামনে হাজির হবেন—এটা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন—এমন অনেকের সম্পদের হিসাব গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁদের অনেকেই গত নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন, সে সময়ের সম্পদের হিসাবও তখন তাঁরা দিয়েছিলেন। কিছু প্রার্থীর সম্পদের বৃদ্ধির মাত্রাকে কোনো হিসাব-নিকাশের মধ্যেই ফেলা সম্ভব নয়।
পাঁচ বছর আগের তুলনায় বর্তমানে সম্পদ ৩৫১ গুণ বেড়েছে—এমন প্রার্থীও রয়েছেন এবারের নির্বাচনে। এসব তথ্য লুকাতে চাওয়ার অর্থই হচ্ছে দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের পক্ষে নির্লজ্জ অবস্থান নেওয়া। আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহার এখনো প্রকাশিত হয়নি। তবে গত নির্বাচনের সময় দলটি নির্বাচনী অঙ্গীকারে পাঁচটি অগ্রাধিকারের বিষয় ঘোষণা করেছিল, যার দ্বিতীয়টি ছিল ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা’। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে দুর্নীতির পক্ষেই কার্যকর অবস্থান নিয়েছে দলটি। নির্বাচনে যাঁরা অংশ নেবেন, তাঁদের আটটি ব্যক্তিগত তথ্য হলফনামা আকারে নির্বাচন কমিশনে জমার বিধানটি কার্যকর হয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে। আদালতের পক্ষ থেকে প্রার্থীদের সম্পর্কে এ তথ্যগুলো জানার বিষয়টিকে জনগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের তথ্য গোপন করার পক্ষে অবস্থান নিয়ে কার্যত জনগণের মৌলিক অধিকারকেই ক্ষুণ্ন করতে চাইছে। দলটির এ ধরনের অবস্থান নিন্দনীয়। গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে, জনগণকে প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগ দিতে হলে প্রার্থীদের সম্পর্কে তথ্য প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। স্বচ্ছতা ও জনগণের প্রতি রাজনীতিবিদদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হলে এ ধরনের বিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

No comments

Powered by Blogger.