জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির পর ১০ জেলায় ব্যাপক সহিংসতা, নিহত ২

জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার পর ১০ জেলায় ব্যাপক সহিংসতা সৃষ্টি হয়েছে। সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দুই কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মহাসড়কে গাছ ফেলে ও গর্ত খুড়ে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
ব্রীজের পাটাতন উপড়ে ফেলা হয়েছে। এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, নির্বাচন অফিস ও সরকারি দলের কর্মীদের বাড়ি ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। ফাঁসি কার্যকরের খবর শোনার পর থেকেই শুরু হয়েছে এসব সহিংসতা। সাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, চাপাইনবাবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, লক্ষীপুর, বগুড়া, মৌলভীবাজার এলাকায় রাত থেকে আজ সকাল অবধি এসব সহিংসতা হয়েছে। এদিকে কাদের মোল্লার স্মরণে সারা দেশে গায়েবানা জানাজা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াত। আজ সকালে নাটোরসহ বিভিন্ন স্থানে জানাজাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। দুপুরেও বিভিন্ন স্থানে গায়েবানা জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি জানান, জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করার পর সাতক্ষীরায় ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গেও সংঘর্ষ হয়েছে জামায়াত শিবিরের। গতরাত সাড়ে ১২ টার দিকে সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুর রহমান আজুকে (৫১) কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত পরিবারের দাবি আজ রাতে পনের বিশ জনের জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র কর্মীরা তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করে। প্রথমে তারা বাড়ীতে ঢুকে ব্যাপক ভাংচুর করে। পরে আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুর রহমানকে কুপিয়ে হত্যা করে ফেলে রেখে চলে যায়। এ ঘটনার দুই ঘন্টা পর রাত আড়াই টার দিকে দুবৃত্তরা একই উপজেলার জয়নগর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান জজ মিয়া (৩৫) এর বাড়ীতে হামলা চালিয়ে তাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে। তারা প্রথমে বাড়ীতে ঢুকে তাদের বসত ঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে যুবলীগ নেতা জজ মিয়াকে বাহিরে রাস্তায় বের করে কুপিয়ে হত্যা করে। ঘটনার ঘন্টা খানেক পর বাড়ীর পার্শ্ববর্তী ক্ষেত্রপাড়া এলাকার রাস্তার উপর থেকে নিহতের স্বজনরা তার লাশ উদ্ধার করে। নিহতের সহদর আব্দুর রহমান জানান, শিবির ক্যাডাররা তার ভাই কে কুপিয়ে এবং শ্বাস নালি কেঁটে দিয়ে হত্যা করেছে। এদিকে রায় কার্যকর হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাতক্ষীরার আগরদাঁড়ী, ঝাউডাঙ্গা, শ্যামনগরের সদর, কাশিমাড়ী, আটুলিয়া এবং কালিগঞ্জের মৌতলায় রাতেই কয়েটি ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটায় দূর্বৃত্তরা। কালিগঞ্জের কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি আব্দুল মাজেদ এর বাড়ীতে রাত ১১ টার দিকে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নি-সংযোগ করে। এসময় তার মটর সাইকেলটি পুড়িয়ে দেয়। আশাশুনির বুধহাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান এবং আ’লীগ সমর্থীত চন্দন দেবনাথ, তরুন কুমার ও সোনা মন্ডলের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে। এ ছাড়াও জেলার অধিকাংশ স্থানে গাছ, টল দোকান রাস্তায় ফেলে এবং সড়ক কেটে অবরোধ করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ফাসির রায় কার্যকরের আগে থেকেই সিরাজগঞ্জে সহিংসতা শুরু হয়। রাত ৯টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা ব্যাপক বিক্ষোভ ও ভাংচুর করে। জামায়াত কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানের প্রভাবাধীন এলাকা উল্লাপাড়ায় আওয়ামী লীগ অফিস ও যানবাহন এবং সিরাজগঞ্জ সদরের চন্ডিদাসাগাতিতে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ৭টি বসতবাড়ি ও বেলকুচিতে সিনেমা হলসহ বেশ কয়েকটি বসতবাড়ি এ সময় পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়, পাবনা-নগরবাড়ি ও সিরাজগঞ্জ-বগুড়া মহাসড়ক এবং সিরাজগঞ্জ-রায়গঞ্জ ও সিরাজগঞ্জ-নলকা আঞ্চলিক সড়কে গাছ কেটে সড়ক অবরোধ করা হয়েছে।  সিরাজগঞ্জ-নলকা আঞ্চলিক সড়কের চন্ডিদাসগাতি ও নলকা এলাকায় ২টি ব্রীজের পাটাতন তুলে ফেলা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উল্লাপাড়ায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। উল্লাপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুল জলিল জানান, রাত ৯টার পর থেকে হাজারো নেতাকর্মী লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে পাবনা-নগরবাড়ি মহাসড়কের শাহজাদপুরের বালসাবাড়ি থেকে উল্লাপাড়ার শ্রীখোলা মোড় পর্যন্ত কয়েকটি স্থানে গাছ কেটে মহাসড়ক অবরোধ করে। উপজেলা সদরে গভীর রাত পর্যন্ত ঘটানো হয় মূহুমূহু ককটেল বোমার বিস্ফোরণ। রাত ১১টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয় তারা। সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা সদরের পাট বন্ধরের একটি পাটের গুদাম ও শ্রীখোলা মোড়ে একটি তেলের মিলে আগুণ ধরিয়ে দেয়া হয়। তারা থানা ঘেরাও করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এতে আকবর আলী কলেজ মোড় এলাকায় জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিপুল সংখ্যক টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করা হয়। শিয়ালকোল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও চন্ডিদাসগাতি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল ওয়াহাব জানান, গভীর রাতে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে তার বসতবাড়িতে ব্যাপক ভাংচুর ও ধান, চাল, পাট, স্বর্নাংলকার ও আসবাবপত্র লুটপাট করা করেছে এবং ৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর আলমসহ তার ৬ ভাইয়ের বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক বিল্লাল হোসেন উল্লাপাড়ায় বিজিবি মোতায়েনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নাটোর প্রতিনিধি জানান, রাতে নাটোরের সড়ক মহাসড়কে গাছ কেটে ও গুড়ি ফেলে অবরোধ মিছিল সমাবেশের ফলে নাটোরে অঘোষিত অবরোধ চলছে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত মহাসড়কে অটোরিক্সা ও দুএকটি মালবাহী ট্রাক ছাড়া কোন যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। এদিকে ফাঁসির প্রতিবাদে শহরের বাইপাস সহ বিভিন্ন স্থানে মিছিল সমাবেশ করেছে দলটির নেতাকর্মীরা। বড়াইগ্রামের আহম্মেদপুরে মিছিল শেষে সমাবেশ চলাকালে পুলিশের লাঠিচার্জে আতিকুল্লাহ নামের এক কর্মীসহ জামায়াত শিবিরের ৩ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। আহতদের বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে শুক্রবার সকালে শহরের বাইপাস এলাকা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী নিয়ে একটি মিছিল বের করে জামায়াত শিবির। পরে তারা শহরের মাদরাসা মোড় ঘুরে একই স্থানে এসে গায়েবানা জানাযায় অংশ নেয়। জানাযার পরে মোনাজাতে নেতাকর্মীদের কান্নায় এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর মহাসড়কের বড় খোচাবাড়ী থেকে ২৯ মাইল নামক স্থান পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সড়ক জুড়ে গাছ কেটে অবরোধ করে রেখেছে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা। কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের পর গভীর রাত থেকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত গাছ কেটে সড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে এ সড়কে সকল প্রকার যানচলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে পন্যবাহী কয়েকশ ট্রাক আটকা পড়ে।
স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, রাজশাহীতে সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক চৌধুরী এমপির বাড়িতে দ্বিতীয় বারের মতো হামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবং স্থানীয় ওয়ার্ড আ’লীগ নেতার বাড়ি লক্ষ্য করে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এছাড়া রাত ১১টার পর থেকে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে থেমে থেমে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এদিকে নাশকতা ঠেকাতে সন্ধ্যার পরপরই নগরীর রাস্তায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের নামানো হয়।
চাপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে জেলা শহরের বড়ইন্দারা মোড়ে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, যুমুনা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক কার্যালয় ভাংচুর করা হয়। রহনপুরে একটি বিআরটিসি বাসে অগ্নিসংযোগও করা হয়। একই সময় আরামবাগ এলাকায় একটি মিছিল বের করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। এসময় তারা বড়ইন্দারা মোড়, নিমতলা মোড়, বাতেন খাঁর মোড়, আরামবাগ ও শিবতলা এলাকায় মুহুর্ম ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীও পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। এছাড়া পৌর এলাকার টিকরামপুর মোড়ে ৭/৮টি দোকানে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে দিয়েছে দূর্বত্তরা। এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়কের বেশ কয়েকটি জায়াগায় রাস্তা কেটে, পোল ও গাছের গুড়ি ফেলে ব্যারিকেড দেয় জামায়াত-শিবির কর্মীরা। বর্তমানের হরতাল বা অবরোধ না থাকলেও ব্যারিকেডের কারনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ সময় তারা কানসাট বাজার এলাকায় ২টি দোকানে আগুন ও ২/৩টি ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও ভাংচুর করা হয়। এছাড়া শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তহুর আলীর বাড়ীসহ ১০/১২টি বাড়ীতে অগ্নিসংযোগ ও এলাকর প্রায় ২০/২৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া থেকে জানান, বগুড়ার সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। এদিকে মহাসড়ক অবরোধের ফলে উত্তরাঞ্চলে এখনো জাতীয় দৈনিক পত্রিকা গুলো পৌছেনি। বগুড়ার মহাস্তান এলাকার মাঝিপাড়ায় মহাসড়ক খুড়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এছাড়াও মাঝিপাড়া থেকে বগুড়া জেলার উত্তরের শেষ সীমানা চন্ডিহারা পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশের গাছ কেটে এবং গাছের গুড়ি ফেলে রাস্তা অবরোধ করেছে। বগুড়া শহরতলীর ফটকি ব্রিজ থেকে মহাসড়কে শেরপুরের মহিপুর পর্যন্ত মাঝে মাঝে গাছের গুড়ি ও গাছ কেটে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। বগুড়া থেকে সারিয়াকান্দি উপজেলায় ও বগুড়া থেকে নওগাঁ সড়কেও একই উপায়ে গাছের গুড়ি দিয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। অন্যদিকে কাহালু উপজেলার পাঁচপীর এলাকায় রেললাইনের নীচের মাটি তুলে ফেলেছে অবরোধকারীরা। বগুড়ার সহকারী পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান (সদর ও মিডিয়া) জানান, মহাসড়কের উপর এখনো গাছের গুড়ি ও কাটা গাছ রয়েছে। দুর্বৃত্তরা অসংখ্য গাছ কেটে রাস্তা অবরোধ করেছে। পুলিশ একই সাথে আইন-শৃঙ্খলা ও গাছের গুড়ি অপসারণের কাজ করছে। আজ সকালে বগুড়া শহরের তেলিপুকুর এলাকায় আকিজ গ্রুপের গুদাম এবং শহরের চারমাথা এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্তাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়ে আজ শুক্রবার দুপুর ১২টায় আগুন দিয়েছে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা।
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, লক্ষ্মীপুরে বিভিন্ন স্থানে জামায়াত শিবিরের হামলা ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। তারা বিভিন্ন স্থানে রাস্তা কেটে ও রাস্তায় গাছ ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করেছে। এতে জেলা শহরের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করার পর থেকে লক্ষ্মীপুর শহরের উত্তর তেমুহনী, দক্ষিণ তেমুহনী, জকসিন, মান্দারী, চন্দ্রগঞ্জ বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে এ অবস্থার সৃষ্টি করে তারা। লক্ষ্মীপুর-ঢাকা মহাসড়কের রবিদাসের পোল, ইটের পোল, ঢাকা-রামগঞ্জ সড়কের আলীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক কেটে ফেলায় জেলা শহরের সাথে  সারাদেশের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়া রায়পুর উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে দূর্বৃত্তরা। অপরদিকে কমলগর উপজেলা পরিষদে হামলা ভাংচুর করার খবর পাওয়া গেছে।
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, মৌলভীবাজারে দুবৃত্তরা পেট্রোল বোমা ছুড়ে রাজনগর উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ও মনসুরনগর ইউপি চেয়ারম্যান মিলন বখত এর বাসার সামনে গেরেজে রাখা তার গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। এই সময় মিলন বাসায় ছিলেন। ঘটনা ঘটেছে গত রাত সাড়ে ১২ টার সময়। বাসাটি শহরের পোষ্ট অফিস সড়কস্থ পুলিশ ফাঁড়ির ঠিক সামনে অবস্থিত। দারোয়ান জানিয়েছে রাত সাড়ে ১২ টার সময় দু’জন মোটরসাইকেল আরোহী গেইটের সামনে এসে থামে। একজন হেলমেট পড়া যুবক সাইকেল থেকে নেমে বাসার সামনে গেরেজে রাখা গাড়ি লক্ষ্য করে পরপর তিনটি পেট্রোল বোমা ছোড়ে। এতে বিকট আওয়াজে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় পুরো এলাকা। পরে হামলাকারিরা পালিয়ে যায়। গাড়িতে আগুন ধরে এবং পুঁড়ে যায়। বাড়ীর বিভিন্ন স্থানেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তবে বাড়িতে তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর থেকে জানান, চিরিরবন্দর উপজেলার পুরাতন ভূষিবন্দরে মোটর পরিবহন মালিক গ্রুপের জেলা সভাপতি ভবনী শংকর আগরওয়ালার ৬টি বাসে অগ্নিসংযোগ ও দিনাজপুর- ৬ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি আজিজুর রহমান চৌধূরীর নবাবগঞ্জ উপজেলার ভাদুরিয়া বাজারস্থ বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। ফিলিং ষ্টেশনে রাখা ৬টি ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করেছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। খানসামা উপজেলার নির্বাচন অফিসে জামায়াত-শিবির দু’দফা হামলা চালায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হয় কমপক্ষে ৮জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৯ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে পুলিশ। দিনাজপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, চিরিরবন্দর উপজেলার বিন্যাকুড়ি হাটে ১২টি দোকান, খানসামা উপজেলার পাকের হাটে ২ আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি ও মার্কেটসহ শহরের বেশ কিছু স্থানে দোকানপাট ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া দিনাজপুরের খানসামা ও চিরিরবন্দর উপজেলার ৩টি স্থানে পাকা সড়ক কেটে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। চিরিরবন্দর কারেন্টের হাট বেইলী ব্রীজের ৩টি পাটাতন খুলে ফেলায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। খানসামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃষ্ণ কুমার সরকার ও চিরিরবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সর্বত্র ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.