ফের আসছে টানা অবরোধ

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ফের অবরোধ কর্মসূচি আসছে ১৮ দলের তরফে। আগামী ১৭ই ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে পারে চতুর্থ দফার টানা অবরোধ। ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস পর্যন্ত চলমান আন্দোলনে বিরতি দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তও নিয়েছে বিরোধী জোট।
এ সময় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালন করবে বিএনপিসহ ১৮ দল। গতকাল ১৮ দলের সিনিয়র নেতারা এমন তথ্য জানিয়েছেন। তারা জানান, চলমান আন্দোলনকে জোরালো করতে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। বিএনপির চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা জানান, সংলাপের ব্যাপারে জাতিসংঘের উদ্যোগটি বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টি অনুধাবন করে সংলাপ সফল করতে সর্বোচ্চ ইতিবাচক মানসিকতা দেখিয়েছে বিএনপি। কিন্তু সরকারের একগুঁয়েমির জন্য ফলাফল নিয়ে চরম সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি দলের অনড় অবস্থান সব কিছু তছনছ করে দিচ্ছে। এখন রাজপথের আন্দোলন করে নির্বাচন ঠেকানো ছাড়া বিরোধী দলের কোন বিকল্প নেই। বিরোধী জোটের শরিক দলের এক সিনিয়র নেতা বলেন, চলমান আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানা নৈরাজ্য ও হঠকারী ঘটনা ঘটিয়েছে সরকার। বিরোধী নেতৃত্বের ওপর তার দায় চাপিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইলেও সারা দেশের মানুষের কাছে সেটা গ্রহণযোগ্য হয়নি। আন্দোলনে প্রতিদিন সাধারণ মানুষের যে বিপুল অংশগ্রহণ বাড়ছে তাতে শেষ পর্যন্ত সরকারকে নতি স্বীকার করতে হবে।
গতকাল এক বিবৃতিতে বিরোধী নেতা খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, সরকার কথা বলছে অস্ত্রের ভাষায়। রাষ্ট্রীয় ও পেশিশক্তির মাধ্যমে ভিন্নমত দমিয়ে দিতে ও প্রাধান্য বিস্তার করতে চায়। তিনি দেশবাসীকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। এর আগে সোমবার এক বিবৃতিতে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে দমন করার জন্য নজিরবিহীন নির্যাতন ও চক্রান্তের পথ বেছে নিয়েছে সরকার। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে আন্দোলনরত জনগণের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে মানুষ হত্যা করছে। সারা দেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীকে সাদা পোশাকধারী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা তুলে নিয়ে গেছে, যারা আর ফিরে আসেনি। নেতারা বলেন, আন্দোলন কর্মসূচিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দমন-পীড়ন, সরকারি দলের নেতাকর্মীদের হামলা, নেতাকর্মীদের গুম-নিখোঁজ ও গ্রেপ্তার আতঙ্ক কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে প্রভাব ফেলতে পারেনি। উল্টো দমন-পীড়নের কারণে আন্দোলনে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ছে। ওদিকে মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, চলমান রাজনৈতিক সংকটের ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত ১৮ দলের আন্দোলন চলবে। বর্তমানে গণতান্ত্রিক দুর্বার আন্দোলন শহর-বন্দর-নগর পেরিয়ে গ্রাম-গ্রামান্তরের প্রতিটি জনপদে বিস্তৃতি লাভ করেছে। সময়ের পরিক্রমায় প্রয়োজনের নিরিখে তৃণমূল থেকে যেভাবে আন্দোলনের নেতৃত্বেও বিকাশ ঘটছে তাতে কেন্দ্রীয় নেতাসহ উচ্চ পর্যায়ের সকল নেতাকে গ্রেপ্তার করা হলেও আন্দোলনের এই দাবানল প্রশমিত করার শক্তি বর্তমান স্বৈরশাসকের নেই। নেতারা জানান, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিরোধী দলের আন্দোলনে দেশের বেশির ভাগ মানুষের সমর্থন রয়েছে। বিষয়টি বুঝতে পেরেই সরকার নিজেদের একতরফা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার কখনও চায়নি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দল নির্বাচনে অংশ নিক। তারা নানা বক্তব্যে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করলেও নির্বাচন ইস্যুতে ন্যূনতম ইতিবাচক মানসিকতা দেখায়নি। নেতারা বলেন, বিরোধী নেতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ফোনালাপের বিষয়টি ছিল একটি রাজনৈতিক নাটক। সেদিন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্য দিয়েই বিরোধী নেতারা সংলাপের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা পেয়েছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.