নৌকা-লাঙ্গলের সরকার সর্বদলীয় নয় by কাজী সুমন

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী যে সরকার গঠিত হয়েছে তা সর্বদলীয় নয়। এটি মূলত নৌকা আর লাঙ্গলের সরকার।
দৃশ্যত ৪টি দলের সরকারের কথা বলা হলেও সংসদীয় ব্যবস্থার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকই হচ্ছে দলের পরিচয়। নবম জাতীয় সংসদে নৌকা আর লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচিতরাই সর্বশেষ পুনর্গঠিত মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এটাকে সর্বদলীয় সরকার বলা যায় না, বলা উচিতও নয়। মানবজমিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। আ স ম আবদুর রব বলেন, সরকার চরম সিদ্ধান্তহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। নিজেরাই নিজেদের জটিলতায় আটকে পড়ছে। মন্ত্রীদের পদত্যাগ নিয়ে অহেতুক সংকটগ্রস্ত হয়েছে- সংবিধান লঙ্ঘনের দায় নিতে হয়েছে। তেমনি সর্বদলীয় সরকারের নামে পুনর্গঠিত মন্ত্রিসভা সঙ্কট নিরসনে কোন অবদান রাখতে পারবে না বরং নতুন নতুন জটিলতার উদ্ভব হবে। ১৫তম সংশোধনীতে যেমন জনগণের অভিপ্রায়কে লালন করার পরিবর্তে উপেক্ষা করা হয়েছে তেমনি নির্দলীয় সরকারের গণদাবিকে পাশ কাটিয়ে সর্বদলীয় সরকারের ‘চমক’ হাজির করা হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনই গণতন্ত্র নয়। গণতন্ত্রের একটি আবশ্যক শর্ত হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্ব নির্বাচন করা। এ সরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে পারবে- এটা দেশের জনগণ বিশ্বাস করে না। নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে সৃষ্ট সঙ্কটের সমাধান সম্পর্কে আ স ম রব বলেন, আমার দু’টি প্রস্তাব রয়েছে। এক নম্বর হলো- বিদ্যমান সংসদ অব্যাহত থাকলে ১১ সদস্য বিশিষ্ট সংসদের ‘উচ্চকক্ষ’ গঠন করে সে ‘উচ্চকক্ষে’র নিকট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব অর্পণ করতে হবে। দুই নম্বর হলো- বিদ্যমান সংসদ অব্যাহত না থাকলে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেয়া হলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া। সংবিধানের ১৩তম সংশোধনী বাতিল করে বলা হয়েছিল যা কিছু সাধারণভাবে বিশেষ প্রয়োজনে যেটা আইনসম্মত হিসেবে মেনে নেয়া হয় এবং মানুষের নিরাপত্তা হচ্ছে সর্বোচ্চ আইন এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তাও সর্বোচ্চ আইন। দেশের ১০তম ও ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধানের উপরিউক্ত ১৩তম সংশোধনীর ভিত্তিতে হতে পারে। সুতরাং, মানুষের ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তার প্রয়োজনে আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক সঙ্কট নিরসনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিরোধী নেতা খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ সম্পর্কে আ স ম রব বলেন- আইনানুযায়ী প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রের প্রধান। তিনি রাষ্ট্রপ্রধানরূপে অন্য সকল ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থানলাভ করেন কিন্তু প্রজাতন্ত্রের সকল নির্বাচনী ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী দ্বারা প্রযুক্ত হয়। বিদ্যমান সঙ্কটে প্রেসিডেন্টের ভূমিকা কি হতে পারে তার জন্য আমাদের কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। সর্বদলীয় সরকারে এইচ এম এরশাদের নাটকীয়ভাবে অংশ নেয়াকে জনগণ গ্রহণ করেনি তিনি বলেন, রাজনীতি বা রাষ্ট্র কোন নাটকের বিষয় নয়। জনগণ ও রাষ্ট্রকে কেউ প্রতারিতও করতে পারে না। এরশাদ সাহেবের নাটকীয়তাকে জনগণ ভালভাবে গ্রহণ করেনি। আমরা চেয়েছিলাম দুই বড় দল বা জোটের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভিত্তিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি উত্থানের প্রয়োজনে একটি জোট গঠন করা। যে জোটের লক্ষ্য হবে সংঘাত-সংঘর্ষ এবং অপরাজনীতির অবসান, মানুষ হত্যার রাজনীতি বন্ধ করা, স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণে গণতান্ত্রিক ও গণমুখী বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করা- যা উপনিবেশিক শাসনের পরিবর্তে স্বাধীন দেশের উপযোগী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করবে। এসব লক্ষ্যকে সামনে রেখে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার সামাজিক অনিবার্যতাকে কেউ উপেক্ষা করতে পারবে না। দলগতভাবে জাতীয় সামাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সঙ্গে এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টির অবস্থান এক নয় আদর্শগতভাবে বা কৌশলগতভাবে।

জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিকল্পধারা ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ সমমনা দলগুলোকে নিয়ে রাজনৈতিক জোট গঠন সম্পর্কে আসম রব বলেন, দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ধারা-বিএনপি ধারা-ইসলামী ধারা প্রচলিত আছে। আমরা চাই মুক্তিযুদ্ধের ধারা। যে চেতনার ভিত্তিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার যে নির্দেশনা দিয়েছে তাকে বাস্তবায়িত করা হবে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির কাজ। আদর্শিক রাজনীতি গড়ে তোলাই হবে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার প্রক্রিয়া। সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি অব্যাহতভাবে। তবে একতরফা নির্বাচনে জেএসডি অংশ নেবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন আ স ম রব। তিনি বলেছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান জাতীয় প্রয়োজনেই জরুরি। জনগণের নিকট গ্রহণযোগ্য না হলে আন্তর্জাতিক বিশ্বেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না। তাহলে নির্বাচন হবে দীর্ঘস্থায়ী সংকটের উৎস। যে দীর্ঘস্থায়ী সঙ্কট দেশকে চূড়ান্ত সহিংসতার দিকে ঠেলে দেবে। যা হবে আমাদের জন্য আত্মঘাতী। সুতরাং, এ ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা হচ্ছে জাতীয় সঙ্কটকে উস্কে দেয়ার সহযোগিতা করা। সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করাই হচ্ছে রাষ্ট্রর পবিত্রতম কর্তব্য।

No comments

Powered by Blogger.