সর্বদলীয় নির্বাচনই জরুরি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবম জাতীয় সংসদের সমাপনী ভাষণে নির্বাচনী সরকার চালাতে রাষ্ট্রপতির অনুমতি পেয়েছেন বলে দেশবাসীর সামনে যে তথ্য হাজির করলেন, তা তাদের মোটেই আশ্বস্ত করবে না। নির্বাচনী সরকার বা অন্তর্বর্তী সরকারের মূল উদ্দেশ্য নির্বাচন করা। কিন্তু সেই নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে হচ্ছে কি না, কিংবা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির কথা বলা হচ্ছে কি না, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সেই প্রশ্নের উত্তর নেই। ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনকেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির একটি পদক্ষেপ বলে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু প্রধান বিরোধী দলকে বাইরে রেখে সেটি কি আদৌ সম্ভব? সরকারের একজন মন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি না এলে সর্বদলীয় সরকার না বলে একে বহুদলীয় সরকার বলা হবে। সমস্যা সমাধানের লাগসই উত্তরই বটে! প্রধানমন্ত্রী জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন, কিন্তু নির্বাচনে বিরোধী দল না গেলে কীভাবে সেই অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে,
সে সম্পর্কে কিছুই বলেননি। নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীনেরা এখন যেসব যুক্তিতর্ক পেশ করছেন, বিরোধী দলও ক্ষমতায় থাকতে সেসবই তুলে ধরত। তাদের সেসব যুক্তি যদি ভুল হয়ে থাকে, ক্ষমতাসীনদেরটিও সঠিক হওয়ার কারণ নেই। মনে রাখতে হবে, বিরোধী দল না এলে নির্বাচনই কেবল প্রহসনে পরিণত হবে না, দেশও গভীর সংকটে পড়বে। প্রধানমন্ত্রী যে বারবার অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতায় আসার পথ বন্ধ করার কথা বলছেন, তার উপায় সব দলের অংশগ্রহণে বিশ্বাসযোগ্য একটি নির্বাচন। প্রধানমন্ত্রী একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠন করেছেন। কিন্তু সব দলকে নিয়ে যদি একটি নির্বাচন করা না যায়, তাহলে সব আয়োজন-উদ্যোগই ব্যর্থ হয়ে যাবে। অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যদি সংবিধানবিরোধী হয়, খণ্ডিত নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারও সাংবিধানিক বৈধতা পেতে পারে না। কুশীলবদের ভূমিকা বদল হলেই গণতন্ত্রের সংজ্ঞা বদলানো যায় না।
অতএব, দেয়ালের লিখন পড়ুন। আলোচনার মাধ্যমে সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। নির্বাচন নিয়ে নিকট-অতীতে যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, তার পুনরাবৃত্তি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। নির্বাচন কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না বলে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে প্রচ্ছন্ন হুমকি আছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন তো ঠেকিয়ে রাখা বা জোর করার বিষয় নয়। সামরিক শাসকেরা যে ভাষায় কথা বলতেন, গণতান্ত্রিক দলের নেতা-নেত্রীরাও কেন সেই ভাষায় কথা বলবেন? বিরোধী দলের মূল দাবি, সব প্রতিযোগীর জন্য সমান সুযোগ  তৈরি করা। ক্ষমতাসীনেরা সেটি করতে ভয় পাচ্ছেন কেন? প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনপ্রিয়তা নেই বলে বিরোধী দল নির্বাচনে আসতে চাইছে না। বিরোধী দলের জনপ্রিয়তা নেই—এটি প্রমাণ করার জন্যও তো তাদের নির্বাচন-প্রক্রিয়ায় আনতে হবে। নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের চেয়ে অনেক বেশি জরুরি সর্বদলীয় নির্বাচন।

No comments

Powered by Blogger.