‘দোহাই আপা সর্বনাশ হয়ে যাবে’ by আলী রাবাত তারেক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে একটা দিকনির্দেশনা দিতে পারেন এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে খবর এসেছে।
সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই সঙ্কট তীব্র হচ্ছে। জনমনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে এক ভীতিকর পরিস্থিতি। কি হচ্ছে কি হবে এই ভেবে বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগেই। দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য এখানে নীরব। তারা বাসি বিষয়-আশয় নিয়ে ব্যস্ত। মালয়েশিয়ায় কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। কানাডা, আমেরিকা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এমন কি অস্ট্রেলিয়ায় বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার হয়েছে। কানাডার একটি সড়কের নাম হয়ে গেছে বেগমগঞ্জ। লুটের টাকা দিয়ে অনেকেই বাড়ি-ঘর কিনেছেন। একই সঙ্গে পাঠিয়ে দিয়েছেন বেগমদের। এই কারণে নাম হয়েছে বেগমগঞ্জ। পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছিল এটা এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট। কেবল আবুল হাসান চৌধুরীর নাম আসায় কেউ কেউ উল্লসিত। কিন্তু তদন্ত শেষে আরও অনেকের নাম যে আসবে এ নিয়ে কারও কি কোন সন্দেহ আছে? অনেক ডাকসাঁইটেদের নাম আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কানাডা পুলিশ জানিয়ে দিয়েছে, তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। অপেক্ষা করুন, দেখুন তদন্ত শেষে কি আসে। জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী কি বলবেন? তিনি কি জনদাবি মেনে নেবেন। নিজের অবস্থান থেকে নড়বেন? এখন পর্যন্ত এমন কোন আলামত নেই। বরং তিনি নিউ ইয়র্কে বলেই দিয়েছেন যা করার সংবিধান মতেই হবে। বর্তমান সংবিধান কি এর কোন সমাধান দেয়? পর্যবেক্ষকরা বলছেন সংবিধান সংশোধন ছাড়া এই সঙ্কটের কোন সমাধান নেই। বিরোধীরা বলছেন তারা নির্দলীয় কোন ব্যবস্থা ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না। একতরফা নির্বাচনে এরশাদেরও সায় নেই। ইনু-মেনন সঙ্গী হতে পারেন। তাদের সামনে বিকল্পই বা কি? নৌকায় না চড়লে আগামী এক শ’ বছরেও তারা এমপি হতে পারবেন না। যেটুকু ছিল নৌকায় উঠে ক্ষমতার ভাগ পেয়ে তারা এখন নানাদিক থেকে বিতর্কিত এবং ক্লান্ত। আওয়ামী লীগের ভেতরেও একতরফা নির্বাচনে তেমন আগ্রহ নেই। এই পটভূমিতে প্রধানমন্ত্রী কি ভাবছেন? এটা জানার কৌতূহল দেশজুড়ে, কূটনৈতিক দুনিয়ায়। বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীরা চাইছেন সব দলকে নিয়ে নির্বাচন। তারা সরকারকে জানিয়েও দিয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং সমঝোতার পক্ষে শেখ হাসিনাকে বলেছেন এমন তথ্য চাউর হয়েছিল নিউ ইয়র্কে। শেষ পর্যন্ত কোন পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি। এ থেকে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ এতে খুশি হয়নি। এ কারণে মনমোহন-হাসিনার বৈঠকটি কোন গুরুত্বই পায়নি মিডিয়ায়। জাতিসংঘ মহাসচিব বলে দিয়েছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে তারা পর্যবেক্ষক দল পাঠাবেন না। ইউরোপীয় ইউনিয়নও একই মত দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মত অনেক আগেই স্পষ্ট করা হয়েছে। চীনের তরফেও বলা হয়েছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছাড়া সঙ্কটের সমাধান হবে না। একজন ভারতীয় কূটনীতিক এক আড্ডায় বলেছেন, তারা জনমতের বাইরে যাবেন না। আবার প্রকাশ্যে কোন পক্ষ নেবেন না। তবে তারা বর্তমান সরকার ক্ষমতায় ফিরে এলে তারা খুশি হবেন। জনমত যে বিপক্ষে চলে গেছে এটাও মানেন। বর্তমান সরকার কিভাবে ফিরে আসবে? সরকার তো দাবা খেলার মতো চেকমেট হয়ে গেছে। নতুন করে খেলতে হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার জনমত ঘোরানোর পক্ষে অনেকেই মত দিয়েছিলেন। বলেছিলেন তরুণ সমাজ এতে করে সরকারের দিকে আকৃষ্ট হবে। সর্বশেষ জরিপ রিপোর্ট এ ধারণাকে অমূলক প্রমাণ করেছে। একটি বিদেশী শক্তির সহযোগিতায় অতি সমপ্রতি তরুণ ভোটারদের মধ্যে একটি জরিপ চালানো হয়। এতে দেখা যায় সাধারণ ভোটারদের মতোই তাদের অবস্থান। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিচার সম্পন্ন করে ফায়দা তোলার চেষ্টাও বিফলে গেছে। কারণ, বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়া সরকারের ফাঁদে পা দেননি। সরকারি নীতিনির্ধারকরা মত দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া রায় শুনেই দেশব্যাপী হরতালের ডাক দিয়ে বসবেন। আন্দোলনে নেমে পড়বেন। বরং তিনি দলের নেতাদের বলছেন ধৈর্য ধরতে। এখন বুঝে-শুনে পদক্ষেপ নিতে হবে। হঠকারিতা করলে সাজানো সংসার তছনছ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আইনি লড়াইয়ের দিকে মনোনিবেশ করতে দলের আইনজীবীদের পরামর্শ দিয়েছেন। এই অবস্থায় সরকারি কৌশল আপাতত মার খেয়েছে। খালেদা আপাতত মাঠে নামবেন না। ২৪শে অক্টোবরের পর পরিস্থিতি কি দাঁড়ায় তা দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন। বল এখন সরকারের কোর্টে। সেখানেই রাখতে চান খালেদা। সংসদ কি বাতিল হবে? হলে কবে? দু’টো মতে সরকারি মহলে। এক, অক্টোবরে বাতিল করে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা। দুই, ২৪ জানুয়ারির আগ মুহূর্তে বাতিল করে আরও তিন মাস সময় বের করে নেয়া। আবার কেউ কেউ বলছেন ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা। শাসক দলে এ নিয়ে ভিন্নমত তৈরি হয়েছে। দলটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ সমঝোতামূলক নির্বাচন তথা সবাইকে নিয়ে নির্বাচনের পক্ষে আগাগোড়াই মত দিয়ে আসছেন। যদিও তার মতের কোন মূল্য নেই দলের মধ্যে। এজন্য মাঝে মধ্যেই স্বেচ্ছানির্বাসনে চলে যান। অন্তত ৫ জন মন্ত্রী ও দুই ডজন নেতা আছেন যারা প্রধানমন্ত্রীকে বলছেন, দোহাই আপা নির্দলীয় ব্যবস্থায় যাবেন না। যে মুহূর্তে কবুল করবেন সে মুহূর্তেই আমরা নেই। আমাদের বাড়িঘরে আগুন দেবে। লঙ্কাকাণ্ড ঘটে যাবে। দলের নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে যাবে। সমালোচকরা বলে থাকেন এ কারণেই নাকি ড. গওহর রিজভীর বাসায় বিরোধীদের সঙ্গে সরকারের বৈঠক ভেস্তে যায়। টেলিফোন পেয়ে সৈয়দ আশরাফ রিজভীর বাসার দিকে পা বাড়াননি। কতিপয় লুটেরা এবং জনবিচ্ছিন্ন নেতা বা কর্মীকে বাঁচানোর জন্য শেখ হাসিনা অনড় থাকবেন? নাকি জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে সমঝোতার পথে আসবেন? এ নিয়ে নানা প্রশ্ন। জনমত উপেক্ষা করায় পাকিস্তান ভেঙেছে। মুসলিম লীগ এনেছিল পাকিস্তান, তাদের হাতেই পাকিস্তান দুই টুকরো হয়েছে। বাংলাদেশ এনেছে আওয়ামী লীগ। আর যাই হোক, আওয়ামী লীগ এমন কোন ঝুঁকি নেবে না, যার পরিণতিতে কলঙ্কিত হয় দলটি। এ প্রত্যাশা স্বাধীনতাকামী জনগণের।

No comments

Powered by Blogger.