উত্তরাধিকারের হাতে বাঁচবে কি লালুর রাজনীতি?

হারিকেনের আলোটা টিমটিম করে জ্বলছিল। সেই আগুনেই জ্বলে উঠবে হাজার আলোর তারাবাতি, এমনই আশা ছিল তাদের। তাই সব রকম ব্যবস্থা ছিল। দাঁড়িয়েছিল একটা বাজিভর্তি গাড়িও। রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সেই গাড়িকে যেন নিঃশব্দে চালিয়ে নিয়ে চলে গেল। কারণ নিভে গিয়েছে সেই হারিকেন। অর্থাৎ আরজেডির প্রধান ভরসা লালুপ্রসাদ যাদব দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ততক্ষণে তাকে কারাগারে পাঠানোর বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। লালু সব সময়ই ওয়ান-ম্যান শো। তার কারিশমাতেই সব সময় ভোট বৈতরণী পেরিয়েছে তার দল। তাই কখনোই দ্বিতীয় কোনো সর্বজনগ্রাহ্য নেতা তৈরি হয়নি লালুর দলে। ফলে, তার জেলযাত্রা দলের ক্ষেত্রে এক বিশাল ধাক্কা,
বিশেষত যখন লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। তার অনুপস্থিতি একদিকে তৈরি করছে নেতৃত্বের শূন্যতা, অন্যদিকে উঁকি মারছে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের সম্ভাবনা। সেক্ষেত্রে লোকসভা ভোটের ঠিক আগে কী করে নীতিশের বিহারে আরজেডি ঘর গোছাবে তা নিয়ে বেশ জটিলতা তৈরি হয়েছে। তবে ভাঙলেও মচকাচ্ছেন না আরজেডি নেতৃত্ব। ১৯৯৭ সালে জেলযাত্রার আগে যেভাবে আচমকা স্ত্রী রাবড়ি দেবীকে মুখ্যমন্ত্রী করে গিয়েছিলেন লালু, এবারও তারই পুনরাবৃত্তি ঘটল। রাবড়ি দেবী এদিন রাতে বলেছেন, যেভাবে সোনিয়া গান্ধী পুত্র রাহুলকে সঙ্গে নিয়ে দল চালাচ্ছেন, আমিও আমার ছেলে তেজস্বীকে নিয়ে একইভাবে দল চালাব।’ এ যে লালুরই কষে দেয়া অংক, তা নিয়ে বিশেষ দ্বিমত নেই রাজনৈতিক মহলেও। কারণ লালু চাইছেন, তার জায়গায় স্বচ্ছ ভাবমূর্তি নিয়ে উঠে আসুক তার ছেলে আর পরের বিধানসভায় সেই ভাবমূর্তিকে কাজে লাগাক দল। হিসাব মতো লালু এখন ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না। কারণ শীর্ষ আদালতের নির্দেশে দোষীরা জেল থেকে লড়তে পারবেন না। এই মেঘের আড়ালেও তাই রুপালি রেখা দেখছে তার দল। প্রভুনাথ সিংয়ের দাবি, ‘যত বার লালুপ্রসাদ জেলে গিয়েছেন, ততবারই দল লাভবান হয়েছে। ১৯৭৭ সালে লালু জেল থেকে ফিরে এসে লোকসভায় জেতেন। বিহারেও তিনি তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসেছিলেন জেল থেকে ফিরে আসার পরই। তাই আমরা চাই উনি জেলে যান, ফিরে এসে উনিই ফের বসবেন রাজ্যের মসনদে!’ এ কথায় যদিও চমকেছেন দলীয় অনেক সমর্থকই।
তবে আরজেডিকে ভাবাচ্ছে অন্য একটা বিষয়, তা হলো এবার কংগ্রেস কোন পথে হাঁটবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আরজেডি নেতা বললেন, ‘এই মুহূর্তে নীতিশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার মতো জায়গায় আর থাকছেন না লালু। ফলে কংগ্রেস স্বাভাবিকভাবেই এখন নীতিশকে পাশে পেতে চাইবে।’ ১৭ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে জেডিইউ এখন কংগ্রেসের দিকেই ঝুঁকে। আর দুঃসময়ে কংগ্রেস এখন কেনই বা আরজেডির পাশে থাকবে, আসছে সে প্রশ্নও। রাজনৈতিক বিশ্লেষণ বলছে, কংগ্রেস এখন সব রাজ্যেই লাভজনক জোটসঙ্গী খুঁজছে। জনমত সমীক্ষা যতই বলুক না কেন, আরজেডির আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ভালো ফল করার সম্ভাবনা রয়েছে, কংগ্রেস কিন্তু মনে করছে নীতিশেরই পাল্লা ভারি। এতদিন সরাসরি দু’পক্ষ কেউ কাউকে কিছু বলেনি। কিন্তু লালুর দোষী সাব্যস্ত হওয়া সে বিষয়টাকেও অনেকটা সহজ করে দিল। তাই আরজেডি মনে করছে, কংগ্রেস এখন নতুন বন্ধুতেই বেশি আগ্রহী হবে। হাত গুটিয়ে বসে নেই বিজেপিও। আরজেডি ভোটের ভিত্তি ছিল যাদব ও মুসলিম ভোট। সেই যাদব ভোট, যা মোট ভোটারের প্রায় ৯ শতাংশ। সেই ভোট টানার চেষ্টা বিহারে সঙ্গিহীন বিজেপির। আর জেডিইউর সহজ অংক। তারা কংগ্রেসের সঙ্গে যাক বা একলা চলুক, তাদের লক্ষ্য এখন ১৭ শতাংশ মুসলিম ভোট।

No comments

Powered by Blogger.