ককটেল মারে কারা? by নুরুল ইসলাম বিএসসি

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন বিরোধীদলীয় নেত্রীর সঙ্গে ফোনে আলাপ করছিলেন, ঠিক ওই সময়েই মন্ত্রী, বিচারপতি, সিইসির বাসা, পুলিশ অফিসের সামনে ককটেল বিস্ফোরিত হচ্ছিল। এর অর্থ এই হতে পারে যে, দুই নেত্রীর সংলাপ ককটেল পার্টিরা চায় না এবং যে কোনো মূল্যে দুই নেত্রীকে মুখোমুখি হয়ে কথা বলতে বাধার সৃষ্টি করতে চায়। প্রশ্ন হল, এরা কারা? নিশ্চয়ই এরা বিএনপি বা ছাত্রদলের কর্মী নয়। জামায়াত-শিবিরই এ কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাই রাষ্ট্রনায়কসুলভ আচরণ করেছেন। একদিন আগেও যে নেত্রী এই সরকারকে অবৈধ ঘোষণা দিলেন, তাকে ফোন করে বড় আত্মার পরিচয় শুধু নয়, শেখ হাসিনা আবারও প্রমাণ করলেন তিনি দেশের মানুষকে ভালোবাসেন। দেশের স্বার্থে তিনি যে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন। বেগম জিয়া হরতাল প্রত্যাহার করে গণভবনে আলোচনার প্রস্তাব গ্রহণ করলে দেশের মানুষের মনে শান্তি ফিরে আসত, সেই সঙ্গে বেগম জিয়ার প্রতি মানুষের আস্থাও বৃদ্ধি পেত। কী অদৃশ্য কারণে তিনি প্রস্তাবে ওই মুহূর্তে রাজি না হয়ে সময় ক্ষেপণের কৌশল নিলেন, বোঝা মুশকিল। আমার তো মনে হয়, তারেক রহমানের সঙ্গে পাকিস্তানি আইএসআই’র সংশ্লিষ্টতার যে কথা হচ্ছে, ওই সূত্র ধরেই তিনি এগিয়ে যেতে চান। এ মুহূর্তে বেগম জিয়া পুরোপুরি জামায়াত-শিবিরের কবজায় চলে গেছেন। বিএনপির রাজনীতি এখন বিএনপির হাতে আছে বলে মনে হয় না। জামায়াতই বিএনপির মূল শক্তি ও ভোট ব্যাংক। বেগম জিয়া চাইলেও তাদের বলয় থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন বলে প্রতীয়মান হয় না।
বেগম জিয়া যেখানে যেখানে পাবলিক মিটিং করেন, জামায়াতিরাই ওখানে যুদ্ধাপরাধীদের ছবি নিয়ে নানা ধরনের স্লোগান দেয়। এমনকি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মিটিংয়ে ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধেও স্লোগান দিয়ে জামায়াতিরা প্রমাণ করেছে, তারা এ দেশের আইন-কানুন কিছুই মানতে নারাজ। বেগম জিয়া একবারের জন্যও যুদ্ধাপরাধে বিচারাধীন ব্যক্তিদের পক্ষে ছবি প্রদর্শন ও স্লোগান বন্ধের নির্দেশ দিলেন না। এতে কী প্রমাণিত হয়? সিলেটের জনসভায়ও ছাত্রদলের কর্মীদের সামনের সারি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে শিবির পুরো মাঠই দখলে রেখে প্রমাণ করেছে, এটা বিএনপির জনসভা নয়, এটা জামায়াতের জনসভা। এখন বেগম জিয়া দুই ভূমিকায়- একবাহু বিএনপি, আর শক্ত বাহু জামায়াত-শিবির। জামায়াত এ দেশের জন্মে বিশ্বাস করেনি। বাংলাদেশের জন্ম হোক জামায়াতিরা কোনোদিন চায়নি। মওদুদী পুত্র আশ্চর্য হয়ে বলেছেন, জামায়াতিরা এদেশে রাজনীতি করে কীভাবে?
জামায়াতিরা এদেশের ক্ষতি করতে পারলে খুশি। পাকিস্তান প্রতিশোধ গ্রহণে ব্যর্থ হয়ে আইএসআই’র সাহায্যে জামায়াতিদের দিয়ে এদেশে উন্নয়নমূলক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করতে চায়। বিভিন্ন পত্রিকার খবরে দেখা যায়, তারেক রহমানের সঙ্গে আইএসআই’র নিয়মিত যোগাযোগ আছে। শিবিরের ছেলেরা রাস্তায় গাড়ি ভাঙে। গাড়ি কী দোষ করল? গাড়িগুলো কি জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেছে? মোদ্দা কথা, এ দেশের অর্থনীতির চাকা স্তব্ধ করাই এদের মূল উদ্দেশ্য।
যে কথা বলছিলাম, বেগম জিয়া যদি প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে সায় দিয়ে হরতাল নামক ভয়তাল প্রত্যাহার করতেন, তাহলে একটা ভালো পরিবেশ তৈরির সম্ভাবনা ছিল। খাওয়ার টেবিলে বসে হয়তো অনেক কিছু সমাধান করা যেত। দেখা যাক, এখনও সময় আছে, ২৯ তারিখের পর বেগম জিয়া কীভাবে সাড়া দেন, সেটার ওপরই আগামী দিনের শান্তি নির্ভর করছে। আমরা সবাই রাজনীতি করি দেশের কল্যাণে, মানুষের সমৃদ্ধি বর্ধনে। মারামারি করে যদি সব শেষ হয়ে যায়, রাজনীতিটা কার স্বার্থে?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের স্বার্থে অনেক কিছু ছাড় দিতে এগিয়ে এসেছেন। সাংবিধানিক এই সরকার অবৈধ হয় কীভাবে? দেশে একটা সরকার তো থাকতে হবে। শেখ হাসিনার সরকার অবৈধ হলে, এ মুহূর্তে চলে গেলে দেশের ভার কে নেবে? নিয়ম অনুযায়ী একটি নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষে আরেকটি নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। নির্বাচনই ক্ষমতায় যাওয়ার একমাত্র পথ। নির্বাচনের জন্য সবাইকে তৈরি থাকতে হবে এবং জনগণের রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
নুরুল ইসলাম বিএসসি : সংসদ সদস্য ও কলাম লেখক

No comments

Powered by Blogger.