লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক by মোহাম্মদ আবুল হোসেন

পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরব এখন বিশ্ব মুসলিমের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। সারা বিশ্ব থেকে ধনী, দরিদ্র, বড়, ছোট সব ভেদাভেদ ভুলে তারা এক কাতারে শামিল হচ্ছেন।
উদ্দেশ্য, এক হয়ে এক আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে হজ করা। এবার হজযাত্রীর সংখ্যা ২০ লাখের ওপরে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একসঙ্গে এক সমুদ্র মুসলিমের এই স্রোতকে নিরাপত্তা, তাদের সেবা দিতে প্রস্তুত সৌদি আরব।

কাবা শরিফের চাবি হস্তান্তর
পবিত্র কাবাগৃহের চাবির রক্ষক আবদুল কাদের আল শাইবি। তার কাছে কাবাঘর সাজানোর বিশেষ কাপড় কাবা কিসওয়া তুলে দিয়েছেন পবিত্র দুই মসজিদের প্রেসিডেন্সির প্রধান শেখ আবদুল আজিজ আল সাদাইস। গত রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে কাবা কিসওয়া তার হাতে তুলে দেয়া হয়। কাবাঘরকে যে কালো কাপড়ে চারদিক থেকে ঢেকে দিয়ে সাজানো হয় তার নাম কিসওয়া। সারা বছর অনেক দক্ষ কারিগর মিলে তৈরি করেন একটি কিসওয়া। এজন্য ব্যয় হয় কোটি কোটি রিয়াল। একটি কিসওয়ার মূল্য দাঁড়ায় ২ কোটি সৌদি রিয়াল। এটি তৈরি হয় প্রাকৃতিক খাঁটি সিল্ক থেকে। এ সুতাকে কালো রং করা হয়। শুধু কিসওয়া তৈরির জন্য রয়েছে একটি কারখানা। সেখানে ১৪ মিটার উচ্চতার এই কিসওয়া তৈরি হয়। একেবারে ওপরে এর এক-তৃতীয়াংশ কিসওয়া বেল্টের সঙ্গে লাগিয়ে দেয়া হয়। এর দৈর্ঘ্য ৪৫ মিটার এবং প্রস্থ ৯৫ সেন্টিমিটার। মোট ১৬টি খণ্ড নিয়ে তৈরি হয় কিসওয়া। এগুলো পুরো কাবাগৃহকে চারদিক থেকে ঢেকে ফেলে। ওপরে যে বেল্ট রয়েছে তা সিলভারের সুতা দিয়ে এমব্রয়ডারি করা, যা স্বর্ণ দিয়ে আবৃত করা। এখানে উল্লেখ্য, ১৫ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে কাবাঘরের চাবির রক্ষক শাইবি পরিবার। পবিত্র কাবাঘর খোলা, এর ভেতরে পরিষ্কার, পরিদর্শকদের কাবাঘরের ভেতরে নেয়াসহ এ ঘরের সার্বিক দেখাশোনার দায়িত্ব থাকে এই পরিবারের। ৯ই জিলহজ খুলে দেয়া হবে কাবাঘরের দরজা।

নিরাপত্তায় ২৪০০ ক্যামেরা
এবার হজযাত্রীদের চলাফেরা ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হজ কর্তৃপক্ষ পবিত্র শহরগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে এসব শহরে বসানো হবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ২৪০০ ক্যামেরা। হজ অপারেশনের কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের কমান্ডার মেজর জেনারেল আবদুল্লাহ আল জাহরানি একথা বলেছেন। তিনি বলেন, এ বছর প্রথমবারের মতো নিরাপত্তাকে আরও জোরালো করা হয়েছে। ব্যবহার করা হচ্ছে অতি শক্তিশালী ডিজিটাল ক্যামেরা। এসব ক্যামেরা ৬০ কিলোমিটার দূরের ঘটনায় নজরদারি করতে পারবে। বিরূপ আবহাওয়ায়ও এসব ক্যামেরা কাজ করতে পারবে। আল জাহরান বলেন, এ মিশনকে কার্যকর করতে সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য জননিরাপত্তা বিভাগের মহাপরিচালক তার বিভাগের লোকজনকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, এরই মধ্যে আমরা পবিত্র শহরগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ৪২০০ ক্যামেরা প্রতিস্থাপন করেছি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর সংখ্যা বাড়ানো হবে। এ বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন বিভাগকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানাচ্ছেন। ওদিকে পবিত্র হজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সৌদি আরবের বিদ্যুৎ সরবরাহ কোম্পানি পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে পারবে বলে নিশ্চিত করেছেন এ কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলী বিন সালেহ আল বারাক। সফলভাবে হজ সম্পন্ন করতে এ কোম্পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষ করে যখন প্রায় ২০ লাখ হজযাত্রী পবিত্র মক্কা, মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফায় সমবেত হন তাদেরকে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া হয় নিরবচ্ছিন্নভাবে। এরই মধ্যে আল বারাক তার অধীন সব অফিস সফর করে প্রস্তুতি কেমন তা পরীক্ষা করেছেন। তিনি সাক্ষাৎ করেছেন মক্কার গভর্নর প্রিন্স খালেদ আল ফয়সালের সঙ্গে।
মক্কা শরিফে ১১৬৭ ক্যামেরা
মক্কায় পবিত্র গ্র্যান্ড মসজিদ বা মূল কাবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে মোট ১১৬৭টি ক্যামেরা। এসব ক্যামেরার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে অপারেশন রুমের। গ্র্যান্ড মসজিদের নিরাপত্তা বিষয়ক স্পেশাল বাহিনীর কমান্ডার মেজর জেনারেল ইয়াহিয়া আল জাহরানি একথা বলেছেন।

নওমুসলিমদের হজ
এ বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২৫ জন নওমুসলিমকে হজ করার আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর নিউ মুসলিম এবং ইন্টারন্যাশনাল কোরআন মেমোরাইজেশন অর্গানাইজেশন। এছাড়া যারা পবিত্র কোরআন মুখস্থ করেছেন তাদের একটি গ্রুপকে সহায়তা দেবেন হজে। এতে তাদেরকে সমর্থন দিচ্ছে হাসান শারবাতলি ফাউন্ডেশন। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর নিউ মুসলি’র সেক্রেটারি জেনারেল খালেদ আল রোমাইয়া। তিনি বলেন, যারা ইসলাম বোঝার জন্য সমপ্রতি খুব বেশি আগ্রহী হয়েছেন তাদের সহায়তা করে তার সংগঠন। তিনি বলেন, আমরা এসব মানুষকে অন্য মুসলমানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করি। এর আগে তার এ সংগঠন ৫০০ নওমুসলিমকে হজ করতে সহায়তা করেছে।

মক্কায় হোটেল খালি থাকবে না
এ বছর স্থানীয় ও বিদেশী হজযাত্রী কমানো হয়েছে। এতে ধারণা করা হচ্ছে পবিত্র মক্কা নগরীর হোটেলগুলো ভাল ব্যবসা করতে পারবে না এবার। কিন্তু সৌদি কমিশন ফর ট্যুরিজম অ্যান্ড অ্যান্টিকুইটিস-এর এক কর্মকর্তা এমন কথা অস্বীকার করেছেন। তার নাম হলো আবদুল্লাহ আলসাওয়াট। তিনি এ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, এবারের ওমরাহ মওসুম খুব ভাল গেছে। ৫৩ লাখেরও বেশি মানুষকে ওমরাহ ভিসা দেয়া হয়েছিল। তবে হজের সময় মক্কার হোটেলগুলোতে কোন সঙ্কট হবে না বলেই তার আশা। তিনি বলেন, রয়েছে ৬৪৯টি হোটেল। তাতে রয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজারেরও বেশি কক্ষ। এর মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ হোটেল লিজ দেয়া হয়।

বাদশা আবদুল্লাহ’র ২৪০০ অতিথি
পবিত্র দুই মসজিদের রক্ষক বাদশা আবদুল্লাহ’র অতিথি হয়ে এবার হজ করতে সৌদি আরব পৌঁছেছেন ৫০ শ্রীলঙ্কান। এ বছর বাদশা আবদুল্লাহ’র এমন অতিথি হিসেবে হজ করবেন ২৪০০ বিদেশী। তার মধ্যে প্রথম দফায় শ্রীলঙ্কান হজযাত্রীরা সৌদি আরব পৌঁছেছেন। অতিথি হজযাত্রী বিষয়ক কর্মসূচির প্রধান নির্বাহী আবদুল্লাহ আল মুদলাজ বলেছেন, বাদশাহর আমন্ত্রণে এবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মুসলিমরা আসছেন। এমন ২৪০০ হজযাত্রীর মধ্যে ১৪০০ হজযাত্রী যাচ্ছেন ৮০টি দেশ থেকে। বাকি ১০০০ হজযাত্রী যাচ্ছেন ফিলিস্তিন থেকে। ওদিকে মক্কাভিত্তিক মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগ বলেছে, তারা ইসলামিক সেন্টারের পরিচালকদের মধ্যে ৫০০ জনকে হজ করতে সহায়তা করছেন। এর মধ্যে রয়েছেন মসজিদ, এতিমখানা, মাদরাসা ও স্বাস্থ্য সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিরা।

ভুয়া হজ কোম্পানি
সৌদি কর্তৃপক্ষ বলেছে, কয়েক দিনে তারা কমপক্ষে ১০টি ভুয়া হজ কোম্পানি চিহ্নিত করেছে। এসব কোম্পানি হজযাত্রীদের হজ সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় সেবা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। মক্কার ডেপুটি গভর্নর ও হজ বিষয়ক অপারেশনের নির্বাহী কমিটির প্রধান আবদুল আজিজ আল খোদাইরি বলেছেন, এসব ভুয়া হজ বিষয়ক এজেন্টের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করা হবে শিগগিরই। এর সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছে তাদের কঠোর শাস্তি দেয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.