তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত সংসদ চলতে পারে

জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগের দিন পর্যন্ত সংসদ অধিবেশন চলতে কোন বাধা নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এ দিন পর্যন্ত সংসদ চালাতে সাংবিধানিকভাবে কোন বাধা নেই।
সংবিধানে বলা আছে, সংসদের একটি অধিবেশন থেকে অন্য অধিবেশনের ব্যবধান যেন ৬০ দিনের বেশি না হয়। তবে নির্বাচনকালীন তিন মাস সময়ের ক্ষেত্রে এই বিধানটি শিথিল করা হয়েছে। তবে সংসদ বসতে পারবে না এমনটি সংবিধানে  বলা নেই। অনেকে না জেনে এ বিষয়ে কথা বলছেন। গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ২৪শে অক্টোবরের পর সংসদ অধিবেশন চলা, না চলা নিয়ে বিতর্কের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিলেন। ২৪শে অক্টোবরের পর বিরোধী দলের আন্দোলনের হুমকিরও জবাব দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিরোধী দলের নেতা নাকি ২৪শে অক্টোবরের পর দেশে কেয়ামত নিয়ে আসবেন। এই কেয়ামত থেকে দেশের মানুষকে রক্ষায় আমরা যা করার তা-ই করবো। তারা দেশবাসীর জন্য কেয়ামত আনতে চাইলে দেশবাসীকে রক্ষার দায়িত্ব আমাদের। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন  গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দলীয় কর্মসূচি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করেন দলের শীর্ষ নেতারা।
প্রধানমন্ত্রী সংসদ অধিবেশন বসা নিয়ে চলা বিতর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, টকশোতে দেখেছি অনেকে বলছেন, ২৪শে অক্টোবরের পর আর সংসদ বসতে পারবে না। কিন্তু এই ২৪শে অক্টোবরের কথা আমরাই হিসাব করে বলেছি। কারণ সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হলে সংসদের মেয়াদ শেষের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। যেহেতু এই সময়টি নির্বাচনকালে তাই এই সময়ে সংসদ অধিবেশন বসার ক্ষেত্রে ৬০ দিনের বাধ্যবাধকতাটি শিথিল করা আছে। যদি প্রেসিডেন্টের অনুরোধে সংসদ না ভাঙা হয় তাহলে সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগের দিন পর্যন্ত সংসদ অধিবেশন চালাতে কোন বাধা নেই। তিনি বলেন, সংসদ বসতে পারবে না- এমন বক্তব্য ঠিক নয়। প্রেসিডেন্ট সংসদ ভেঙে দিলেও জরুরি প্রয়োজনে তিনি সংসদ অধিবেশন আহ্বান করতে পারেন। যারা এ বিষয়ে সমালোচনা করেন তাদের সংবিধানের ৭২ ও ১২৩ ধারা ভাল করে পড়ে নেয়ারও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ ধারাগুলো পড়ে নিলে আশা করি কোন ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থাকবে না। তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিরোধী দল আমাদের হুমকি দিয়েছে। তারা বলছে, ২৪শে অক্টোবরের পর সংসদ বসতে পারবে না। সংবিধানে কিন্তু তা বলা নেই। কেউ যদি এ নিয়ে বলতে চান তাহলে যেন সংবিধান জেনে বলেন।
তিনি বলেন, বিরোধী নেত্রী নির্বাচন কমিশন নিয়ে কথা বলছেন। কিন্তু এই কমিশন তো আমরা করিনি। এই কমিশন গঠনের আগে প্রেসিডেন্ট সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সবার মতামত নেয়া হয়েছে। বিরোধী নেত্রীর প্রতিনিধিরা গিয়েছিলেন।  শেখ হাসিনা বলেন, তারা বলছেন, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না। কারণ এই সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। আমার প্রশ্ন, তাহলে এই সরকারের সময়ে তারা জিতলো কিভাবে? সিটি করপোরেশনসহ অনেক নির্বাচনে তো তাদের প্রার্থী জিতেছে। আমরা জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করছি। সব সময় আন্দোলন করেছি। আমরা দিন-দুপুরে ভোট চুরি করিনি। ভোট চুরিতে তারা অভ্যস্ত। এখন দেশের মানুষ শান্তিতে আছে সেটাই তাদের অশান্তি।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, দেশের মানুষ যদি সত্যিকার উন্নয়ন ও অগ্রগতি চায়, জঙ্গিবাদ ফিরে আসুক তা যদি না চায় তাহলে যেন আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। আমি দেশবাসীর কাছে এ আহ্বান জানাই।
মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের বিষয়ে বিরোধী দলের সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা স্বপ্ন দেখেছে। আইডিয়া-স্বপ্ন তাদের। আমরা বাস্তবায়ন করেছি। কারণ স্বপ্ন দেখা এক জিনিস আর বাস্তবায়ন করা অন্য। তারা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। কারণ তাদের নানাজনকে ভাগ দিতে হয় বলেই তারা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এই ফ্লাইওভারের বাকি কাজ আগামী দুই মাসের মধ্যেই শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
আমরা ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছি:  এদিকে রাজধানীর পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ধর্মীয় সমপ্রীতি বজায়  রেখে চলা বাঙালির ঐতিহ্য। ভবিষ্যতেও এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে। কোন অপশক্তিই যাতে কখনও ধর্মীয় বিরোধ সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্যও আহ্বান জানান তিনি। রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনে গতকাল বিকালে পরিদর্শনে যান তিনি। সেখানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমরা ধর্মের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছি। এদেশে ধর্ম যার যার  দেশ সবার। সবাই নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। এখানে  কেউ বাধা দেবে না। সব ধর্মেই আছে অন্য ধর্মের উপর আঘাত দেয়া যাবে না। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-ও বলেছেন অন্য ধর্মের উপর আঘাত না করার জন্য। ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে থেকে সবাইকে সম্মিলিতভাবে  দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আহ্বান জানান তিনি। বলেন, আমরা ক্ষমতা গ্রহণের আগে বাংলাদেশ সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের  দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। বাংলাদেশ ব্যর্থ দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। আমরা ক্ষমতা গ্রহণের পরে ইতিবাচক ভাবমূর্তি ফিরিয়ে এনেছি। বাংলাদেশ এখন আর সন্ত্রাসী জঙ্গিবাদীদের রাষ্ট্র নয়। জাতিসংঘও এটি স্বীকার করেছে। এসময় প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত হিন্দু ধর্মাবলম্বী,  দেশবাসীকে পূজা ও ঈদের শুভেচ্ছা জানান। এসময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত  সেনগুপ্তসহ হিন্দু ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.