আইসম্যানের বংশধর

১৯৯১ সালে বিজ্ঞানীরা অস্ট্রিয়া-ইটালি সীমান্তে ওটজাল আল্পস নামক স্থান থেকে হিমায়িত অবস্থায় ৫৩০০ বছর পুরোনো একটি মমি উদ্ধার করেছিল। স্থানের নামে যার নামকরণ করা হয়েছিল ওটজি দ্য আইসম্যান।
বিজ্ঞানিরা এবার খুঁজে বের করেছেন আইসম্যানের জীবিত বংশধরদের। একজন দু’জন নয়, ১৯ বংশধরকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন অস্ট্রিয়ার বিজ্ঞানীরা। ইনসব্রাক মেডিকেল ইউনিভার্সিটির লিগ্যাল মেডিসিন ইসস্টিটিউটের গবেষকরা দেশটির পশ্চিমে টাইরোল এলাকার রক্তদানকারীদের ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করে। তার মধ্যে ১৯ জনের ডিএনএ স্যাম্পলের সঙ্গে ওটজি দ্য আইসম্যানের ডিএনএর সাদৃশ্য শনাক্ত করতে সক্ষম হন তারা। বিশেষজ্ঞদের ধারণা একই ধরনের ডিএনএ মিউটেশন নিকটবর্তী এলাকা সুইজারল্যান্ডের এন্‌গাডিন এবং ইটালির দক্ষিণ টাইরোল এলাকাতেও পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিজ্ঞানীরা প্রায় ৩৭০০ ব্যক্তির ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করে। এছাড়াও প্রত্যেককে বলা হয় তাদের পূর্বপুরুষ সম্পর্কে তারা যতটুকু জ্ঞাত আছে সে তথ্য দেয়ার জন্য। বিজ্ঞানীরা ডিএনএর সাদৃশ্য পাওয়া বংশধরদের এ বিষয়ে এখনও কোন কিছু জানাননি। প্রায় দু’দশক আগে বরফের নিচে খুজে পাওয়া ওটজির হিমায়িত দেহ নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন। ৫৩০০ বছর আগে ওই স্থানে ওটজি কিভাবে সমাহিত হয়েছিলেন সেটা জানার চেষ্টা চালিয়ে যান তারা। ওটজির কলারবোনে ছিদ্র থাকায় ধারণা করা হয়েছিল তিনি তীরবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন। আবার ব্রেইন স্ক্যান করার পর জানা গেছে তিনি উঁচু স্থান থেকে পড়ে মৃত্যুবরণ করেন। তবে এ বছরের শুরুর দিকে জার্মানির ইউর‌্যাকের (ইউরোপিয়ান একাডেমি অব বোলজ্যানো) গবেষকরা আবিষ্কার করেন, খুব সম্ভবত তিনি মস্তিষ্কে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। ২০০১ সালে অস্ট্রিয়ার ইনসব্রাক ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা ওটজির মস্তিষ্কের ক্যাট স্ক্যান করেন। স্ক্যানে দেখা যার আইসম্যানের মাথার পেছনে কালো ক্ষত রয়েছে। পরিশেষে বিজ্ঞানীরা এ উপসংহারে উপনীত হন, ওটজি মাথায় আঘাতের কারণে মারা গিয়েছিলেন। ডিএনএ স্যাম্পল থেকে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল আনুমানিক ৪৫। আর উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি। ওটজির দেহ ইটালির বোলজ্যানোতে বিশেষভাবে তৈরি এক জাদুঘরে সংরক্ষণ করা আছে। বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হিমায়িত ঘরে রাখা ওটজির দেহকে দেখার জন্য অনেক দর্শনার্থী বেড়াতে আছেন। আইসম্যানের সঙ্গে বরফের নিচে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল তার ব্যবহৃত কিছু জিনিসপত্র। এর মধ্যে রয়েছে এক ঝাঁক তীর একটি ধনুক আর দস্তার তৈরি একটি কুড়াল। তার শরীরে পরিহিত ছিল সেলাইকৃত ঘাস দিয়ে তৈরি এক গরম চাদর, একটি কোট,  ছাগলের চামড়ার তৈরি ল্যাগিংস আর ভালুকের চামড়ার ক্যাপ।

No comments

Powered by Blogger.