আওয়ামী লীগকে ভোট দেব by নুরুল ইসলাম বিএসসি

আলোচনার সূচনায় আমরা কেন আওয়ামী লীগ করি, তা খতিয়ে দেখা দরকার। আমার বিশ্বাস, আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি, কেউ মুখস্থ আওয়ামী লীগ করি না। দেখেশুনে, জেনে আওয়ামী লীগ করি। আওয়ামী লীগ যা চায়, আমরাও হৃদয়ে তা ধারণ করি বলেই হৃদয়ের চাওয়া-পাওয়ার মিলের কারণে আওয়ামী লীগ করি। আওয়ামী লীগ ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়ে হৃদয়ে ধারণ করে। আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস রাখে এবং ধর্মনিরপেক্ষতা চর্চা করে। আওয়ামী লীগ জাতির পিতার বাংলাদেশে বিশ্বাস রাখে। আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি, আমাদের চাওয়া ও পাওয়ার সঙ্গে আওয়ামী লীগের চাওয়া-পাওয়ার মিল আছে বলেই আমরাও আওয়ামী লীগ করি।
’৭১ সালে বিএনপির জন্মই হয়নি। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস এদের থাকবে, এ কথা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। বিএনপি জেনারেল জিয়াকে মুক্তিযোদ্ধা বলেন। আমরাও মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান অস্বীকার করি না। প্রশ্ন থাকে, মুক্তিযুদ্ধের সময় কামারুজ্জামান, সাঈদী বা গোলাম আযম জেনারেল জিয়াকে সামনে পেলে ছেড়ে দিত কি? নিশ্চয়ই দিত না। তবুও কেন এদের জন্য বিএনপির এত দরদ? এদের বাঁচাতে বিএনপির শত চেষ্টা মানুষকে আহত করে। যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের জন্মই হয়নি, সেই ছাত্রশিবির কর্মীদের কাছে আহ্বান জানাতে ইচ্ছা করে, দলকে কলুষমুক্ত করুন, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার চেষ্টা করুন। আপনাদের পিতা-মাতা, দাদা-দাদির কাছ থেকে জামায়াতের তাণ্ডব সম্পর্কে জেনে নিন। দেখবেন আপনাদের হৃদয় পরিষ্কার হয়েছে, জামায়াতের প্রতি ঘৃণা জন্ম নিয়েছে।
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে এজন্যই ভোট দিতে চাই, তারা এরই মধ্যে প্রমাণ করেছে, জঙ্গিবাদ দমনে এদের বিকল্প নেই। যারা নারীদের তেঁতুলের সঙ্গে তুলনা করে, দিলে লালা পয়দাস করে, আবার এদের হয়ে সংসদে যারা সাফাই গায়, এদের ভোট দেব কেন?
বিএনপির সঙ্গে হেফাজতের যে সখ্য, তা নিয়ে দেশের মানুষ বিভ্রান্ত। তেঁতুল হুজুর বলেছেন, মেয়েদের পঞ্চম শ্রেণীর বেশি পড়াতে নেই। হুজুরের কাছে প্রশ্ন, আমার মেয়ের যখন বাচ্চা হবে, হাসপাতালে যখন নিয়ে গেলাম, স্বাভাবিক কারণে আমি একজন মহিলা ডাক্তার, মহিলা নার্স চাইব। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত মহিলারা পড়াশোনা করলে আমি মহিলা ডাক্তার পাব কোথায়? হুজুর কি সব মহিলাকে পুরুষ ডাক্তার দিয়ে প্রসবকালীন সেবা দিতে চান? আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর হুজুরের কাছে আছে কি-না জানা নেই, তবে এই হুজুরের সঙ্গে হাত মেলানোর ফলে বিএনপিকে আমরা ভোট দিতে চাই না।
জামায়াত একটি যুদ্ধাপরাধী দল, সন্ত্রাসী দল। কথাটা আমার নয়, আদালতের। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যারা হাত মেলায়, এরাও সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ লালন করে। এদের সঙ্গে যারা হাত মিলিয়েছেন, এদের কেন দেশের মানুষ ভোট দেবে? এর চেয়ে বরং আওয়ামী লীগ- যারা প্রগতির স্রোতে বিশ্বাস রাখে, বিজ্ঞানের জগতে দেশবাসীকে সম্পৃক্ত করে- তাদেরই ভোট দেব।
আওয়ামী লীগ সব কাজ শুদ্ধ করেছে এমন দাবি করছি না। কিন্তু যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে, একজন দল-দাসও তা অস্বীকার করতে পারবেন না। আওয়ামী লীগ সত্যিকার অর্থে উন্নয়ন করে। দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন করে। আওয়ামী লীগের বিগত সাড়ে চার বছরে উন্নয়নের ফলাফল জাতি যুগ যুগ ধরে ভোগ করবে। বিএনপির পক্ষে এত সব উন্নয়ন কখনও সম্ভব নয়। কারণ বিএনপির মূল শেকড় জামায়াত, যারা এদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস রাখে না। এরা দেশকে পাকিস্তানের সঙ্গে মেলানোর এখনও স্বপ্ন দেখে। তাই আমরা আওয়ামী লীগকেই ভোট দেব।
সব দিক বিচার-বিশ্লেষণ করে আমরা ঠিক করেছি আগামীতে আওয়ামী লীগকেই ভোট দেব এবং দেশের উন্নয়নের গতিধারাকে অব্যাহত রাখব। এর ব্যতিক্রম হলে দেশ মধ্যযুগে প্রবেশ করবে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বসবাসকারীরা, সূর্য সন্তানরা এই দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হবে।
নুরুল ইসলাম বিএসসি : সংসদ সদস্য ও কলাম লেখক

No comments

Powered by Blogger.