মাহমুদুল ইসলামের মতে ড. ইউনূস সরকারি চাকুরে নন

মন্ত্রিসভার নজিরবিহীন সিদ্ধান্তে অনেক আইনি প্রশ্ন সামনে এসেছে। আরেকটি তথ্য হচ্ছে ১৯৯৯ সালে ড. ইউনূসের বয়সসীমা ৬০ বছর অতিক্রমের পর তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের কাজে বিদেশ ভ্রমণে কোন অর্থ নেননি।
দেশের ভেতরে ভ্রমণে নিয়েছেন মাত্র ৮০ হাজার ৬৫ টাকা। গত সোমবার মন্ত্রিসভায় উপস্থাপিত নথিতেই এই তথ্যের উল্লেখ আছে। এখন দু’টি আইনের নির্দিষ্ট লংঘনের কথা বলা হচ্ছে। আয়কর আইনমতে ব্যক্তির আয়কর সংক্রান্ত তথ্য গোপনীয় বিষয়। এই গোপনীয়তার কারণেই এনবিআর এর আগে অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির সম্পদের বিবরণী দুদককে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এনবিআর প্রেস রিলিজ দিয়ে ড. ইউনূসের যে ধরনের তথ্য  প্রকাশ করেছে সেই বিষয়ক তথ্য তারা তথ্য অধিকার আইনে সরবরাহ করে না। ড. ইউনূসকে পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে রায়দানকারী বেঞ্চের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আলোচিত প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। তিনি তাঁর নিজেরটাসহ কয়েকজন বিচারপতির সম্পদের বিবরণী সংবলিত আয়করের রিটার্ন জমা নিয়েও গোপনীয়তার আইনি যুক্তি দেখিয়ে গণমাধ্যমে তা প্রকাশ করা থেকে অসম্মত থাকেন। ড. ইউনূসের ক্ষেত্রে তার ব্যত্যয় ঘটে।
আয়কর আইনের অপর একটি ধারায় বলা আছে, তিন বছর ধরে যদি কোন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রাপ্য কর আদায়ে এনবিআর কোন পদক্ষেপ নিতে অপারগ থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কর ফাঁকির জন্য দোষারোপ করা যাবে না। তথ্যের গোপনীয়তা ও তিন বছর সংক্রান্ত ওই বিধানের বিষয়ে আইনি অভিমতের বিষয়টি গতকাল ইউনূস সেন্টারে আলোচিত হয়।   
ড. মুহাম্মদ ইউনূস পাবলিক সার্ভেন্ট কিনা তা তাঁর অপসারণ সংক্রান্ত বিতর্কিত সিদ্ধান্তের মতোই আইনের চোখে এখনও অমীমাংসিত বলে অনেক আইনবিদ মনে করেন। কারণ এবিষয়ে ২০১১ সালের ৫ই মে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের রায়টির রিভিউ পিটিশন এখনও নিষ্পত্তি হয়নি।
ড. ইউনূস পাবলিক সার্ভেন্ট ছিলেন কিনা সেবিষয়ে শেখ হাসিনার দুই আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত দুই অ্যাটর্নি জেনারেল দুইরকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম দাবি করেছেন, ড. ইউনূস আর দশজন সরকারি কর্মকর্তার মতোই একজন। তিনি পাবলিক সার্ভেন্ট মাত্র। আর শেখ হাসিনার প্রথম আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম, যিনি একজন স্বনামধন্য সংবিধান বিশেষজ্ঞ, তিনি ২০১১ সালের মে মাসে আদালতকে বলেছিলেন, তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি ছিলেন ঠিকই কিন্তু তাঁর অবস্থান চাকরিজীবীর ছিল না। 
উল্লেখ্য, অর্থমন্ত্রণালয়ের তরফে  মন্ত্রিসভার জন্য তৈরি করা সারসংক্ষেপে ড. ইউনূসের পাবলিক সার্ভেন্ট হওয়ার বিষয়ে অপ্রতুল তথ্য দেয়া হয়েছে। এতে কোন বিদ্যমান আইনের বরাত দেয়া হয়নি। আপিল বিভাগের শুনানিতে ড. ইউনূসকে পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে দেখাতে সরকার পক্ষের আইনজীবীরা (পররাষ্ট্রমন্ত্রীর স্বামী অন্যতম) কোন আইনের বরাত দেননি। আপিল বিভাগের  রায়ের অথর জজ হিসেবে বিচারপতি এস কে সিনহা মন্তব্য করেন যে, তিনি ‘নির্বাচিত এমডি ছিলেন না ছিলেন নিয়োগপ্রাপ্ত।’ আইনবিদরা বলেন, আদালতের এই রকম অবস্থান খণ্ডিত ও অস্পষ্ট। অথচ মন্ত্রিসভা জেনেছে, আপিল বিভাগের রায়ে ড. ইউনূসকে ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.