নির্বাচনী ফলাফলে যেসব বিষয় প্রভাব ফেলবে by ইকতেদার আহমেদ

বাংলাদেশের যেসব নির্বাচন স্থানীয় শাসন ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত সেগুলো হল- ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন। আমরা সচরাচর স্থানীয় শাসনকে স্থানীয় সরকার বলে থাকি। সংবিধানের ৪র্থ ভাগের ৩য় পরিচ্ছেদে ‘স্থানীয় শাসন’ শব্দ দুটি ব্যবহৃত হয়েছে, যার ইংরেজি অর্থ করা হয়েছে Local Government. Local Government শব্দটির শাব্দিক অর্থ ‘স্থানীয় সরকার’ বিধায় সাধারণ মানুষের কাছে ‘স্থানীয় শাসনে’র স্থলে ‘স্থানীয় সরকার’ শব্দ দুটি ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করেছে। এমনকি স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা সংশ্লেষে যেসব আইন ও বিধি প্রণীত হয়েছে সেসব আইন ও বিধিতে স্থানীয় সরকার শব্দদ্বয় ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন- স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯; স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচন বিধিমালা, ২০১০; স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ) অধ্যাদেশ, ২০০৮; স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ) নির্বাচন বিধিমালা, ২০০৮; স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) আইন, ২০১০; স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) নির্বাচন বিধিমালা, ২০১০ এবং স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এবং স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা, ২০১০। সংবিধানে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, বাংলা ও ইংরেজি পাঠের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাবে। সে নিরিখে সর্বত্র ‘স্থানীয় সরকারে’র পরিবর্তে ‘স্থানীয় শাসন’ শব্দদ্বয়ের ব্যবহার যুক্তিসঙ্গত হয়।
আমাদের দেশে বর্তমানে জাতীয় নির্বাচন বলতে শুধু সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচনকে বোঝায়। সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে গেলে প্রতি ৫ বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়। দেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা বহাল থাকাকালীন রাষ্ট্রপতি সরাসরি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হতেন। তখন রাষ্ট্রপতির নির্বাচনকে জাতীয় নির্বাচন হিসেবে বিবেচনার অবকাশ ছিল। বর্তমান সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি প্রত্যক্ষভাবে জনগণের ভোটের পরিবর্তে সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। নির্বাচন কমিশনকে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে সাংবিধানিকভাবে যেসব দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠান, সংসদ সদস্যদের নির্বাচন অনুষ্ঠান, সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ এবং রাষ্ট্রপতি পদের এবং সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণ।
স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা অথবা সরকার ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের যেসব দায়িত্ব পালন করে থাকে, সেসব দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে স্থানীয় সরকার-সংক্রান্ত বিভিন্ন আইনের অধীনে প্রদান করা হয়েছে। যদিও স্থানীয় সরকার নির্বাচন-সংক্রান্ত ইউনিয়ন পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১০; উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০০৮; পৌরসভা (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১০ এবং সিটি কর্পোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১০Ñ এ চারটির প্রতিটিতে পৃথকভাবে বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিজ ছবি ও প্রতীক ব্যতীত কোনো রাজনৈতিক দলের নাম বা প্রতীক বা কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নাম বা ছবি ছাপাতে কিংবা ব্যবহার করতে পারবেন না, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে আমরা দেখি স্থানীয় সরকারের এ চারটি নির্বাচনে ব্যানার, পোস্টার, লিফলেট ও দেয়াল লিখনে প্রার্থীর নাম ও প্রতীকের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের নাম ও প্রতীক এবং নেতৃবৃন্দের নাম উল্লেখ না থাকলেও সরকারের পদধারী নন এমন অনেক নেতা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করে প্রার্থীর প্রতি দলীয় সমর্থন যে রয়েছে, তা জনসমক্ষে প্রকাশ করে প্রার্থীর পক্ষে দলের সুস্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরেন।
স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার অধীন অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্ট হওয়ার সুযোগ না থাকলেও গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দেখা গেছে, রাজনৈতিক দলের সমর্থনহীন নির্বাচনের সংখ্যা নগণ্য। আরও পরিতাপের বিষয়, বিধিমালা অনুযায়ী স্থানীয় শাসন বা সরকারের যে কোনো নির্বাচনকে রাজনৈতিক রূপ দিলে সেটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং এ অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ৬ মাসের কারাদণ্ড অথবা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে মর্মে বিধিতে বলা হয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত আমাদের কোনো নির্বাচন কমিশন এসব নির্বাচন রাজনৈতিক দলের পরিচিতি পাওয়া সত্ত্বেও এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে কোনো দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছেনÑ এমনটি দেখার সুযোগ দেশবাসীর হয়নি। স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে দেশের প্রধান চারটি রাজনৈতিক দল- আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী আচরণবিধির বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রার্থীর রাজনৈতিক পরিচয়কে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার অবলম্বন হিসেবে ব্যবহার করায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এসব নির্বাচনকে অরাজনৈতিক বলার সুযোগ কোথায়? আর যদি অরাজনৈতিক বলার সুযোগ না থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে আচরণবিধিতে পরিবর্তন এনে এসব নির্বাচন রাজনৈতিক পরিচয়ে অনুষ্ঠিত হওয়াই যথার্থ হবে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ৫টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন যে দলীয় ভিত্তিতে হয়েছে, সে বিষয়ে দেশের সচেতন জনগোষ্ঠীর মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে অনুষ্ঠিত এ ৫টি নির্বাচনের জয়-পরাজয়কে আগামী জাতীয় নির্বাচনের জয় বা পরাজয়ের মাপকাঠি বিবেচনায় দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল এবং উভয়ের স্ব স্ব জোট নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে মরিয়া হয়ে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল। উপরোক্ত ৫টি নির্বাচনের প্রথমোক্ত ৪টি একই দিনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং এ ৪টি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের উল্লেখযোগ্য ভোটের ব্যবধানে পরাজয় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে তাদের নেতৃস্থানীয় অনেককেই শংকিত করে তোলে। সে শংকার বিষয়টি মাথায় রেখে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জনসমর্থন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর অনুকূলে আনার জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের পরও যখন দেখা গেল তাদের প্রার্থী উপরোক্ত ৪টি নির্বাচনের চেয়েও অনেক বেশি ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন, তখন তারা নতুন করে পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধানে ভিন্নধর্মী বিশ্লেষণ শুরু করেছেন।
আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন একাধিক ব্যক্তির কেউ বা এ পরাজয়ের জন্য আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পদে বহাল থাকাকালীন দুর্নীতিকে দায়ী করেছেন, কেউ বা দলীয় সভানেত্রীর সরকারি পদের সঙ্গে সঙ্গতিহীন ও অসৌজন্যমূলক কথাবার্তাকে দায়ী করেছেন, কেউবা জাতীয় নেতাদের সঙ্গে কর্মীদের দূরত্বকে দায়ী করেছেন, কেউ বা উফশী (হাইব্রিড) মন্ত্রী ও নেতাদের অতিকথনকে দায়ী করেছেন, কেউ বা শেয়ারবাজার, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ, পদ্মা সেতু, রেলের কালো বিড়াল, হলমার্ক, ডেসটিনি প্রভৃতি দুর্নীতিকে দায়ী করেছেন। কেউ বা নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নকে দায়ী করেছেন, কেউ বা প্রশাসন, পুলিশ ও বিচার বিভাগসহ সরকারের সব পর্যায়ের দলীয়করণকে দায়ী করেছেন, কেউ বা স্থানীয় শাসন ব্যবস্থার অধীন নির্বাচিত প্রার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের বিরোধকে দায়ী করেছেন, কেউ বা আওয়ামী লীগের ক্রমনিমজ্জিত ভাবমূর্তিকে দায়ী করছেন, কেউ বা আওয়ামী লীগের ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার নির্বাচনী প্রতিশ্র“তি বাস্তবায়নে ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন, কেউ বা দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আপসকামিতাকে দায়ী করছেন, কেউ বা দলীয় কোন্দলকে দায়ী করছেন, কেউ বা দলের ত্যাগী ও জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করছেন, কেউ বা নিকৃষ্টদের পদ-পদবি দিয়ে পুরস্কৃত করে উৎকৃষ্টদের বঞ্চিত করাকে দায়ী করছেন, আবার কেউ বা আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত নেতাদের বদলে বামদের মূল্যায়ন করাকে দায়ী করেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, উপরোক্ত কারণগুলোর যে কোনো একটি পরাজয়ের জন্য বিচ্ছিন্নভাবে দায়ী নয়। বরং পরাজয়ের পেছনে সব কারণেরই কমবেশি ভূমিকা রয়েছে। অনেকের অভিমত, এ পাঁচটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নয়, আওয়ামী লীগেরই পরাজয় ঘটেছে। সে দৃষ্টিকোণ থেকে পরাজয়ের দায় নিরূপণে বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন আমাদের বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের চর্চা নেই। উভয় দলে সভানেত্রী ও চেয়ারপারসনের সিদ্ধান্ত দলীয় সিদ্ধান্ত হিসেবে স্বীকৃত। তাই দলের সাফল্য ও ব্যর্থতার কৃতিত্ব ও দায় বহুলাংশে স্ব স্ব দলের সভানেত্রী ও চেয়ারপারসনের ওপর বর্তায়।
৫টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের শোচনীয় পরাজয়ের পর আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে আক্ষেপ করে বলতে শোনা গেছে, তার সরকারের উন্নয়ন এবং প্রার্থীদের সততা ও যোগ্যতাকে কেন জনগণ মূল্যায়ন করে দেখল না, তা অনুসন্ধান করে দেখতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর এ অনুসন্ধানের উদ্যোগ পরাজয়ে ব্যথিত না হয়ে বরং আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে জয়ের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য হলেও তার অবশ্যই বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন, পরাজয়ের কারণ হিসেবে যেসব বক্তব্য উচ্চারিত হয়েছে তার বিহিত করা ছাড়াও বিচার বিভাগসহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগে জ্যেষ্ঠ, দক্ষ, যোগ্য ও মেধাবীদের অবদমিত করে যেভাবে কনিষ্ঠ, অদক্ষ, অযোগ্য ও দুর্নীতিগ্রস্তদের তথাকথিত দলীয় বিবেচনায় মূল্যায়িত করে লোভনীয় পদ দেয়া হয়েছে, তা ভোটের বাজারে কী ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। প্রধানমন্ত্রী অন্তত সেটুকু বিবেচনায় নিয়ে যদি ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হন, তাহলে বোধকরি ডুবন্ত তরী বহুকষ্টে তীরে পৌঁছে সম্মানহানি থেকে দলকে কিছুটা হলেও রেহাই দেবে। আমাদের রাজনীতিতে দেশের সংখ্যালঘুদের আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু বর্তমানে বাস্তবতা হল, এ ভোটব্যাংক যে কোনো নির্বাচনে বিজয়ের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের পক্ষে যতটা না অবদান রাখছে তার চেয়ে বেশি অবদান রাখছে সম্মিলিতভাবে জামায়াত, হেফাজত ও গ্রামীণ ভোটব্যাংক আওয়ামীবিরোধী শিবিরের বিজয়ের ক্ষেত্রে। আগামী সংসদ নির্বাচনে এ সম্মিলিত ভোটব্যাংক যে জয় নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেবে, সে বিষয়ে নিরপেক্ষ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে কোনো সংশয় নেই।
আমাদের দেশসহ পৃথিবীর সব দেশের জনগণ প্রতিষ্ঠান বিমুখ। আর এ প্রতিষ্ঠান বিমুখতা বড় হয়ে দেখা দেয় একটি দল একবার নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর দ্বিতীয়বার ভোটারদের সম্মুখীন হলে, যখন তারা প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ব্যবধান খুঁজে দেখার চেষ্টা করে। এ প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ব্যবধান ব্যাপক হলে জয়ের আশা যে তিরহিত হয়, তা ইতিপূর্বে একাধিকবার উপলব্ধি করা গেছে। যারা ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে আসছিলেন, নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অভাবনীয় বিজয়ের পর প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, বাম ঘরানার মন্ত্রী, উফশী মন্ত্রী ও নেতা এবং অনির্বাচিত মন্ত্রীদের দৌরাত্ম্য তারা সবাই কোণঠাসা, অবমূল্যায়িত, উপেক্ষিত ও নিষ্পেষিত। এভাবে পরীক্ষিত ও ত্যাগীরা যদি অবহেলিত ও উপেক্ষিত হন, তা যে কোনো দলের জয় নয়, বরং পরাজয়কেই নিশ্চিত করে তোলে। ৫টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তুলনামূলকভাবে অন্তত ৪টির ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা সার্বিক বিচারে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হলেও কেন তারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন, সে হিসাব-নিকাশ করার সময় বোধকরি অত্যাসন্ন। এ হিসাব-নিকাশের ক্ষেত্রে স্ব স্ব জোটের ভোটব্যাংকের বাইরে সর্বাগ্রে বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন স্যুয়িং ভোট (দোদুল্যমান ভোট)। এসব ভোটার নির্বাচনের আগমুহূর্তে বিদায়ী সরকারের শাসনকালের কার্যক্রম পর্যালোচনাপূর্বক ভোটদান বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। আমাদের বড় দুটি রাজনৈতিক জোটের সমর্থকের বাইরে যে স্যুয়িং ভোট রয়েছে তা শতাংশের হিসাবে তাদের সমর্থিত ভোটের চেয়ে বেশি। তাই এ স্যুয়িং ভোট যে দল বা জোটের দিকে যাবে তারাই হবে নির্বাচনে বিজয়ী। এ বাস্তবতায় আগামী সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে ফলাফল কী হবে, ৫টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ফলাফল তারই পূর্বাভাস- এমনটি ভাবা অমূলক নয়।
ইকতেদার আহমেদ : সাবেক জজ ও কলামিস্ট

No comments

Powered by Blogger.