সিরিয়াকে ঘিরে যুদ্ধের ঘনঘটা হামলা হলে পুরো অঞ্চলে আগুন জ্বলবে

রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে আরেকটি যুদ্ধের ঘনঘটা দেখা দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে। বলা যায়, চারদিক থেকে যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে সিরিয়াকে ঘিরে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স।
সাধারণ জনগণের ওপর রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেলে সিরিয়াকে করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। এ নিয়ে শনিবার এই দুই নেতা ৪০ মিনিট ফোনে কথা বলেন। তারপরই তারা সিরিয়ার বিরুদ্ধে ওই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। জবাবে সিরিয়া জানিয়েছে হামলা হলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে আগুন জ্বলবে। ওদিকে সিরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর বিরুদ্ধে আসাদের প্রশাসন হুঁশিয়ারি দিয়েছে। তারাও বলেছে, এমন হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকেও করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে। তবে সিরিয়ায় সামরিক হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে এ অভিযানে এক সঙ্গে যোগ দেবে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও বৃটেন। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক একটি সূত্র বলেছে, তারা ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে পারে এমন নৌযান ভূমধ্যসাগরে বৃদ্ধি করছে। এ নিয়ে সেখানে নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ হবে চারটি। আগে থেকেই ওই অঞ্চলে ছিল তিনটি যুদ্ধজাহাজ। এখন ইউএসএস মেহান এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী সবচেয়ে শক্তিশালী যুদ্ধজাহাজ হলো ইউএসএস হ্যারি এস ট্রুম্যান। গত সপ্তাহে এটি ভূমধ্যসাগর ছেড়ে গেছে। সুয়েজ খাল পার হয়ে অবস্থান নিয়েছে লোহিত সাগরে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেখান থেকেই এ যুদ্ধজাহাজ সিরিয়ায় হামলা করতে সক্ষম। জাহাজটি বিমান বহন করলেও তাতে রয়েছে টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র। এ বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র জর্ডানে পাঠিয়েছে এফ-১৬ যুদ্ধজাহাজ। সেটি এখনও সেখানে অবস্থান করছে। জর্ডান সরকার তাদের সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য এ যুদ্ধবিমানগুলো চেয়েছিল। আরও রয়েছে বড় একটি বিমানঘাঁটি তুরস্কের ইনসারলিতে। ওদিকে পারমাণবিক শক্তিধর বিমানবাহী শার্ল দ্য গল এখন সচল। কর্মকর্তারা বলছেন, এটি এখনও ভূমধ্যসাগরের তুলুন বন্দরে অবস্থান করছে। এছাড়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতে রয়েছে ফ্রান্সের রাফালে ও মিরেজ নামের যুদ্ধবিমানের ঘাঁটি। সেখান থেকেও সিরিয়ায় হামলা চালানো যাবে। তবে সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরু হলে বৃটেন সেখানে বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ পাঠাবে না। তারা এক্ষেত্রে শুধু ব্যবহার করবে ট্রাফালগার ও অস্টাট নামের সাবমেরিন। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যদি প্রয়োজন হয় তাহলে এ সাবমেরিন যুক্ত করবে বৃটেন। প্রতিরক্ষা বিষয়ক সূত্রগুলো বলেছেন, সিরিয়ায় হামলার প্রয়োজন হতে পারে এমন আশঙ্কায় আগে থেকেই ভূমধ্যসাগরে রাখা হয়েছে রাজকীয় নৌবাহিনীর কমপক্ষে একটি সাবমেরিন। গত বুধবার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের বাইরে একটি এলাকায় রাসায়নিক অস্ত্র (এক রকমের বিষাক্ত গ্যাস) ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরোধীরা অভিযোগ করেছে, এ হামলা করেছে সরকার। এতে কয়েক হাজার মানুষ মারা গেছে। তার মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। তবে বাশারের সরকার উল্টো বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ এনেছে। সিরিয়ার বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগে সামরিক শক্তি ব্যবহার না করতে পশ্চিমাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তার প্রশাসন। তারা বলেছে, সিরিয়ার বিরুদ্ধে কোন সামরিক পদক্ষেপ নেয়া হলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে আগুন জ্বলে উঠবে। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনের ডাউনিং স্ট্রিট থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দামেস্কে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের স্থানে অনতিবিলম্বে জাতিসংঘ তদন্ত কর্মকর্তাদের ঢোকার অনুমতি দিতে নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রেসিডেন্ট আসাদ সরকার জাতিসংঘের সঙ্গে সহযোগিতা করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে সেখানে লুকানোর মতো অবশ্যই কিছু রয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ক্যামেরন-ওবামা দু’জনেই বলেছেন রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকলে এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের গুরুত্বের সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণের যথেষ্ট কারণ থাকবে। দু’জনই কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে সব ধরনের বিকল্প বিবেচনার নির্দেশ দিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দু’নেতাই রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার এবং এ থেকে ভবিষ্যতের সমস্যা প্রতিহত করতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এ নিয়ে দু’জনেই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখবেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। ক্যামেরনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার আগে প্রেসিডেন্ট ওবামা সিরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, সিরিয়ার প্রকৃত পরিস্থিতি নিরূপণের জন্য প্রেসিডেন্ট ওবামা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে সিরিয়ার তথ্যমন্ত্রী ওমরান আল জৌবি কোন মার্কিন হামলার আশঙ্কা নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এ ধরনের হামলা হলে গোটা অঞ্চলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে। লেবানন ভিত্তিক আল মায়াদিন টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সিরিয়ায় হামলা হলে সেই আগুনের গোলা কেবল সিরিয়া নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যকেই পোড়াবে। সিরিয়ার সামরিক হামলা কোন সহজ বিষয় হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়া, তেহরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্বাস আরাকজিও মার্কিন সামরিক হামলার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এতে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করবে। ইরানের আরবি ভাষার টেলিভিশন চ্যানেল আল আলমকে তিনি বলেছেন, সেনাবাহিনী পাঠানো হলে সমস্যার কোন সমাধান হবে না। বরং পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক সমর্থন থাকবে না। ওদিকে সিরিয়ায় যখন যুদ্ধের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে তখন সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের বিরোধী অনেক মার্কিনি। তারা মনে করেন, সিরিয়া রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে থাকলেও এ থেকে ওয়াশিংটনকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স/ইপসোস জরিপে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এতে দেখা গেছে, জরিপে অংশ নেয়া শতকরা ৬০ ভাগ মার্কিনি সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ চায় না। মাত্র ৯ ভাগ মার্কিনি চায় যুক্তরাষ্ট্র সেখানে হস্তক্ষেপ করুক। ওদিকে সিরিয়া ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নিতে প্রেসিডেন্ট ওবামা দ্বিধাগ্রস্ত বলে অভিযোগ করেছেন অনেক মার্কিন কর্মকর্তা ও বিদেশ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ। তার মধ্যে রয়েছেন রিপাবলিকান দলের সিনেটর জন ম্যাককেইন।

No comments

Powered by Blogger.