মার্টিন লুথার কিংয়ের স্বপ্ন ও আজকের যুক্তরাষ্ট্র by তারেক শামসুর রেহমান

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে যারা অতীতে কাজ করেছেন, তাদের মধ্যে শীর্ষে ছিলেন মার্টিন লুথার কিং। আজ ২৬ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র তাকে আবার স্মরণ করবে। ১৯৬৩ সালের ২৬ আগস্ট ওয়াশিংটনের লিংকন মেমোরিয়াল প্রাঙ্গণে মার্টিন লুথার কিং তার সেই বিখ্যাত ভাষণটি দিয়েছিলেনÑ ‘ও যধাব ধ ফৎবধস’, আমার একটি স্বপ্ন। তার সেই ভাষণের ৫০ বছর পালন করবে যুক্তরাষ্ট্র। ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে। প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষের উপস্থিতিতে দেয়া মার্টিন লুথার কিংয়ের সেই ভাষণের কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? মার্টিন লুথার কিং যেন একজন কবি! কবিতার ভাষায় বলছেন তার স্বপ্নের কথা। বলছেন, একদিন কৃষ্ণাঙ্গরা, যারা দাস হিসেবে এ দেশে এসেছিলেন, তাদের সন্তানরা এবং শ্বেতাঙ্গরা সবাই মিলে এ দেশকে গড়ে তুলবে। হাতে হাত রেখে একসঙ্গে বেড়ে উঠবে। এই একটি ভাষণের জন্য মার্টিন লুথার কিং ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছেন। তার নাম আজ একই সঙ্গে উচ্চারিত হয় জর্জ ওয়াশিংটন, জেফারসন কিংবা লিংকনের সঙ্গে। সেই বিখ্যাত ভাষণের ৫০ বছর পর টাইম ম্যাগাজিন তাকে নিয়ে প্রচ্ছদ করেছে (আগস্ট ২৬, ২০১৩)। তাকে বলা হচ্ছে ‘একুশ শতকের রূপকার’। তাকে নিয়ে লিখেছেন অনেকেইÑ জেসি জ্যাকসন, কলিন পাওয়েল থেকে শুরু করে মালালা ইউসুফজাই পর্যন্ত। মালালা লিখেছে, কীভাবে মার্টিন লুথার কিংয়ের সেই বিখ্যাত উক্তি তাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। অহিংস পথে লুথার কিং কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আদায় করতে চেয়েছিলেন। বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করা মার্টিন লুথার কিং ১৯৫৯ সালে ভারতেও এসেছিলেন গান্ধীর অহিংস নীতি সম্পর্কে ধারণা নিতে। অহিংস পন্থায় অধিকার আদায়ে তার এই সংগ্রামের প্রতি সম্মান জানিয়ে তাকে শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছিল ১৯৬৪ সালে। শুধু তাই নয়, ১৯৭৭ সালে তাকে মরণোত্তর ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল ফর ফ্রিডম’ এবং ২০০৪ সালে ‘কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল’ দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য মার্কিন জাতিরÑ যিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ আর শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না, সবাই একসঙ্গে মিলে যুক্তরাষ্ট্রকে গড়ে তুলবে, তাকেই কিনা শ্বেতাঙ্গ জেমস আর্ল রয়ের গুলিতে প্রাণ দিতে হয় ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল।
মার্টিন লুথর কিং জীবদ্দশায় বৈষম্য কমিয়ে আনার সংগ্রাম করলেও এবং জীবন দিলেও মার্কিন সমাজে বৈষম্য কি কমেছে? ১৯৬৩ সালের বিখ্যাত ‘মার্চ অন ওয়াশিংটনে’র পর ৫০ বছর পার হতে চলেছে। কিন্তু বৈষম্য পুরোপুরি দূর হয়েছে, এটা বলা যাবে না। তবে নিঃসন্দেহে কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে। ১৯৬০ সালে মোট জনগোষ্ঠীর মধ্যে কৃষ্ণাঙ্গ যেখানে ছিল শতকরা ১১ ভাগ, এখন তা বেড়ে হয়েছে ১৪ ভাগ। ১৯৬০ সালে প্রায় ১৫৫ মিলিয়ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে কৃষ্ণাঙ্গ ছিল ১৭.০৫ মিলিয়ন। এখন ২৫১ মিলিয়ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে কৃষ্ণাঙ্গ ৪৫ মিলিয়ন। তারা সবচেয়ে বড় এথনিক গ্র“প নয়। বর্তমানে মার্কিন জনগোষ্ঠীর বড় অংশ হচ্ছে লাতিনো অথবা হিসপানিক, ৫৪ মিলিয়ন। শিক্ষাক্ষেত্রে দেখা গেছে ১৯৬৭ সালে স্কুল ত্যাগকারী কৃষ্ণাঙ্গদের হার যেখানে ছিল শতকরা ২৯ ভাগ, ২০১১ সালে তা কমে এসে দাঁড়ায় ৭ ভাগে। অথচ একই সময় শ্বেতাঙ্গদের স্কুল ত্যাগের হার ছিল ১৫ ভাগ (১৯৬৭), আর এখন ৫ ভাগ। ১৯৬০ সালে কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে ব্যাচেলর ডিগ্রি গ্রহণকারীদের হার ছিল ৪ ভাগ (শ্বেতাঙ্গ ৮ ভাগ), ২০১২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২১ ভাগ, আর শ্বেতাঙ্গদের এ হার ৩৫ ভাগ। তবে কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতার হার বেশি। পরিসংখ্যান বলে, কারাগারে অবস্থানকারী কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর হার ৩৭ ভাগ, এর মধ্যে ৪২ ভাগ আবার মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত। কিশোর অপরাধীর হার (কৃষ্ণাঙ্গ) শতকরা ৩২ ভাগ। পরিসংখ্যান বলে, কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার কমেছে। ১৯৬০ সালের মাঝামাঝি কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার যেখানে ছিল শতকরা ৪১ ভাগ, সেখানে বর্তমানে এই হার ২১ ভাগ। অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে মেইন-এ কৃষ্ণাঙ্গদের মাঝে বেকারত্বের হার বেশি, শতকরা ২১ ভাগ, আর দারিদ্র্যের হারও বেশি ৪৬ ভাগ। মিসিসিপি যুক্তরাষ্ট্রের দরিদ্রতম রাজ্য। অথচ সেখানে শতকরা ৫৭ ভাগ কৃষ্ণাঙ্গের নিজস্ব বাড়ি রয়েছে। নিউইয়র্কে সবচেয়ে বেশি কৃষ্ণাঙ্গ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, এ সংখ্যা ২,০৪০৩২। আয়ের মধ্যেও পার্থক্য রয়েছে। কৃষ্ণাঙ্গদের গড় আয় যেখানে বছরে ২১ হাজার ডলার, সেখানে শ্বেতাঙ্গদের আয় ২৭ হাজার ডলার। চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে কৃষ্ণাঙ্গরা এখনও পিছিয়ে আছে। ২০১৩ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, যেখানে শতকরা ৭ জন শ্বেতাঙ্গ বেকার, সেখানে কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এ হার শতকরা ১৫ জন। এই পরিসংখ্যান শুধু পুরুষদের জন্য। কৃষ্ণাঙ্গ মহিলাদের মধ্যে বেকারত্বের হার শতকরা ১৩ ভাগ। ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গের মধ্যে বেকারত্বের হার ২৩ ভাগ। আর ৬০ থেকে ৬৪ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গের মধ্যে বেকারত্বের হার মাত্র ৯ ভাগ। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দেখা গেছে শতকরা মাত্র ৭ ভাগ ব্যবসা রয়েছে কৃষ্ণাঙ্গদের নিয়ন্ত্রণে (২০০৭ সালের হিসাব অনুযায়ী)। যদিও ১৯৬১ সালের হিসাব অনুযায়ী এ সংখ্যা তিনগুণ বেশি। তবে নিজস্ব বাড়ি নেই অনেক কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানের। পরিসংখ্যান বলছে, শতকরা ৭০ ভাগ শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান যেখানে নিজস্ব বাড়ির মালিক, সেখানে শতকরা মাত্র ৪৫ ভাগ কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানের নিজস্ব বাড়ি রয়েছে। ১৯৬০ সালে একজন কৃষ্ণাঙ্গ বেঁচে থাকতেন গড়ে ৫০ বছর। এখন বাঁচেন ৭২ বছর। তুলনামূলকভাবে শ্বেতাঙ্গদের বেঁচে থাকার গড় ৭৭ বছর (১৯৬০ সালে ৬৮)। তবে শ্বেতাঙ্গ মহিলারা বাঁচেন বেশি দিন, ৮১ বছর (কৃষ্ণাঙ্গ মহিলারা ৭৮ বছর)। স্বাস্থ্য সচেতনতার দিক থেকে কৃষ্ণাঙ্গরা যে কতটা পিছিয়ে আছে, তা জানা যায় আরেকটি পরিসংখ্যান থেকে। প্রতি এক লাখ আমেরিকানের মধ্যে ২৩৩ জন কৃষ্ণাঙ্গ যেখানে মারা যায় হƒদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে, সেখানে শ্বেতাঙ্গ মারা যায় ১৮২ জন। ডায়াবেটিস, ব্রেস্ট ক্যান্সার, আÍহত্যার ক্ষেত্রে এই সংখ্যা যথাক্রমে ৪০, ১৮ ও ৫ জন (কৃষ্ণাঙ্গ) এবং ১৯, ১২ ও ১৩ জন (শ্বেতাঙ্গ)। এখানে শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে আÍহত্যার প্রবণতা বেশি। প্রশাসনে ও রাজনীতিতেও বড় ধরনের বৈষম্য রয়েছে। ১৯৬৩ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, কংগ্রেসের হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভে (মোট সদস্য ৪৩৫ জন) মাত্র ৫ জন সদস্য ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ। একজনও সিনেটর ছিলেন না (মোট সদস্য ১০০ জন)। ৫০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্র কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্য থেকে ৪৩ জন হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভের সদস্য পেয়েছে, একজন সিনেটর পেয়েছে, একজন প্রেসিডেন্ট পেয়েছে। যদিও বারাক ওবামাকে পুরোপুরি কৃষ্ণাঙ্গ বলা যাবে না। ওবামার মা ছিলেন শ্বেতাঙ্গ, আর বাবা আফ্রো-আমেরিকান (কেনিয়ান)।
এই পরিসংখ্যান কতটুকু আশার কথা বলে? মাটির্ন লুথার কিংয়ের স্বপ্ন কতটুকু পূরণ হয়েছে? মার্কিন সমাজে এখন কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে যে বৈষম্য নেই, তা বলা যাবে না। দৃষ্টিভঙ্গিগতভাবেও পার্থক্য রয়েছে। আগস্টের প্রথম দিকে সিমারম্যান নামে এক কিশোরের মৃত্যুর ঘটনায় (নিউইয়র্ক) অভিযুক্ত একজন শ্বেতাঙ্গ নাগরিককে অভিযুক্ত করেনি জুরি বোর্ড। অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রকাশ্যে গুলি করে মেরেছিল কৃষ্ণাঙ্গ কিশোরকে। তারপরও তাকে অভিযুক্ত করা হয়নি। এ ঘটনায় মার্কিন সমাজে বৈষম্যের বিষয়টি আবার সামনে চলে এসেছে। টাইম ম্যাগাজিন একটি জরিপ পরিচালনা করেছে। তাতেও কিছু তথ্য বেরিয়ে এসেছে। জরিপে দেখা গেছে, শতকরা ৫ জন কৃষ্ণাঙ্গ উত্তরদাতা সিমারম্যানের বিচারের ঘটনায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। অথচ শতকরা ৪৯ জন শ্বেতাঙ্গ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তারা সন্তুষ্ট। প্রশ্ন করা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। শতকরা ৬৮ জন কৃষ্ণাঙ্গ উত্তরদাতা মনে করেন, বিচার বিভাগ কৃষ্ণাঙ্গদের ব্যাপারে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’। শতকরা ২৫ জন শ্বেতাঙ্গ তা মনে করেন না। ৫৩ জন কৃষ্ণাঙ্গ মনে করেন, জনসাধারণের অধিকার সংক্রান্ত আইনে আরও পরিবর্তন দরকার, যাতে বৈষম্য কমানো যায়। ১৭ ভাগ শ্বেতাঙ্গ অবশ্য তা মনে করেন না।
সুতরাং যে ‘স্বপ্নের’ কথা মার্টিন লুথার কিং শুনিয়েছিলেন, তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়েছে, তা বলা যাবে না। অগ্রগতি কিছুটা হয়েছে, এটা অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু এখনও যেতে হবে অনেক দূর। একদিন যে ‘কালো মানুষ’রা এ দেশে দাস হিসেবে এসেছিল, তারা, তাদের পরবর্তী প্রজš§ এখনও মূলধারায় পুরোপুরিভাবে মিশে যেতে পারেনি। ইতিহাস বলে ১৬২০ থেকে ১৭০০ সালের মধ্যে ২১ হাজার কৃষ্ণাঙ্গকে ক্রীতদাস হিসেবে আফ্রিকা থেকে মার্কিন মুল্লুকে আনা হয়েছিল। ভার্জিনিয়ার জেমসটাউনে হল্যান্ডের দাস ব্যবসায়ীরা প্রথম ১৯ জন দাসকে এনেছিল তামাক ক্ষেতে কাজ করানোর জন্য। সময়টা ১৬১৯। সেই থেকে শুরু। তারপর অনেক সময় পার হয়ে গেছে। ১৮৬০ সালে আব্রাহাম লিংকন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দাস ব্যবস্থা বন্ধের উদ্যোগ নেন। আর ১৮৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৩তম সংশোধনীর মাধ্যমে দাস ব্যবস্থা নিষিদ্ধ হয়। তবে এটা তো ঠিক, ১৭৭৬ সালের যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রে দাস ব্যবস্থা স্বীকৃত ছিল। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, প্রায় ৪০ লাখ মানুষ আফ্রিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিল, যাদের দাস হিসেবে ‘বিক্রি’ করা হয়েছিল। ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা এই দাস পরিবারেরই সন্তান। মার্কিন লুথার কিং ‘আধুনিক কালের দাসদের’ মুক্ত করতে চেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন কালো মানুষদের স্বীকৃতি। চেয়েছিলেন কালো মানুষদের সামাজিক নিরাপত্তা। চেয়েছিলেন সাদা আর কালো মানুষদের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না। সবাই সমান, সবাই এক- যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে এই সমতা আর ভ্রাতৃত্ববোধের কথাই বলা হয়েছে। তবে ‘একতা আর অধিকারে’র যে আহ্বান মার্টিন লুথার কিং ১৯৬৩ সালে জানিয়েছিলেন, তার পূর্ণ বাস্তবায়ন আজও হয়নি। তাই অধিকার আন্দোলনের অপর নেতা জেসি জ্যাকসনের ভাষায় বলতেই হয়, ‘ডব’াব মড়ঃ ঃড় শববঢ় সধৎপযরহম’। আন্দোলন চলবেই।
হাইল্যান্ড ভিলেজ, ডালাস, যুক্তরাষ্ট্র থেকে
ড. তারেক শামসুর রেহমান : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.