জামায়াত মৌলিক বিষয়ে কম্প্রোমাইজ করবে না: ডা. তাহের by জাকারিয়া পলাশ

জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম নীতিনির্ধারক, সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, আমরা নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী মৌলিক বিশ্বাসের বাইরে গঠনতন্ত্রে কিছু সংশোধনের চিন্তা করছি।
তবে মৌলিক বিশ্বাসে জামায়াত কোন কম্প্রোমাইজ করবে না। করার সুযোগ নেই। হাইকোর্টে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের পর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এ কথা বলেন। দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধ চেয়ে এরইমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়েছে।

ডা. তাহের বলেন, জামায়াতে ইসলামীর ওপর বিভিন্ন সময়ে নানা রকম বাধা ও চ্যালেঞ্জ এসেছে। সবসময়ই জামায়াত আইনিভাবে এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে তা মোকাবিলা করে এসেছে এবং বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু এবারে জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার মাস্টারপ্ল্যান করেছে বিরোধী পক্ষ। আমাদেরকে আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েই তারা এই পথ বেছে নিয়েছে। গত কয়েক বছরে আমাদের দল ও নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে, চরিত্র হনন করে, হত্যা করে, হামলা, মামলা, গুলি করে আাসছে। এখন বিগত যে কোন সময়ের চেয়ে আমাদের উপর নির্যাতনের মাত্রা বেশি। জামায়াতের বিরুদ্ধে তাদের হামলা সর্বগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে। আমরা সহিংস কোন পথে বিশ্বাস করি না। নিয়মতান্ত্রিকভাবেই আমরা আন্দোলন ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাব।
জামায়াতের মাঝে কোন সংস্কার হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জামায়াত দলের অভ্যন্তরে সবসময়ই গণতন্ত্র চর্চা করে আসছে। গঠনতন্ত্র অনুসারে মজলিশে শুরার অধিবেশনে দলের নেতা নির্বাচনের জন্য ৩ জনের একটি প্যানেল নির্বাচন করার নিয়ম রয়েছে।  ওই প্যানেলের মধ্য থেকে দলের সকল রুকন (সদস্য) এর ভোটে একজনকে ৩ বছরের জন্য আমীর নির্বাচন করা হয়। ২০০৯ সালে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে দলের আমীর হিসেবে সর্বশেষ নির্বাচন করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুসারে তার ৩ বছর মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনতো আমরা মজলিশে শুরার মিটিং করতে পারছি না। আমরা এমনকি তিনজনও একত্রে বসতে পারছি না। এই জরুরী পরিস্থিতিতে বিদ্যমান সাংগঠনিক কাঠামোই পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে- এমন একটি সংশোধন এনেছি গঠনতন্ত্রে। সুতরাং নেতৃত্বে পরিবর্তনের কোন অবস্থা এই মুহূর্তে নেই।
জামায়াতের বিভিন্ন কর্মসূচিতে ছাত্র শিবিরকে পুরোভাগে দেখা যাচ্ছে। এটা আগামীতে ছাত্র শিবিরকে দিয়ে নতুন কোন সংগঠনিক কাঠামো গঠিত হওয়ার ইঙ্গিত বহন করে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে শিবিরের সাবেক এই সভাপতি বলেন, না। এমন কোন সম্ভাবনা নেই। ছাত্রশিবির বাস্তবভাবে জামায়াত থেকে সম্পূর্ণ আলাদা সংগঠন। কখনওই ছাত্র শিবির জামায়াতের অঙ্গসংগঠন ছিল না। আদর্শিকভাবে তারা একই উদ্দেশ্যের অনুসারী। বর্তমানে যেসব কার্যক্রম চলছে তা শুধু জামায়াতের বিরুদ্ধে নয়। সকল ইসলামী শক্তির বিরুদ্ধেই এই ভূমিকা নিচ্ছে সরকার। তাই ইসলামী সংগঠন হিসেবে শিবির জামায়াতের কর্মসূচিতে সমর্থন বা অংশগ্রহণ করছে। সুতরাং শিবিরকে দিয়ে আলাদা সংগঠন করার কোন সম্ভাবনা নেই।
বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক ইসলামের সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সংঘাতের কারণ কি এমন প্রশ্নে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, রাজনৈতিক ইসলামই আসলে মূলধারার ইসলামী আন্দোলন। সারা বিশ্বেই এই রাজনৈতিক শক্তি জনসম্পৃক্ততা, জনসেবার মাধ্যমে অধিকাংশ মানুষের সমর্থন নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে চায়। মিশরে ইখওয়ানুল মুসলিমুন, তিউনিসিয়ায় আন নাহাদা পার্টি, তুরস্কে জাস্টিস এন্ড ডেভলপমেন্ট পার্টিসহ সবদেশেরই ইসলামী সংগঠনগুলোর মধ্যে মৌলিক কোন পার্থক্য নেই। এবং অধিকাংশ দেশেই ইসলামী এই শক্তি রাজনীতির প্রধান বা মুখ্য শক্তিতে পরিণত হয়েছে। যা গত ১০-১৫ বছর আগে কোথাও দেখা যায় নি। এ জন্যই এখন বিশ্বব্যাপী ইসলামী আন্দোলনের উপর এই নির্যাতন শুরু হয়েছে। গাছ বড় হলে বাতাস বেশি লাগে। তাই ঝড়ের আঘাতও বেশি সহ্য করতে হয়। তবে জামায়াতে ইসলামীসহ সব দেশের ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর নন ভায়োলেন্ট ওয়েতে, নিয়মতান্ত্রিকভাবেই রাজনীতি করছে বলে দাবি করেন ডা. তাহের।
মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ’৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী ছিল পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী। তখন তারা পাকিস্তানের বিভাজনের পক্ষে ছিল না। রাজনৈতিকভাবে পাকিস্তান বিভাগের বিরোধীতা করছে। কিন্তু ’৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরের পর থেকে জামায়াতে ইসলামী কখনওই বাংলাদেশের বিরোধীতা করেনি। কিছু ব্যক্তি ছাড়া কেউই জামায়াতে ইসলামীকে দেশবিরোধী মনে করেন না। এমনকী এখন যদি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব কিংবা স্বাধীনতার উপর কোন আঘাত আসে বা আগ্রাসন হয় তাহলে জামায়াতে ইসলামী সবার আগে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেবে। কিন্তু জামায়াতের নেতাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনে চরিত্রহনন করা হয়েছে তা মিথ্যাচার। তাদের বিরুদ্ধে সেই সময় থেকে এমন কোন অভিযোগ কেউ করে নি। সুতরাং দায় স্বীকারের প্রশ্ন ওঠার কথা নয়।

No comments

Powered by Blogger.