দক্ষিণ আফ্রিকায় ওবামার সফর নিয়ে উত্তাপ নেই

দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ সরকারের শোষণের বিরুদ্ধে কৃষ্ণাঙ্গরা যে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, জোহানেসবার্গের সোয়েটো ছিল তার প্রাণকেন্দ্র। সেই সোয়েটোয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উপস্থিতি সত্যিকার অর্থেই ঐতিহাসিক ঘটনার মর্যাদা পেতে পারত। কিন্তু তা হলো না। ওবামার উপস্থিতি নিয়ে সোয়েটোর মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাস-উন্মাদনা দেখা তো গেলই না, বরং সেখানে একদল বিক্ষোভকারী ওবামার পররাষ্ট্রনীতির নিন্দা জানিয়ে স্লোগান দিল। অবশ্য সোয়েটোর রাজপথ দিয়ে জোহানেসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রশ্নোত্তর পর্বে যোগ দিতে যাওয়ার সময় ওবামাকে সেই বিক্ষোভের দৃশ্য দেখতে হয়নি। তাঁর গাড়িবহর আসার আগেই পুলিশ শব্দ গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের তাড়িয়ে দেয়। ওবামার সফরের ব্যাপারে আফ্রিকার মানুষের উদাসীনতা দেখানোর একটা কারণ হতে পারে, তারা হোয়াইট হাউসে কয়েক বছর ধরে কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্টের উপস্থিতি দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। আফ্রিকার বহু মানুষ আবার মনে করে, ওবামা আলাদা ধরনের কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট নন। আগের প্রেসিডেন্টদের মতো একই নীতি মেনে চলছেন তিনি। সোয়েটোর এক তরুণ যেমন বললেন, ‘অন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে ওবামার কোনো পার্থক্য নেই। যুক্তরাষ্ট্র এখনো আগের মতোই অন্য দেশগুলোর ওপর তার আদেশ-নিষেধ চাপিয়ে যাচ্ছে।’ অবশ্য এমন অনেককে পাওয়া গেছে, যাঁরা ওবামাকে পছন্দ করেন। ৪০ বছর বয়সী অ্যালেক্স মোটলুং ওবামাকে এক নজর দেখার জন্য সোয়েটোর রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু ওবামার গাড়িবহর এত দ্রুত চলে গেল যে গাড়ির কাচ ভেদ করে দৃষ্টি সে পর্যন্ত পৌঁছাতে পারল না। এর আগে প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার সঙ্গে বৈঠক করার পর যে যৌথ সংবাদ সম্মেলন হয়, তাতে জুমা প্রেসিডেন্ট ওবামাকে নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে তুলনা করে বসলেন। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও দেখা গেছে। অনেকে বলছেন, দেশের মানুষের জন্য ২৭ বছর জেল খাটা ম্যান্ডেলার সঙ্গে ওবামার তুলনা করা বাতুলতামাত্র। আবার অ্যালেক্স মোটলুংয়ের মতো অনেকে মনে করেন, ওবামার অর্জন ম্যান্ডেলার অর্জনকেও ছাড়িয়ে গেছে। মোটলুং বলেন, ওবামা প্রমাণ করেছেন যে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়, এমনকি কৃষ্ণাঙ্গ হয়েও একটি শ্বেতাঙ্গপ্রধান দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়া সম্ভব। উল্লেখ্য, দুজনই নিজ নিজ দেশের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। অনেক বিশ্লেষকের মতে, কেনীয় বংশোদ্ভূত হওয়া সত্ত্বেও ওবামা ‘স্বভূমি’ আফ্রিকার জন্য তেমন কিছুই করেননি। তাঁরা বলছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে এখন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরালো করা বেশি জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.