চার সিটি নির্বাচনে ইসির দুর্বল ভূমিকা by মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার

ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিনের জরুরি শাসনামলে গঠিত ড. হুদা নির্বাচন কমিশন ২০১২ সালের ফেরুয়ারি মাসে পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ করার পর মহাজোট সরকার কর্তৃক কাজী রকিব কমিশন গঠিত হয়। এ কমিশন গঠনকালে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন তৈরির সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কমিশনকে অধিকতর স্বাধীন ও শক্তিশালী করতে সরকার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। এর পরিবর্তে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে কমিশন গঠন করেছে। ওই অনুসন্ধান কমিটিতে সুশীল সমাজের সদস্য বা কোনো গণনির্বাচিত প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত না করে সরকারের বেতনভূক কিছু কর্মকর্তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কাজেই অনুসন্ধান কমিটি বা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলের লোক দেখানো আলোচনার একটি প্রয়াস দেখানো হলেও বাস্তবে নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগে সরকারের ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটে। কারণ চলমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতির পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ উপেক্ষা করে কাজ করা সম্ভব হয় না।
চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের সোয়া বছর আগে ক্ষমতাসীন হয়ে কাজী রকিব কমিশন স্বাধীনভাবে পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতে পারেনি। প্রথমত, এ কমিশন পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট হওয়ায় কাজ শুরু করার পর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত নিতে কমিশন সদস্যদের মধ্যে ঐকমত্যের সমস্যা হয়। কোনো রাজনৈতিক দল বা ভোটারদের দাবি না থাকা সত্ত্বেও সাবেক হুদা কমিশন ইভিএমে নির্বাচন করার যে পরিকল্পনা করে, সে বিষয়টির কথাই ধরা যাক। রকিব কমিশনের সামনে প্রথমেই সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে কিনা সে সিদ্ধান্তটি জরুরি হয়ে দেখা দেয়। ড. হুদা কমিশন চেয়েছিল, নতুন কমিশন তাদের কাজের ধারাবাহিকতা এগিয়ে নেবে। কিন্তু যেহেতু হুদা কমিশন সুনামের সঙ্গে কাজ করতে পারেনি (ওই কমিশনের বিরুদ্ধে বিএনপির সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করে ওই দলটিকে ভাঙা এবং পরে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়া, বিতর্কিত ইভিএম মেশিনে ভোট গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং তিন মাসের সময়সীমা ভেঙে দুই বছর ক্ষমতায় থাকা ফখরুদ্দীন সরকারের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ ছিল), সে কারণেই হয়তো রকিব কমিশন হুদা কমিশনের সবকিছু মেনে নেয়নি। এর পরিবর্তে নতুন কমিশন হুদা কমিশনের কিছু কাজে দুর্নীতির উপস্থিতি পেয়ে ওই প্রকল্পগুলো বাতিল করে জনগণের আস্থা অর্জন করার চেষ্টা করে।
ড. হুদা কমিশন আন্তরিকভাবে চেয়েছিল যাতে রকিব কমিশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। কিন্তু ইসির পাঁচ সদস্যের মধ্যে ঐকমত্য না থাকায় কমিশন এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। বিষয়টি খুবই জরুরি ছিল। কারণ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে হলে তার জন্য দীর্ঘ পূর্বপ্রস্তুতি ও ব্যাপক অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন হয়। কিন্তু ক্ষমতায় আসার কিছুদিন পর এ ব্যাপারে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সিইসি ৫ মার্চ সাংবাদিকদের বলেন, সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত বর্তমান কমিশন গ্রহণ না করলেও সব রকম প্রস্তুতি রাখা হবে, যাতে নির্বাচনের আগে এ নিয়ে কোনো ঝামেলা না হয়। সিইসির ওই বক্তব্য থেকে অনুধাবন করা যায়, নির্বাচন কমিশন ইভিএম ব্যবহার প্রসঙ্গে তখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেনি। ইভিএমে নির্বাচনের সঙ্গে যেখানে ব্যাপক আর্থিক খরচ জড়িত, সেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগেই ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তুতি গ্রহণ করে পরে ইভিএমে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে যে বিশাল আর্থিক ক্ষতি হবে, তার দায়িত্ব কে নেবে- সে সম্পর্কে ওই সময় সিইসি কোনো ব্যাখ্যা দেননি।
পরবর্তীকালে ক্ষমতায় আসার চার মাস পর ২০১২ সালের ২২ জুন নির্বাচন কমিশন ইভিএম প্রসঙ্গে আরও বৈঠক ও আলাপ-আলোচনা করে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এ রকম একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও রকিব কমিশন ড. হুদা কমিশনের প্রভাববলয় থেকে বের হতে পারেনি। কারণ তা না হলে জুন মাসের সিদ্ধান্ত ভুলে গিয়ে ১৬ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী দশম সংসদ নির্বাচনে আংশিকভাবে ইভিএম ব্যবহার হতে পারে বলে আবারও জানাতেন না। তিনি বলেন, ‘বিগত কমিশন ইভিএম নিয়ে যে সূচনা করেছিল, তাদের লক্ষ্য ও আমাদের লক্ষ্য এক। জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের কথা বিগত কমিশনও বলেনি। বিধিবিধানও করেনি। বলা হয়েছিল, স্থানীয় সব পর্যায়ে ইভিএম চালু করার পর মানুষ অভ্যস্ত হলে সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে।’ রকিব কমিশন জানত যে, নাসিক নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারকারী কেন্দ্রগুলোর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সদরের ২১টি, সিদ্ধিরগঞ্জের ১১টি এবং বন্দরের ৬টি ভোটকেন্দ্রে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট নষ্ট হয়েছিল। কমিশন এও জানত, বাংলাদেশী ইভিএমগুলো এর প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বুয়েট ছাড়া অন্য কোনো সমজাতীয় দেশী বা বিদেশী গবেষণা প্রতিষ্ঠান দিয়ে পরীক্ষা করানো হয়নি। দেশেও বিরোধী দল থেকে যারা এ ইভিএম হ্যাকপ্র“ফ নয় দাবি করে এ ইভিএম কিভাবে হ্যাক করা সম্ভব তা প্রমাণের সুযোগ চেয়েছিলেন, তাদের সে সুযোগ দেয়া হয়নি। এমন অনিশ্চয়তা ও জটিলতার মধ্যেও কাজী রকিব কমিশন সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে অনুষ্ঠিত যুগোপৎ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের জন্য অ্যাসিড টেস্ট হিসেবে বিবেচিত চারটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কেন আবার আংশিক ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিল, তা বোধগম্য নয়।
চার সিটি নির্বাচনে আংশিক ইভিএম ব্যবহার করতে গিয়ে কমিশনকে বিভিন্নমুখী জটিলতায় পড়তে হয়। বরিশালে পলিটেকনিক কলেজ কেন্দ্রে নির্বাচনী কর্মকর্তারা ইভিএম কার্ড খুলে ফেলায় ভোটারদের মধ্যে ভোট নষ্ট হওয়ার আশংকা তৈরি হয়। রাজশাহীর টিটি কলেজ কেন্দ্রের ছয়টি বুথের একটি বুথে গৃহীত ৩১০টি ভোট গণনা করতে না পেরে ওই বুথের ভোট বাদ দিয়েই প্রিসাইডিং অফিসারকে কেন্দ্রের নির্বাচনী ফলাফল হিসাব করে দু’সপ্তাহ পর ২৯ জুন ওই কেন্দ্রে সাধারণ কাউন্সিলর পদের জন্য ইভিএমের পরিবর্তে ব্যালট পদ্ধতিতে পুনরায় ভোট গ্রহণ করতে হয়। এ রকম যে হবে, তা অনেক আগেই অনুমিত হয়েছিল। নারায়ণগঞ্জের ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে কমিশনের উচিত ছিল চার সিটি নির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ থেকে বিরত থাকা। কিন্তু কমিশন তা থাকেনি। চার সিটি নির্বাচনে কিছু কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করে ধাক্কা খাওয়ার পর আগামী জুলাইয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কমিশন ইভিএম ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ বলেছেন, ‘সম্প্রতি রাজশাহী সিটি নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে ইভিএম নিয়ে ঝামেলা দেখা দেয়ার কারণে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে না। রাজশাহীতে ইভিএমে কেন সমস্যা দেখা দিয়েছেÑ এ কারণ খুঁজে বের করার পর অন্য কোনো নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করার কথা চিন্তা করব।’ ইভিএম ব্যবহার নিয়ে কাজী রকিব কমিশনের কর্মকাণ্ডের সতর্ক পরীক্ষা একটি সুপরিচিত গ্রামীণ প্রবাদকে মনে করিয়ে দেয় : গাধা পানি খায়, তবে ঘোলা করে খায়।
এবার চার সিটি নির্বাচনের আচরণবিধি প্রসঙ্গে আসা যাক। আলোচ্য চার সিটি নির্বাচনে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের তীব্র প্রতিযোগিতা চলে। প্রার্থীদের নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার ব্যাপারে ইসি জোরালো ভূমিকা পালন করতে পারেনি। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থীর নামে অসংখ্য রঙিন বিলবোর্ড, ব্যানার দেখা গেলেও এবং সে প্রসঙ্গে ইসিতে অভিযোগ আনা হলেও কমিশন এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। রাসিক নির্বাচনে সিডিউল ঘোষণা করার পর পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থীকে নির্বাচনী প্রচারণায় এগিয়ে রাখার হীন উদ্দেশ্যে নতুন গ্যাস সংযোগ দিয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করলেও সেক্ষেত্রে কমিশন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। খুুলনায় শ্রম প্রতিমন্ত্রী নির্বাচনী এলাকায় আচরণবিধি ভঙ্গের মতো কাজ করলেও কমিশন তাকে কিছুই বলেনি। সিলেটে নির্বাচনী প্রচারণায় পৌরসভার মেয়র এবং উপজেলা চেয়ারম্যানরা সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর পরও কমিশন ওইসব গাড়ি আটক করতে পারেনি। তবে কমিশন ১৪ জন উপজেলা চেয়ারম্যানকে নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারি গাড়ি ব্যবহার করার কারণে শোকজ করে। এ ছাড়া কালো টাকার ব্যবহার এবং ভোট ক্রয় রোধেও ইসি ইতিবাচক কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। এর দৌড় কেবল শোকজ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে কেন? কমিশন যদি আচরণবিধি ভঙ্গের কারণে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানকে নির্বাচনের সময়ের জন্য সাসপেন্ড করাতে পারত, যদি নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যানদের গাড়ি থানায় নিয়ে আটকে রাখতে পারত, তাহলে প্রার্থীরা নির্বাচনী আচরণবিধি পালনে যতœবান হতেন। কমিশন তা না করে এ ব্যাপারে ঢিলেঢালাভাবে শোকজ করেই দায়িত্ব শেষ করেছে।
চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বড় আকারে সন্ত্রাস না হলেও কিছু বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাস হয়েছে। বরিশালে দুই বড় দল সমর্থিত প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষে এক প্রার্থী লাঞ্ছিত হয়েছেন। বিরোধী দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর দেহরক্ষী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এছাড়া ভয়-ভীতি প্রদর্শন, ছোটখাটো হুমকি-ধমকি ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার বিষয় ছিল। প্রার্থীদের পক্ষ থেকে দাবি থাকা সত্ত্বেও ইসি সংশ্লিষ্ট সিটিগুলোতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনার ব্যবস্থা করেনি। নির্বাচনে শান্তি-শৃংখলা রক্ষায় সেনা মোতায়েনের দাবি থাকা সত্ত্বেও কমিশন সে দাবি না মানায় এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। সেনা মোতায়েন করা হলে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের ঘটনা কম ঘটত এবং বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসের ঘটনা অনেকটাই হ্রাস পেত। বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী জাতিসংঘের অধীনে বিদেশে নির্বাচনে শান্তি-শৃংখলা রক্ষায় ভূমিকা পালন করে কৃতিত্ব অর্জন করলেও দেশের নির্বাচনে শান্তি-শৃংখলা রক্ষায় তাদের ব্যবহারে নির্বাচন কমিশন কেন কার্পণ্য দেখায়, তা বোধগম্য নয়।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে অনুষ্ঠিত চারটি বড় শহরের সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন সমগ্র জাতি গুরুত্বের সঙ্গে নিলেও এবং যুগপৎ সরকারি ও বিরোধী দল এ নির্বাচনকে তাদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের পরিমাপক হিসেবে গ্রহণ করলেও ইসি এ নির্বাচনটিকে তেমন গুরুত্ব দিয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়নি। ১৫ জুন নির্বাচনের দিন সমগ্র জাতি যখন কেমন নির্বাচন হয়, মারামারি-কাটাকাটি বা ভোট ডাকাতি হয় কিনা এসব জানতে উদগ্রীব, টিভির পর্দায় চোখ রাখতে ব্যস্ত, তখন নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে ছিল নির্বিকার। সিইসি ওইদিন অফিসে গেছেন বেলা ১টার পর। চারটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী কর্মকাণ্ড মনিটর করার জন্য চারজন কমিশনারকে দায়িত্ব দেয়া হলেও নির্বাচনের দিন সকালে এ চারজনের মাত্র একজনকে কমিশন অফিসে উপস্থিত দেখা যায়। নির্বাচনী এলাকা থেকে সিইসি ও অন্য কমিশনারদের নির্বাচনী এলাকা পরিদর্শনের অনুরোধ করা সত্ত্বেও তারা নির্বাচনী এলাকায় না গিয়ে রাজধানীতে অবস্থানে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
আলোচ্য নির্বাচনগুলো ছিল স্থানীয় সরকার নির্বাচন, যা সংবিধান অনুযায়ী নির্দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু নির্বাচনগুলোতে চরম দলীয় প্রবণতা বৃদ্ধি পেলেও নির্বাচন কমিশন নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করে। বস্তুত নির্বাচনগুলোকে নির্দলীয় রাখার ব্যাপারে ইসি কোনো ভূমিকাই গ্রহণ করেনি। নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের এ নির্বাচনের নির্দলীয় চরিত্রের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে উভয় দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রচারণায় আসতে নিরুৎসাহিত করতে পারত। কিন্তু কমিশন তা করেনি। বড় বড় জাতীয় ইস্যু উত্থাপন এবং দলীয় কেন্দ্রীয় নেতাদের অংশগ্রহণে একটি নির্দলীয় নির্বাচন পূর্ণ দলীয় রূপ নেয়া সত্ত্বেও কমিশনের নীরবতা তার খামখেয়ালিপনা ও দুর্বলতাকেই তুলে ধরে। এসব বিবেচনায় আলোচ্য চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে রকিব কমিশনের ভূমিকাকে প্রশংসা করা যায় না। এ নির্বাচন পরিচালনার মধ্য দিয়ে কমিশন তার পেশাদারিত্ব এবং স্বাধীন ও শক্তিশালী ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।
ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার : অধ্যাপক, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.