আমার সঙ্গে গাদ্দারি করেছে!- আশরাফুল!

আইসিসি’র দুর্নীতি দমন ও নিরাপত্তা ইউনিটের (আকসু) কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেওয়ার দিন থেকেই চুপ হয়ে গেছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। গণমাধ্যমে তার ফিক্সিংয়ে খবর বিশদভাবে প্রকাশ হওয়ার দিন থেকে প্রকাশ্যে চলাফেরা কমিয়ে দিয়েছেন।
খুব প্রয়োজন না হলে বাসা থেকে বেরও হন না। অপরাধের অনুশোচনায় গুমড়ে কাঁদছেন প্রতিনিয়ত। পাপবোধ থেকে কাছের একজনকে আকসুকে দেওয়া বক্তব্যের বিবরণী খুলে বলেছিলেন। বিশ্বাস ভঙ্গ করে আশরাফুলের কথিত সেই বড় ভাই তথ্যগুলো ফাঁস করে দেয় গণমাধ্যমে।

সোমবার আশরাফুলের বাসায় দলে দলে সাংবাদিকরা ছুটে যান প্রতিক্রিয়ার জন্য। আশরাফুল কাউকে-ই বিমুখ করেন নি, সবিস্তারে খুলে বলেছেন ক্রিকেটে নিজের অপকর্মের কথা। সেই ফাঁকে এক প্রশ্নের জবাবে বললেন, বিশ্বাস ভঙ্গের কথাও,‘কোনো দৈনিককে এরকম কোনো তথ্য আমি দিই নি। আমি এক ভাইয়াকে হয়তো বড় ভাই হিসেবে কথাগুলো বলেছিলাম কিন্তু তিনি আমার সাথে গাদ্দারি করেছেন। আসলে কিছু করার নেই আমার।’

কে সেই বড় ভাই? এ প্রশ্ন করার সুযোগ হয়নি। অন্য একটি প্রশ্ন করতেই আবেগের বাঁধ ভেঙ্গে দু’চোখ বেয়ে গড়াতে থাকে অনুশোচনার অশ্রু। যদিও উপস্থিত কারোরই বুঝতে বাকি থাকলো না, কে সেই বড় ভাই, যার হাতে ‘লুন্ঠিত’ হয়েছে আশরাফুলের বিশ্বাস।

তারও আগে নিজের অপকর্মের জন্য ভুল স্বীকার করে মিডিয়ার মাধ্যমে ক্ষমা চেয়েছেন জাতির কাছে,‘আমি অন্যায় করেছি, ওটার জন্য বাংলাদেশের সব মানুষের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। যারা আমার ভক্ত (ফ্যান) ছিলেন সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমাকে ক্ষমা করে দেবেন সবাই।’

অনুশোচনার ভাষা ছিল এমন,‘যে কাজগুলো করেছি তার সবকিছুতেই ‘গিলটি ফিল’ করছি। আমাকে বাংলাদেশের মানুষ প্রচুর ভালোবাসতো এবং আমার ভক্ত ছিল প্রচুর, উনাদের ছোট করেছি। সবার বিশ্বাস ছিল আমার প্রতি অন্যরকম। তাদের বিশ্বাস রাখতে পারি নি। আমি যে খারাপ কাজগুলো করেছি সে ‘সিচুয়েশন’ ছিল অন্যরকম।’

আকসুর কাছে স্বীকারোক্তি সম্পর্কে বলেছেন,‘মনের ভেতরে একটাই অনুতাপ----- আমি অন্যায় করেছি। ১২ বছরে আইসিসি দুর্নীতি দমন এবং নিরাপত্তা ইউনিট (আকসু) থেকে কখনোই ডাকা হয়নি আমাকে। এই প্রথম ডেকেছে এবং আমি যে বাজে কাজগুলো করেছি তা স্বীকার করেছি। ক্রিকেটের স্বার্থে চেষ্টা করেছি আইসিসিকে সহযোগিতা করতে। আমি যে যে অন্যায় কাজে জড়িত ছিলাম ওগুলো বলেছি এবং যতটুকু পেরেছি সহযোগিতা করেছি।’

এও বললেন, আইসিসি আগে ডাকলে তিনি সব খুলে বলতেন :,‘আমি কখনোই এমন কাজে সম্পৃক্ত ছিলাম না বলেই হয়তো আগে জানাই নি। কিন্তু এখন বলেছি ক্রিকেটের স্বার্থে। আমাকে আগেও যদি জিজ্ঞেস করা হতো ব্যক্তিগতভাবে, তাহলে হয়তো আগেই বলতাম। ১২ বছর পর, এবার জিম্বাবুয়ে থেকে আসার পর আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, আমি তখনই বলে দিয়েছি যা যা অন্যায় কাজে জড়িত হয়েছিলাম।’

‘আমি ১২ বছরের ক্যারিয়ারে প্রায় আড়াইশ ম্যাচ খেলেছি টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি মিলে। জীবনে হয়তো কিছু বাজে কাজ করেছি, আমি অনেক করে চেয়েছি সেগুলো বলে দিতে। চাই না যে আমি ‘গিলটি ফিল’ করি। এছাড়া আমি সব সময় চেষ্টা করেছি সৎ থাকতে এবং আমার দেশের হয়ে সেরা পারফরমেন্স করতে’--’ বলেন আশরাফুল।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে পড়া এবং জাতীয় দলের সাবেক তিন ক্রিকেটার খালেদ মাহমুদ সুজন, খালেদ মাসুদ পাইলট ও মোহাম্মদ রফিক সম্পর্কে আকসুর কাছে যে বক্তব্য দিয়েছেন আশরাফুল, সে সম্পর্কে কিছু বলতে রাজি হন নি। শুধু এটুকু বললেন ,‘আমি আইসিসিকে বলেছি কবে কি হয়েছে। আমি সবই বলেছি কার সাথে কি হয়েছে। এটা আইসিসির রিপোর্ট আসার পর আপনাদের বলতে পারবো।’

মোদ্দা কথা, পরিস্থিতির শিকার হয়ে ফিক্সিংয়ে জড়িয়েছেন বলে দাবি আশরাফুলের ,‘হয়তো বা চার পাঁচটা বাজে কাজ করেছি। সবক’টাই পরিস্থিতির শিকার ছিলাম বলবো।’

No comments

Powered by Blogger.