শপথ নিলেন পাকিস্তানের ঐতিহাসিক পার্লামেন্টের সদস্যরা

পাকিস্তানে নবনির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নিয়েছেন। গতকাল শনিবার চতুর্দশ জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশনে তাঁরা শপথ নেন। এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের ৬৬ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো নির্বাচিত সরকার মেয়াদ পূর্ণ করার পর নতুন পার্লামেন্ট সদস্যরা শপথ নিলেন। সকালে শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নবনির্বাচিত আইনপ্রণেতারা কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে রাজধানীর ইসলামাবাদের পার্লামেন্ট ভবনে যান। জাতীয় সংগীত ও কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয়। জাতীয় পরিষদের বিদায়ী স্পিকার ফাহমিদা মির্জা অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। জাতীয় পরিষদ সচিবালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, আগামীকাল সোমবার গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নতুন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হবেন। অন্যদিকে নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন জয়ী দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএলএম-এন) প্রধান নওয়াজ শরিফ আগামী বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে ওই দিনই শপথ নেবেন। নতুন পার্লামেন্টে ৩৪২টি আসনের মধ্যে পিএলএম-এনের আসন ১৭৭টি। এ কারণে নওয়াজের শপথ নেওয়ার বিষয়টি প্রায় শতভাগ নিশ্চিত। পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার জন্য গতকাল জন্মস্থান লাহোর থেকে বিমানে ইসলামাবাদে আসেন নওয়াজ শরিফ। বিমান থেকে নামার পর অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি পাকিস্তানের জন্য একটি বড় অগ্রগতির বিষয়। তিনি এ জন্য জাতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পার্লামেন্ট সচিবালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার পদের জন্য আজ রোববার দুপুর ১২টার মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। গোপন ব্যালটের মাধ্যমে সোমবার এই দুই পদের নির্বাচন হবে। অন্যদিকে মঙ্গলবার বেলা দুইটার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। বুধবার নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে শপথ নেবেন। এদিকে গতকাল পার্লামেন্ট সদস্যদের শপথ গ্রহণের পর পিএমএল-এনের দলীয় বৈঠকে দলের পক্ষ থেকে নওয়াজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। দলের নেতা চৌধুরী নিসার আলী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নওয়াজের নাম প্রস্তাব করেন এবং সর্বসম্মতভাবে তা অনুমোদিত হয়। ওই বৈঠকে নওয়াজ বলেন, যাঁরা দায়িত্ব পালনকালে জাতীয় সম্পদ তছরুপ করেছেন, তাঁদের জবাবদিহি করতে হবে। নতুন আইনপ্রণেতাদের কাঁধে জাতির বিরাট দায়িত্ব রয়েছে বলেও মনে করিয়ে দেন তিনি। পাকিস্তানের ৬৬ বছরের ইতিহাসে দেশটিতে তিন দফায় সামরিক শাসন জারি হয়। এর মধ্যে কয়েকবার নির্বাচন হলেও নির্বাচিত সরকারের পেছনেও শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর ছায়া সব সময় ছিল। আর এবারই প্রথমবারের মতো নির্বাচিত সরকার পুরো মেয়াদ টিকে থেকে গণতান্ত্রিকভাবে অন্য সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করল। এ অর্জনকে টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দেশটির সংগ্রামে এক বড় সাফল্য বলে মনে করা হচ্ছে। নির্বাচনে বিগত সরকারে থাকা পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) হেরে গেলেও দলটির কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলী জারদারি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী সেপ্টেম্বরে তাঁর প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদ পূর্ণ হবে। এএফপি ও ডন।

No comments

Powered by Blogger.