ইরাকের সহিংসতা বন্ধে রাজনৈতিক সমাধান জরুরি

ইরাকের অব্যাহত সহিংসতা বন্ধে রাজনৈতিক সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে। শুধু নিরাপত্তা জোরদার করে রক্তক্ষয় বন্ধ করা যাবে না। ইরাক বিশেষজ্ঞ ও দেশটির কর্মকর্তারা এ কথাই বলছেন। সংশ্লিষ্টদের অভিমত, ইরাকের সরকার সহিংসতা দমনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। শুধু গত মে মাসে সহিংসতায় ৬০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে। আর গত দুই মাসে নিহতের সংখ্যা এক হাজারের ওপর। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরাকের চলমান সহিংসতার অন্যতম কারণ সুন্নিদের অসন্তোষ। কথিত বৈষম্য ও অবিচারের প্রতিবাদে গত ডিসেম্বরে দেশটির সুন্নিরা বিক্ষোভ করেন। পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, এর সমাধানে শিয়া ও সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে আলোচনা ছাড়া উপায় নেই। এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সংকটবিষয়ক গোষ্ঠীর (ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ) ইরাক বিশেষজ্ঞ মারিয়া ফানটাপপাই বলেন, ইরাকের সরকারকে সত্যিকারের সমাধানের ইচ্ছা প্রদর্শন করে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আন্তরিকভাবে আলোচনা করতে হবে। কিন্তু তাঁরা একটি নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট বিষয় হিসেবে সহিংসতার সমাধানের চেষ্টা করছে। এতে দেশটিতে সহিংসতা আরও বাড়ছে। অন্যদিকে ইরাক বিশেষজ্ঞ একই গ্রুপের চেয়ারম্যান ঝুঁকি পরামর্শক জন ডেরেক বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে ও গ্রেপ্তারে সহিংসতা কমছে না, বরং বাড়ছে। ভিন্নমত পোষণকারীদের সঙ্গে আরও সংশ্লিষ্ট হয়ে সংলাপের মাধ্যমেই শুধু সহিংসতার সমাধান সম্ভব। কিন্তু বাগদাদ থেকে এখন পর্যন্ত সহিংসতার সমাধানে নেওয়া পদক্ষেপগুলো হলো কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার রদবদল ও নিরাপত্তা জোরদারে কিছু অস্পষ্ট পদক্ষেপ। তবে সরকারের কিছু পদক্ষেপ প্রশংসাযোগ্য। যেমন অনেক সুন্নি বন্দীর মুক্তি ও আল-কায়েদা জঙ্গি দমনে সুন্নি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি। তবে এগুলো সহিংসতা বন্ধের জন্য কোনো বড় পদক্ষেপ নয়। উল্লেখ্য, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক অভিযানে সাদ্দাম হোসেনের পতন পর্যন্ত সুন্নিরা সংখ্যালঘু হয়েও দেশ শাসন করেছে। তাই বর্তমানে দেশটির শাসন ক্ষমতায় থাকা শিয়াদের নিয়ে সুন্নিদের মধ্যে প্রচণ্ড অসন্তোষ আছে। তাঁরা অভিযোগ করছেন, শিয়ারা তাঁদের সম্প্রদায়ের ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছে। ইরাকের সুন্নি অধ্যুষিত অঞ্চলে গত বছর ডিসেম্বরে প্রথম বিক্ষোভ হয়। কিন্তু গত এপ্রিল মাসে সুন্নি বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর হামলায় অনেকে হতাহত হন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি উত্তেজনা আরও বেড়েছে। ইরাকের বিভিন্ন দল ও মতের রাজনীতিকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। সুন্নি অসন্তোষ ও স্থানীয় অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাই এসব বিরোধের কারণ। ইরাকে অবস্থানরত জাতিসংঘের দূত মার্টিন কবলার বলেন, রাজনৈতিক মতবিরোধের মীমাংসা করা সম্ভব হলে নিরাপত্তাব্যবস্থা অবশ্যই জোরদার হবে। কারণ জাতিগত সংঘাত বন্ধ হয়ে যাবে। তবে, ইরাকে এর বিপরীত অবস্থা দেখা যাচ্ছে। ইউরেসিয়া গ্রুপের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের পরিচালক ক্রিসপিন হাওয়েস সুন্নিদের নিয়ে ইরাক সরকারের মনোভাব প্রসঙ্গে বলেন, ইরাকের সুন্নিদের ব্যাপারে শিয়া প্রধানমন্ত্রী নুরি আল-মালিকির কোনো সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নেই। তাঁরা বরাবরই সুন্নিদের কারিগরি ও নিরাপত্তাঘটিত সমস্যা হিসেবে নিচ্ছেন। আল-মালিকির মনোভাবে বোঝা যাচ্ছে, তিনি ইরাকে রাজনৈতিক সমাধানে নয়, বরং সুন্নি দমনে নেমেছেন। এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.