রাজশাহীতে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শিবির কর্মী নিহত

রাজশাহীতে গত শনিবার গভীর রাতে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটা-লিয়নের (র‌্যাব) সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ একজন নিহত হয়েছেন। র‌্যাব ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, পাঁচটি গুলি, ছয়টি ককটেল ও তিন বোতল পেট্রল উদ্ধার করেছে। নিহত ব্যক্তির নাম শাহাদত হোসেন (৩০)। তিনি শিবিরের কর্মী বলে জানা গেছে। শাহাদতের ভাই হাসানুল বান্না দাবি করেন, তাঁর ভাই জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ কারণে সরকারি বাহিনী তাঁর ভাইকে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। র‌্যাব-৫-এর ভাষ্যমতে, শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে রাজশাহী শহরের বিনোদপুরে বাংলাদেশ বেতারের রাজশাহী সম্প্রচার কেন্দ্রের মাঠে শিবিরের সাত-আটজন কর্মী বৈঠক করছিলেন। তাঁরা পরদিন (রোববার) হরতালে নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছিলেন। খবর পেয়ে র‌্যাবের সদস্যরা সেখানে গেলে শিবিরের কর্মীরা তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি চালান। র‌্যাবের সদস্যরাও পাল্টা গুলি চালান। একপর্যায়ে শিবিরের কর্মীরা পালিয়ে যান। পরে ঘটনাস্থলে র‌্যাবের সদস্যরা শাহাদতের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। সেখান থেকে শিবিরের কর্মীদের ফেলে যাওয়া একটি নাইন এমএম পিস্তল, পাঁচটি গুলিসহ একটি ম্যাগাজিন, ছয়টি ককটেল ও তিন বোতল পেট্রল উদ্ধার করা হয়।  হাসানুল বান্না প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাইয়ের সাড়ে চার বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। তাঁর ভাই বালুঘাটে ‘সাব কন্ট্রাক্টে’ কাজ করতেন। ৩ মে ঢাকায় এক বন্ধুর বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশে তিনি বাড়ি থেকে বের হন। পরদিন ৪ মে দুপুর থেকে তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকার মিরপুরের ওই বন্ধুর বাড়িতে খোঁজ নিয়ে তাঁরা জেনেছেন, র‌্যাব পরিচয়ে শাহাদতকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে তাঁরা ঢাকায় র‌্যাব ও থানায় যোগাযোগ করেন। কিন্তু কেউ কিছু জানে না বলে জানায়। বান্না দাবি করেন, নাম প্রকাশ না করার শর্তে র‌্যাব-৫-এর একজন কর্মকর্তা তাঁদের বলেন, ‘গত শুক্রবার রাত আটটার দিকে ঢাকা থেকে ধরে শিবিরের একজনকে রাজশাহীতে আনা হয়েছে।’ তার পর থেকেই তাঁরা উৎকণ্ঠায় ছিলেন। শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে গোলাগুলির শব্দ পেয়ে তাঁরা জেগে ওঠেন। প্রতিবেশীদের সঙ্গে তিনি বেতারের সম্প্রচার কেন্দ্রের মাঠে গিয়ে দেখেন, আমগাছের নিচে তাঁর ভাইয়ের রক্তমাখা লাশ পড়ে আছে। খানিকটা দূরে র‌্যাব অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে আছে। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের লোকও অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। নগরের মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অসিত কুমার ঘোষ বলেন, শাহাদতের নামে মতিহার থানায় পাঁচটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে বিস্ফোরক দ্রব্য বহন ও পুলিশের ওপর হামলার মামলা রয়েছে। দুটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। বাকি তিন মামলার তদন্ত চলছে। তিনি বলেন, শাহাদত শিবিরের বড় কোনো নেতা নন। তবে মতিহার এলাকায় কোথায় কখন ককটেল হামলা হবে, তার নেপথ্যে কাজ করতেন তিনি। ওসি আরও জানান, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে শাহাদতের লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জামায়াতের দাবি: শাহাদাত হোসেনকে র‌্যাব গুলি করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান এক বিবৃতিতে বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ আগে শাহাদাত হোসেনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। সঙ্গে থাকা অন্যদের ‘মিথ্যা’ মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠালেও হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁকে গ্রেপ্তার করার কথা শিকার করেনি। গতকাল ভোরে লাশ রাজশাহীর বিনোদপুর রেডিও কলোনি মাঠে ফেলে দিয়ে বলা হচ্ছে, র‌্যাবের সঙ্গে গুলিবিনিময়ের সময় শাহাদাত নিহত হয়েছেন। র‌্যাবের এ বক্তব্য মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। শিবিরের নিখোঁজ আরেক নেতার সন্ধান মেলেনি: এর আগে গত ৪ এপ্রিল রাতে রাজশাহী মহানগর শিবিরের অফিস সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলামকে র‌্যাব পরিচয়ে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁকে আদালতে সোপর্দ করা এবং তাঁর মুক্তির দাবিতে রাজশাহীতে হরতালও ডেকেছে শিবির। আনোয়ারুল রাজশাহী কলেজের গণিত বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে পড়েন। ঘটনার কয়েক দিন পর সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আনোয়ারুলের বড় বোন মোর্শেদা পারভীন অভিযোগ করেন, ৪ এপ্রিল দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে র‌্যাব-৫-এর নাহিদ, বুলবুলসহ ৩০-৪০ জন সদস্য উপশহর বন্ধগেট এলাকায় তাঁদের বাড়ি থেকে আনোয়ারুলকে নিয়ে যান। এ সময় তাঁরা পরিবারের সদস্যদের একটি কক্ষে আটকে রাখেন। বাসায় আনোয়ারুলের ওপর এক ঘণ্টা নির্যাতনের পর বাড়িতে থাকা ল্যাপটপ, ডেক্সটপ, পাঁচ-ছয়টি মুঠোফোনসহ তাঁকে নিয়ে গিয়ে নগরের বিভিন্ন ছাত্রাবাসে অভিযান চালানো হয়।

No comments

Powered by Blogger.