প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ হোক

হেফাজতে ইসলামের অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দুই দিনে ৪৯ ব্যক্তির প্রাণহানিসহ যে ব্যাপক নাশকতা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা অনর্থক, অপ্রয়োজনীয় এবং সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য। এসব অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। অকালে ঝরে যাওয়া প্রতিটি জীবনই মূল্যবান। আমরা প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করি।  হেফাজতের ১৩ দফা যদিও যুক্তিসংগত নয় কিন্তু তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে না পারার ব্যর্থতা মূলত শাসনগত সংকটেরই প্রতিফলন। হেফাজতের তরফে যে ধরনের হিংসাশ্রয়ী তৎপরতা চলেছে, তা নজিরবিহীন। এতে ইসলামের অবমাননা ঘটেছে। রোববার দিনভর রাজধানীর মতিঝিল-পল্টন, গুলিস্তান-ফুলবাড়িয়া এলাকায় অবরোধকারীরা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও সহিংসতা চালান। অনেক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। মতিঝিল থেকে পল্টন পর্যন্ত ফুটপাতের সব দোকান পুড়িয়ে দেওয়ায় সেখানকার দরিদ্র ছোট ব্যবসায়ীরা আক্ষরিক অর্থেই সর্বস্বান্ত হয়েছেন। অবরোধকারীরা সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করতে পল্টন-বিজয়নগরের সড়ক বিভাজকের অনেক গাছ কেটে ফেলেছেন। তাঁরা হামলা করেছেন সম্প্রচার ও মুদ্রণ সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যানদের ওপর। হেফাজতে ইসলামের প্রতিশ্রুতি ছিল, তাদের অবরোধ কর্মসূচি হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। কথা ছিল, কর্মসূচি শেষে সন্ধ্যা ছয়টায় তারা শাপলা চত্বর ত্যাগ করবে। কিন্তু সকাল থেকেই হেফাজতের কর্মীরা সহিংস আচরণ শুরু করেন। সন্ধ্যা ছয়টা পেরিয়ে গেলেও তাঁরা শাপলা চত্বরে অবস্থান অব্যাহত রাখেন। সরকারের একজন মন্ত্রী সংবাদমাধ্যমে তাঁদের সন্ধ্যার মধ্যে চলে যাওয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু তাঁরা তা অগ্রাহ্য করে তাঁদের দাবি না মানা পর্যন্ত ফিরে যাবেন না বলে ঘোষণা দেন। হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফী শাপলা চত্বরে যাওয়ার মাঝপথ থেকে রহস্যজনকভাবে ফিরে যান। অবরোধ কর্মসূচির ব্যাপারে সরকারকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তাঁরা শাপলা চত্বরে থেকে যাওয়ার পাশাপাশি অভিযোগ করেন, তাঁদের কর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। তাঁরা দাবি করেন, কোনো সহিংসতা ও নাশকতার সঙ্গে হেফাজতের কর্মীদের কোনো সম্পর্ক নেই। সরকার ও হেফাজতের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের সুরাহা হতে পারে সহিংস ঘটনাবলির পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার মাধ্যমে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি গুরুতর অভিযোগ এ রকম যে হেফাজতের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ঢুকে নাশকতা ও সহিংসতা করেছেন। এটিও তদন্তের বিষয়। ১৩ দফার মতো সংবেদনশীল দাবিদাওয়া দুই বড় দল, বিশেষ করে আওয়ামীলীগের পক্ষে কিছুতেই মানা সম্ভব নয়। অথচ সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিএনপি ঢাকাবাসীকে হেফাজতের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানায়। সার্বিকভাবে আমরা সমাজে দায়িত্বহীন আচরণের উদ্বাহু নৃত্য দেখছি। সাভারে মানবসৃষ্ট বিয়োগান্ত ঘটনায় সারা বিশ্ব যখন বাংলাদেশের দিকে নজর রাখছে, তখন একসঙ্গে অনেকগুলো দিকে ক্রমাগতভাবে মানবসৃষ্ট সহিংসতার খবর ছড়িয়ে পড়ছে। দৃশ্যত ন্যূনতম বলপ্রয়োগে হেফাজতকে সরাতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাই ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু তাতে ক্ষমতাসীন দলের আত্মতৃপ্ত হওয়ার সুযোগ নেই।

No comments

Powered by Blogger.