‘রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা’ ইউসুফ গ্রেপ্তার, কারাগারে

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে ‘রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা’ হিসেবে পরিচিত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এ কে এম ইউসুফকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গতকাল রোববার দুপুরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিকেলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ তাঁকে কারাগারে পাঠান। বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ বিকেলে ইউসুফকে হাজির করা হলে ট্রাইব্যুনাল তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। দুপুরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। দুপুরে ট্রাইব্যুনাল ইউসুফের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিলে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আরজি জানান রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি হূষিকেশ সাহা। শুনানিতে তিনি বলেন, এ কে এম ইউসুফ মুক্তিযুদ্ধকালে জামায়াতের ৯৬ জন সদস্য ও স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে খুলনায় প্রথম রাজাকার বাহিনী গঠন করেন। একাত্তরে বাগেরহাটের (তৎকালীন খুলনা জেলার একটি মহকুমা) বিভিন্ন জায়গায় গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ প্রভৃতি মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ১৫টি অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি একজন প্রভাবশালী নেতা, তাঁর জন্য মামলার সাক্ষীরা হুমকির শিকার হচ্ছেন। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হোক। শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল আদেশে বলেন, আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফের (এ কে এম ইউসুফ) বিরুদ্ধে দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ, সাক্ষীদের জবানবন্দি ও সংশ্লিষ্ট নথি পর্যালোচনা করে তাঁর বিরুদ্ধে প্রাথমিক অভিযোগ (প্রাইমা ফেসি) পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩-এর ৩(২), ৪(১) ও ৪(২) ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেওয়া হলো। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদনও মঞ্জুর করা হলো। গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে হবে। দুপুর ১২টার দিকে পরোয়ানা জারির পরপরই র‌্যাব-২-এর উপ-অধিনায়ক মেজর আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে র‌্যাবের একটি দল ইউসুফের ধানমন্ডির বাসভবন ঘিরে ফেলে। বেলা পৌনে একটার দিকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় আগারগাঁওয়ে র‌্যাব-২-এর কার্যালয়ে। পরে তাঁকে ধানমন্ডি থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিকেল চারটার পর ইউসুফকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাইফুর রহমান তাঁর পক্ষে জামিনের আবেদন দাখিল করেন। তবে এরপর এজলাস বসেনি। ট্রাইব্যুনাল তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে আজ জামিনের আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেন। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, ইউসুফের বিরুদ্ধে আনা ১৫টি অভিযোগের মধ্যে গণহত্যার অভিযোগ সাতটি। এগুলো হলো: একাত্তরের ১৩ মে কচুয়া থানার রণজিতপুর গ্রামে গণহত্যা, ১৯ মে মোরেলগঞ্জ বাজারে গণহত্যা, ২১ মে রামপালের ডাকরা গ্রামে গণহত্যা, ১৪ অক্টোবর রামপালের চুলকাঠি গ্রামে গণহত্যা, ১৫ অক্টোবর কচুয়ার মঘিয়া গ্রামে গণহত্যা, জুলাই ও নভেম্বরে কচুয়ার শাঁখারীকাঠিতে গণহত্যা। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সাবেক সদস্য ইউসুফ একাত্তরে মালেক মন্ত্রিসভার রাজস্ব, পূর্ত, বিদ্যুৎ ও সেচমন্ত্রী ছিলেন। ৮ মে তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়া হয়।

No comments

Powered by Blogger.