দায় এড়াচ্ছেন রানা, জিজ্ঞাসাবাদ চলছে

সাভার পৌর যুবলীগের নেতা সোহেল রানা ভবনধসের ঘটনার দায় স্বীকার করছেন না। শ্রমিকদের কারখানায় ঢোকানোর জন্য তিনি পোশাক কারখানার মালিকদের দায়ী করছেন। আর কারখানা-মালিকেরা দায়ী করেছেন সোহেল রানাকে।ঢাকা জেলা ডিবির ১৭ দিনের জিজ্ঞাসাবাদেও কোনো কিছু স্বীকার করেননি রানা। গতকাল তাঁকে আরও পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ঢাকা জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইনত (কাগজে) ভবনটির মালিক রানার বাবা আবদুল খালেক। তবে রানাই ওই ভবনের সবকিছু দেখভাল করতেন ও সিদ্ধান্ত দিতেন। ভবন ধসে পড়ার পর পুলিশ ও র‌্যাব ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা হলেন সোহেল রানা, আবদুল খালেক, ভবনে অবস্থিত কারখানাগুলোর মালিকপক্ষের চারজন ফ্যান্টমের চেয়ারম্যান (ফ্যান্টম অ্যাপারেলস ও ফ্যান্টম টেক) আমিনুল ইসলাম, নিউওয়েভের (নিউওয়েভ স্টাইল ও নিউ ওয়েভ বটমস) চেয়ারম্যান ফজলুস সামাদ আদনান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুর রহমান এবং ইথারটেক্সের মালিক আনিসুর রহমান, সাভার পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলী ইমতেমাম হোসেন ও সহকারী প্রকৌশলী আলম মিয়া, রানা প্লাজা নির্মাণের তদারকিতে থাকা প্রকৌশলী আবদুর রাজ্জাক, রানাকে পালিয়ে যেতে সহায়তাকারী শাহ আলম মিন্টু ও অনিল দাস। তাঁদের সবাইকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রানা বাদে অন্য সবাই এখন কারাগারে।সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, রানার বিরুদ্ধে মোট চারটি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে সাভার থানায় একটি হত্যা মামলা, রাজউক থেকে ইমারত আইনে একটি মামলা এবং ধামরাই থানায় অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত রানাকে ৩৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। যার মধ্যে ১৭ দিন অতিবাহিত হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, রানা ওই এলাকায় ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। পাশাপাশি ফেনসিডিলের ব্যবসাও করতেন। তাঁর কাছ থেকে দুটি অস্ত্র পাওয়া গেছে। এসব অস্ত্রের একটির কাগজ দেখাতে পারলেও অন্যটির কোনো কাগজ নেই।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, পোশাক কারখানার মালিকেরা জিজ্ঞাসাবাদে নিজেদের ভুল স্বীকার করলেও ধসের ঘটনার দায়দায়িত্ব নেননি। কারখানা-মালিকেরা স্বীকার করেছেন, তাঁরা রানা প্লাজায় ফ্লোর ভাড়া নেওয়ার আগে ভালোভাবে ভবনের তথ্য যাচাই করেননি। ভবনের উপকরণ সম্পর্কেও তাঁদের বিশেষ ধারণা ছিল না। গত ২৪ এপ্রিল শ্রমিকদের জোর করে ভবনে ঢোকানোর অভিযোগও তাঁরা স্বীকার করেননি। তাঁরা বলেছেন, রাজ্জাক নামের এক ব্যক্তিকে পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে উপস্থাপন করেন রানা। ওই রাজ্জাক ভবনটিকে ত্রুটিমুক্ত ঘোষণা করলে মালিকেরা আশ্বস্ত হন। এ ছাড়া ধসের আগের দিন বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ভবনটি পরিদর্শন করেন এবং ‘সে রকম কিছু হয়নি’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। এরপর মালিকেরা আশ্বস্ত হয়ে ২৪ এপ্রিল সকালে শ্রমিকদের ডেকে এনে ভেতরে ঢোকান। মালিকদের দাবি, রানার প্রতারণাই শ্রমিকদের মৃত্যুর জন্য দায়ী। মালিকেরা বলেছেন, ফাটলের কারণে যাতে ভবনের কোনো ক্ষতি না হয়, সে জন্য ধসের আগের দিন বিকেলে কারখানাগুলোতে মিলাদ পড়ানো হয়।
ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, রানাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। কারখানা মালিকেরা রানার ওপর দোষ চাপিয়েছেন। আর রানা বলেছেন, কারখানা মালিকেরা বিভিন্ন তলায় জেনারেটর বসিয়েছিলেন। ফ্লোরগুলোতে অতিরিক্ত সংখ্যক যন্ত্রপাতি ও মালামাল রাখা হয়েছিল। যে কারণে ভবনটি ধসে যায়।
মাসুদ বলেন, ১৪ মে রানার বাবা আবদুল খালেককে ১৩ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে পাঠালে আরও চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। ১৩ দিনের রিমান্ড শেষে পরদিন রানাকেও আদালতে হাজির করে পুলিশ। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তিনটি মামলায় আরও ১৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সর্বশেষ গতকাল ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় আবার পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত। সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর রিমান্ডের আবেদন করেন। মাসুদ হোসেন জানান, পুলিশ অনেক তথ্য ও দলিলপত্র পেয়েছে। এগুলো যাচাই চলছে।

No comments

Powered by Blogger.