লংমার্চে অরাজকতা হলে দায় সরকারের by কাজী সুমন ও ইয়ারব হোসেন

বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ইসলামের অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলাম শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়েছে। তাদের সমাবেশে বাধা দিয়ে সরকার দেশে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়।
কিন্তু দেশে যদি অরাজকতা ও অশান্তি সৃষ্টি হয়, তার দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে সরকারকে নিতে হবে। গতকাল সাতক্ষীরা বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক শোকসভায় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি কলারোয়া হাইস্কুল মাঠে আরেকটি শোক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি এবং ৩রা ও ৪ঠা মার্চ তিন দফায় পুলিশের গুলিতে মোট ১২ জন জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় শোকাহত পরিবারকে সমবেদনা জানাতে গতকাল সাতক্ষীরা সফর করেন খালেদা জিয়া। সফরসূচিতে এ দু’টি সমাবেশে তিনি বক্তব্য রাখেন। এছাড়া, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর হাতে তিনি সহায়তাও তুলে দেন। যশোর থেকে সড়কপথে খালেদা জিয়া সাতক্ষীরা পৌঁছান। রাস্তার দুই পাশে দলীয় নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে বিরোধী নেতাকে স্বাগত জানান। খালেদা জিয়া চৈত্রের প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে থাকা জনতাকে হাত উঁচিয়ে শুভেচ্ছা জানান। যশোর সার্কিট হাউজ থেকে বেলা পৌনে ১২টায় রওনা দিয়ে দেড়টার সময় পৌঁছান কলারোয়ায়। এখানে পুলিশের গুলিতে নিহত শামসুর রহমান, আরিফ বিল্লাহ, রুহুল আমিন ও মনিরামপুরের আনিছুর রহমানের স্বজনদের সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যদের হাতে দেড় লাখ টাকা করে তুলে দেন। পরে এখানে বক্তব্য শেষে তার গাড়ির বহর সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজে পৌঁছে। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে খালেদা জিয়া সাতক্ষীরার শোকসমাবেশে যান। এখানে পুলিশ ও বিজিবি’র গুলিতে নিহত ইকবাল হোসেন তুহিন, মাহমুদুল হাসান, রবিউল, শাহীন আলম, সাইফুল্লাহ, আলহাজ মোহাম্মদ সালাম, আলী মোস্তফা ও মাহবুবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদেরও সান্ত্বনা জানান এবং এক লাখ টাকা করে নগদ সহায়তা দেন।
সাতক্ষীরা বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠের শোকসভায় দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকার জালেম ও খুনি। এদের হাতে বাংলাদেশের মানুষ নিরাপদ নয়। যেখানেই হত্যাকাণ্ড হচ্ছে আমরা সেখানেই যাচ্ছি। যারা শহীদ হচ্ছেন, যাদের হত্যা করছে তাদের খবর সরকার রাখছে না। এমনকি নিহত মানুষগুলোকে পোস্টমর্টেম করা হচ্ছে না। খালেদা জিয়া সমাবেশে উপস্থিত যুবকদের উদ্দেশে বলেন, আসল তরুণ-যুবক এখানেই আছে। তাদের মধ্যেই আছে সত্যিকারের দেশপ্রেম। এই তরুণ-যুবক তোমাদের বড় একটি দায়িত্ব আছে। শহীদ জিয়াউর রহমান মার্চ মাসে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ছাত্র-যুবক-কৃষক সে আহ্বানে স্বাধীনতার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। কিন্তু বাকশাল গঠনের মাধ্যমে তা বিলীন করে দেয়া হয়েছিল।
বিরোধী নেতা বলেন, এই সরকারের ইচ্ছা আজীবন ক্ষমতায় থাকার। একবার করেছিল, বাকশাল। আবারও বাকশাল করতে চায়। সব দল নিষিদ্ধ করে দিতে চায়। তারা বলছে- জামায়াত নিষিদ্ধ করবে। বিএনপি ভেঙে দেবে। থাকবে শুধু তারা, তাদের দল। আমাদের নিষিদ্ধ করতে না পারলে তো তারা লুটপাট করার উৎসব করতে পারছে না।
খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকারের অধীনে কোন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। তারা নির্দলীয় সরকার দাবি করেছিল, আমরা পূরণ করেছি। ’৯৬ সালে এই দাবিতে তারা ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে একসঙ্গে আন্দোলন করেছে। এখন তারা হয়ে গেছে যুদ্ধাপরাধী। ’৮৬ সালে একসঙ্গে এরশাদের অধীনে জামায়াতকে নিয়ে নির্বাচনে গিয়েছে। তখন তো জামায়াত যুদ্ধাপরাধী ছিল না। তখন জামায়াত ভাল ছিল। কত মাখামাখি। এই হলো আওয়ামী লীগ। এরা দু’মুখো সাপের চেয়েও খারাপ। লজ্জা শরম নেই। নির্লজ্জভাবে সবকিছু করে ফেলে। মিথ্যা বলতে বাধে না।  
‘এই সরকার দ্বৈতনীতি চালাচ্ছে’ অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যান, আমাদের ছাত্রদলের ছেলেরা সেখানে যেতে পারে না। মধুর ক্যান্টিনে যেতে পারে না। ছাত্রলীগের গুণ্ডারা সেখানে একক আধিপত্য ধরে রেখেছে। ছাত্রদল গেলে হামলা চালানো হয়। সেখানে দলীয় ভিসি আছেন, তিনিও আওয়ামী লীগের লোক। জাহাঙ্গীরনগরেও একই ভাবে হল দখল করে রেখেছে। সেখানে অস্ত্র নিয়ে ঘুরছে তারা। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ভাবে গুণ্ডামি করছে। ছেলেরা লেখাপড়া করতে পারছে না।
খালেদা জিয়া বলেন, এ সরকার বিচার বিভাগ সম্পূর্ণরূপে দলীয়করণ করে শেষ করে দিয়েছে। বিতর্কিত ব্যক্তিকে বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদে আইনজীবীরা আন্দোলন করছেন। টেলিফোনে বলে দেয়া হয়, একে জামিন দেন, ওকে দেয়া যাবে না।
খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের দলীয়করণ সম্পর্কে বলেন, আমরা বলেছিলাম, বিদেশীরাও বলেছে। আন্তর্জাতিকভাবে সবাই বলছে। এই বিচার ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক কোন মান নেই। দলীয় বিচার হচ্ছে। তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখেন, যারা শেষ দিন পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারের চাকরি করেছে, তাদের কেন ধরা হচ্ছে না? তারাই হলো বড় রাজাকার। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মকে বলবো, ’৭২-৭৫ পর্যন্ত আওয়ামী দুঃশাসনের চিত্র নিয়ে বই আছে, সেগুলো তোমরা পড়লে বুঝতে পারবে, আওয়ামী লীগ কেমন দল। এদের মধ্যে কোন দেশপ্রেম নেই। এদের চরিত্র কেবল  খাই খাই খাই। স্বাধীনতার পর যতকিছু এসেছে, সবকিছু লুট করেছে। ’৭৪ সালে দুর্ভিক্ষে বহুলোক মারা গেছে। হেনরি কিসিঞ্জার সেদিন বাংলাদেশের নাম দিয়েছিলেন তলাবিহীন ঝুড়ি। এখনও ক্ষমতায় এসে কেবল খাই খাই শুরু করেছে।
খালেদা জিয়া জনতার দিকে তাকিয়ে কয়েকটি ব্যানারে লেখা পড়ে বলেন, এই ব্যানারে লেখা আছে, ১০ টাকা কেজি চাল কই? বিনামূল্যে সার কই? ঘরে ঘরে চাকুরি কই? গণহত্যার বিচার চাই। এগুলোর কোন কথাটা রক্ষা করেছে, এরা? শুধু লুটপাট। তারা ক্ষমতায় এলে কেন শেয়ারবাজারে লুট হয়?
পদ্মা সেতু দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আবুল হোসেন সাহেব নাকি সুফি। দুদক তার দুর্নীতি চোখে দেখে না। এসব কানাডায় ধরা পড়েছে। ভবিষ্যতে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। খালেদা জিয়া বলেন, ৫ বছর উন্নয়ন বন্ধ। দেশের বারোটা বাজিয়ে উন্নয়নের সব টাকা তাদের পকেটে। এখন নাকি সব লুটের টাকা বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে বিদেশে বাড়ি কিনে, পরিবারের অনেক সদস্যকে পাঠিয়ে দিয়েছে, অনেকে টিকিটও কেটে রেখেছে। সুযোগ বুঝে কেটে পড়বে। জনগণের তাড়া খেয়ে তাদের চলে যেতে হবে। এ অবস্থায় দেশ চলতে দেয়া যায় না। এখানেই ১১ জনসহ সারা দেশে এক মাসে ১৮০ জন মানুষকে হত্যা করেছে এই সরকার। এই গণহত্যার জন্য এই সরকারকে একদিন জবাবদিহি অবশ্যই করতে হবে। তিনি বলেন, বিজিবি সীমান্তে নিরাপত্তা দিতে পারে না। আপনারা বাংলাদেশের মানুষকে গুলি করে মারছেন, ওই দিকে সীমান্তে ভারতীয়রা বাংলাদেশীকে গুলি করছে, তার কোন জবাব দিতে পারে না। চাঁপাই নবাবগঞ্জে আমাদের সীমান্তের ভেতরে ঢুকে তারা নির্যাতন চালিয়েছে, সরকারের কোন কথা বলতে দেখেনি। প্রতিবাদ করতে দেখিনি। কিন্তু বিজিবিকে আমাদের দেশের মানুষকে গুলি করে হত্যা করতে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। হরতাল প্রতিরোধে তাদের রাজপথে নামাচ্ছে। হরতাল তো হয়েছে, আরও হবে। আপনারা পদত্যাগ করেন, তাহলে হরতাল-টরতাল আর হবে না। আসুন, নির্বাচন করি। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেন। আপনাদের জনগণ ভোট দিলে আপনারা ক্ষমতায় আসবেন। এটাই গণতন্ত্র। তিনি বলেন, দেশে এখন গণতন্ত্র অনুপস্থিত, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই। আইনের শাসন নেই। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই।
সাতক্ষীরাবাসীর উদ্দেশ্যে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা এ অঞ্চলের মানুষ বুকের রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপনারা প্রতিরোধ করতে জানেন। জেগে উঠেছেন। খালেদা জিয়া বলেন, আমরা মুসলমান। সকল ধর্মের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। আমরা সব ধর্মকে সমানভাবে গুরুত্ব দেই। আমরা যে যার ধর্মকে ভালবাসি। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ সব ধর্মের মানুষকে সম্মান করি। কিন্তু এই আওয়ামী লীগের আমলে কোন ধর্মের মানুষ ভাল থাকে না। নিরাপদে নয়। খালেদা জিয়া বলেন, মুসলমানদের প্রিয় নবী রাসুল (সা.)কে নিয়ে যেসব কটাক্ষ করা হয়েছে এগুলো উচ্চারণ করাও গুনাহ। আবার তাদের শাস্তি না দিয়ে জামাই আদরে লালন পালন করছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেছে। তাদের বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলাম কর্মসূচি দিয়েছে। তারা বলেছে, ধর্মের অবমাননাকারীদের ধরতে হবে। সরকার তা না করে হেফাজতে ইসলামকে বাধা দিচ্ছে। এ কর্মসূচি বন্ধের ষড়যন্ত্র করছে। এর আগে তাদের লাইনের দু’টি সমাবেশ করেছে। তখন বাধা দেয়া হয়নি। আমাদের নবীজী সম্পর্কে বললে, আমাদের প্রত্যেকেরই লাগে। হেফাজতে ইসলামের শান্তিপূর্ণ লংমার্চে বাধা দিতে হরতাল ডেকেছে। শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা দিয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। দেশে যদি অরাজকতা ও অশান্তি সৃষ্টি হয়, তার দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে সরকারকে নিতে হবে। জবাবদিহি করতে হবে।
তিনি বলেন, মুসলমানরা শুক্রবার দিনে মসজিদে যায়। আমাদের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে তালা দিয়ে রাখা হয়েছে। মন্দির ভেঙেছে। আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে তারা সম্মান দিতে জানে না, এটা হিন্দুদের বুঝতে হবে। ইস্যু সৃষ্টির নামে তারা সারা দেশে মন্দির ভাঙছে। অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করছে। আওয়ামী লীগের লোকরা শহীদ মিনার ভাঙতে গিয়ে ধরা পড়ার পর বলে পাগল। এরা পাগল বানিয়ে ফেলে, এরা পারেও। চট্টগ্রাম, উখিয়া ও রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মন্দির থেকে আওয়ামী লীগের লোকেরা দামি দামি জিনিস নিয়ে গেছে। সেখানকার আওয়ামী লীগের সভাপতিকে প্রতিদান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে নিয়ে গেছেন। এরাই আওয়ামী লীগ।
খালেদা জিয়া সাতক্ষীরাবাসীর উদ্দেশে বলেন, আওয়ামী লীগ দু’মুখো সাপের চেয়েও খারাপ। এদের বিশ্বাস করবেন না। পত্রিকায় দেখলাম, টার্গেট নাকি আমি। আরে, আন্দোলন করতে করতে এসেছি, ভয় পাই না। তারা হুকুম দিচ্ছে মানুষ হত্যার। প্রধানমন্ত্রী লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যার হুকুম দিয়েছেন। একটি লাশের বদলে দশটি লাশ চেয়েছেন। এই যে হত্যা, সব প্রধানমন্ত্রীর হুকুমে হয়েছে। হুকুমের আসামি হবেন প্রধানমন্ত্রী। তাকে সব জবাব দিতে হবে। রেহাই পাবেন না। এসবের জন্য মামলা ও শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলেই ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। জনগণ তাদের তাড়া করবে।
বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেন, দেশ এখন অচল। সরকার এখন ডুবন্ত। জনগণ থেকে তারা বিচ্ছিন্ন। এ দুর্বল সরকারকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেয়া যায় না।
পুলিশদের সাবধান করে দিয়ে তিনি বলেন, সব পুলিশ না। কিছু দলীয় পুলিশ আর একটি বিশেষ জেলার পুলিশ। তাদেরকে বলি, পশু-পাখির মতো মানুষ মারবেন না। আমরা কারও চাকরি খেতে চাই না। তবে অন্যায় করলে শাস্তি পেতেই হবে। এই যে, মহিলা পুলিশ দেখছেন, এদের চাকরি দিয়েছেন শহীদ জিয়াউর রহমান। মেট্রোপলিটন পুলিশ আমি করেছি।
খালেদা জিয়া বলেন, দেশ আজ কঠিন সময়ে। সবকিছু অন্য দেশের হাতে। তারা ক্ষমতায় থাকতে চাইবে। তাই আমি তরুণদের বলছি, পরাধীনতার শৃঙ্খলে থাকবো, নাকি স্বাধীনতার পতাকা ওড়াবো? তোমাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে। তোমরাই স্বাধীনতার পতাকা ওড়াবে, আমি তোমাদের পাশে থাকবো। খালেদা জিয়া সারা দেশে গণহত্যার শিকার পরিবারগুলোর উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা শুধু সান্ত্বনা দিতে পারি। আমরা আপনাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিতে পারবো না। ক্ষমতায় এলে আপনাদের পরিবারের সদস্যদের চাকরির ব্যবস্থা করতে পারবো।
সরকার উন্মাদ হয়ে গেছে
কলারোয়ার সমাবেশে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, এখানে এসেছি কোন বক্তব্য দেয়ার জন্য নয়। সরকারের পেটোয়া বাহিনী নিরীহ মানুষগুলোকে গুলি করে হত্যা করেছে। তাই সহমর্মিতা জানাতে এসেছি। এখানে এরা সব আপনজনদের হারিয়েছে। তাদেরকে আর কোনদিন ফিরে পাবে না।
খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকার এখন উন্মাদ হয়ে গেছে। হিতাহিত জ্ঞান নেই। পাগলের মতো যা ইচ্ছা তা-ই করছে। এখন একমাত্র পথ বেছে নিয়েছে দেশের মানুষকে গুম, খুন ও হত্যা করার। যশোরে আমাদের যুবক ছেলে নাজমুলকে কিভাবে গুম করলো, পরে তার লাশ পাওয়া গেল। ইলিয়াস আলীকে গুম করলো, তাকে পাওয়া গেল না। আরও অনেক নাম আছে যা বলে শেষ করা যাবে না। কারও লাশ পাওয়া যাচ্ছে। কারও লাশ পাওয়া যাচ্ছে না। এ খুনি সরকার নিরাপত্তা দিতে পারে না। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে না। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, খাবার দিতে পারে না। শুধু মানুষ হত্যা-খুন করতে পারে। বিশ্বজিৎকে কিভাবে খুন করা হলো- আপনারা দেখেছেন। তাকে ঠিকমতো চিকিৎসা দেয়া হয় নাই। সময়মতো চিকিৎসা দিলে তাকে বাঁচানো যেতো।
খালেদা জিয়া বলেন, মানুষের জীবন এই সরকারের হাতে নিরাপদ নয়। আপনারা যদি নিজের বাড়িঘরে না থাকতে পারেন তবে এই সরকারের হাতে আপনাদের জীবন কি নিরাপদ? তখন সবাই বলেন, ‘না’। জনগণকে তিনি দাঁড়িয়ে বলতে বলেন, সবাই দাঁড়িয়ে জবাব দেন। তিনি বলেন, জনগণই বলছে, এই সরকারের কাছে তারা নিরাপদ নয়। এই সরকার খুনি। মিথ্যাচারী।
বিরোধী নেতা বলেন, পার্টি অফিসেও আমরা নিরাপদ নই। নয়াপল্টনে কিভাবে পুলিশ আক্রমণ করেছে আপনারা দেখেছেন। আমি কয়েকদিন আগে  আমার অফিসে ছিলাম। রাত সাড়ে ১১টা দিকে মোটরসাইকেলে এসে আমার অফিসের সামনে গুলি করেছে। কাজেই এই সরকার খুনি সরকার, দুর্নীতিবাজ সরকার। খালেদা জিয়া বলেন, দুর্নীতিকে ধামাচাপা দিতেই যুদ্ধাপরাধের বিচার  করছে । আমরাও বিচার চাই । তবে সে বিচার হতে হবে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের। যারা বিচার চাইছে তারা সরকার দলের লোক। তারা  রাস্তায় বিচার বসিয়ে দিয়েছে।
খালেদা জিয়া সারা দেশে গণহত্যার জনপদগুলোতে তার অব্যাহত পরিভ্রমণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, সারা দেশ ঘুরছি, আর দেখছি মা-বোনের চোখে পানি। আর চোখের পানি নয়, শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে রাজপথে নেমে আসুন। আমরাই বিচার করবো ওদের। শাস্তি তাদের হতেই হবে। আজ সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ। একদিকে খুনি সরকার, আর অন্যদিকে গোটা জাতি। খালেদা জিয়া বলেন, দ্রুত এ ব্যর্থ, খুনি ও লুটেরা সরকারকে বিদায় নিতে হবে। দেশ রক্ষার জন্য, গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে আসুন, আমরা ঐক্যবদ্ধ হই।
কলারোয়ার জনসভায় সভাপতিত্ব করেন সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সভাপতি হাবিবুল ইসলাম হাবিব। শোক সমাবেশে আরও বক্তৃতা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, ড. আবদুল মঈন খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান, নির্বাহী কমিটির সদস্য সাহারুজ্জামান মর্তুজা প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.