রাজনৈতিক গতি পরিবর্তন না হলে বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধ হবে

বর্তমান রাজনৈতিক গতিধারা পরিবর্তন না হলে রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধ ও জাতিগত সংঘাতে নিমজ্জিত হবে বাংলাদেশ। স্বাধীনতা যুুদ্ধের পর এদেশে চলছে আদর্শগত লড়াই। দৃশ্যত এ বছরের ডিসেম্বরের দিকে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের চেয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে দৃশ্যত কম গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
এ সময়ে ইসলামপন্থিরা ধর্মের কার্ড ছেড়ে দিয়েছে। দাঙ্গা পরিস্থিতি চলে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এসব কথা বলা হয়েছে লন্ডন থেকে প্রকাশিত অনলাইন ক্রিশ্চিয়ান টুডে’র একটি রিপোর্টে। বুধবার ‘ক্যাওয়াস থ্রেটেনস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই রিপোর্টে স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ নিহত হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়। বলা হয়, জামায়াতে ইসলামীর মতো ইসলামী গ্রুপগুলোর সাহায্য সহযোগিতায় পাকিস্তানি সেনারা যুদ্ধাপরাধ ঘটিয়েছে। সেই স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে এদেশে রাজনৈতিক ক্ষমতা আবর্তিত হচ্ছে ইসলামপন্থি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও আওয়ামী লীগের মধ্যে। এতে বলা হয়, আওয়ামী লীগ দৃশ্যত ধর্মনিরপেক্ষ। কিন্তু আসলে তারা তা নয়। ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর তারা পাকিস্তান হয়ে আফগানিস্তানে আগ্রাসী হামলা চালায়। বাংলাদেশের কট্টর ইসলামপন্থিরা ওই হামলাকে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আখ্যায়িত করে এর নিন্দা জানিয়েছিলেন। এর মধ্য দিয়ে এখানে ইসলামী আন্দোলন ত্বরান্বিত হয়। বাংলাদেশে ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের ক্ষোভের প্রতিফলন ঘটে। এতে দেখা যায়, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। কতিপয় কট্টর ইসলামী দলের সমন্বয়ে জোট গঠন করা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি ক্ষমতায় আসে। এ জোটে বিএনপির মূল অংশীদার কট্টর ইসলামপন্থি জামায়াতে ইসলামী। তারা আগে একটি আসনে বিজয়ী হয়েছিল। ২০০১-এর নির্বাচনে তারা ১৭টি আসন পায়। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে ১৪ দলীয় মহাজোট হিসেবে ক্ষমতা ফিরে পায় আওয়ামী লীগ। তারা নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল স্বাধীনতা যুুদ্ধের সময় যারা যুদ্ধাপরাধ করেছে তাদের বিচারে আদালত গঠন করবে। সে অনুযায়ী ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। এখন এ বছরের ডিসেম্বরের শেষের দিকে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন দৃশ্যত সেই বিচারের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। এ ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটছে যখন ইসলামীদের মধ্যে জাগরণ ঘটেছে এবং সুন্নিদের মধ্যে প্রবল শক্তি সঞ্চারিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচার শুরু হয়েছে এ বছরের জানুয়ারিতে। কিন্তু সন্দেহজনক ১৬০০ তালিকাভুক্ত অপরাধীর মধ্যে মাত্র ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। তারা সবাই বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা। তাদের বেশির ভাগই জামায়াতে ইসলামীর। বিচারে ধীরগতি ও লঘু শাস্তি দেয়ার অভিযোগ তুলে ৫ই ফেব্রুয়ারি ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসীরা আন্দোলন গড়ে তোলে। এতে নেতৃত্ব দেয় তরুণ ব্লগার ও শিক্ষার্থীরা। এর নাম দেয়া হয় শাহবাগের আন্দোলন। তারা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ফাঁসির দাবি তোলে। একই সঙ্গে দাবি তোলে জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধের। জামায়াতে ইসলামীর পরবর্তী অভিযুক্ত ব্যক্তিকে যেন মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগের ওপর সরকার হস্তক্ষেপ করে। এখন ইসলামপন্থিরা শাহবাগের আন্দোলনকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে ধর্মীয় কার্ড ছুড়ে দিয়েছে। ব্লগার, সাংবাদিক ও পথচারীরা প্রহৃত হয়েছেন। তাদের কাউকে কাউকে হত্যা করা হয়। ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। তারপর থেকে প্রায় ১০০ মানুষ সহিংসতায় নিহত হন। এতে দাঙ্গা ক্রমাগত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। যারা ইসলামের অবমাননা করেছে তাদের শাস্তি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দু’পক্ষই। ২৯শে মার্চ হাজার হাজার মুসল্লি ঢাকার রাজপথে নামাজ আদায় করেন। তারা ব্লাসফেমি আইন করার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তারা দাবি করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সদস্যরা দাবি করছেন ইসলাম অবমাননাকারী নাস্তিক ব্লগারদের গ্রেপ্তার করতে হবে। তারা ইসলাম অবমাননাকারীদের শাস্তির জন্য পার্লামেন্টে আইন করতে আন্দোলন করছেন। এ দাবি মেনে নেয়া না হলে তারা ২৫শে এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয় অবরোধের হুমকি দিয়েছে। ৩১শে মার্চ রোববার বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অফিসে গুলি করা হয়েছে। তবে তিনি তাতে আহত হন নি। আন্তর্জাতিক অপরাধ বিষয়ক আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান সতর্ক করেছেন ‘সমাধান বের করতে ব্যর্থ হলে দেশ গৃহযুদ্ধে নিপতিত হবে’। ৭ই মার্চ এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন এক রিপোর্টে বলেছে, সহিংসতা ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে। কট্টরপন্থিরা সংখ্যালঘু সমপ্রদায় ও তাদের সহায় সম্পত্তি টার্গেট করেছে। এই সংখ্যালঘুদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হচ্ছে। এতে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে- কেউই নিয়ন্ত্রণে নেই। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের উদ্দেশ্য ও সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন। সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু হিন্দু সমপ্রদায়ের ওপর আঘাতটা হচ্ছে বেশি। সহিংসতা যদি বাড়তে ও ছড়িয়ে পড়তে থাকে তাহলে খ্রিষ্টানরাও তা থেকে রেহাই পাবে না। তারা জনসংখ্যার মাত্র শতকরা ০.৬ ভাগ।

No comments

Powered by Blogger.