পুলিশের কান্না! পুলিশের কান্না!! পুলিশের কান্না!!!

সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ও মানুষের কল্যাণের ব্রত নিয়ে পুলিশের চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন মকবুল হোসেন। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের দুই হাত বিসর্জন দিয়েছেন এসআই মকবুল।
রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মঙ্গলবার এই কর্মকর্তাকে দেখতে যান পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার। খোঁজ নেন একই হাসপাতালে ভর্তি এসআই জাহাঙ্গীর আলমেরও। দুজনই সমপ্রতি জামায়াত-শিবিরের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে সেখানে চিকিৎসাধীন। এসময় পুলিশ প্রধানকে দেখে দুই কর্মকর্তা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, স্যার, পুলিশ হওয়াটাই কী আমাদের অপরাধ আমরা কী আগের মতো আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবো এসময় আইজিপি তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, আপনারা পুলিশ বাহিনীর গর্ব। আপনারা আগের মতোই দায়িত্ব পালন করবেন।
এসআই মকবুল হোসেনের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে এখন একটু ভালো। তার ডান হাতের কবজি পর্যন্ত ও বাম হাতের তর্জনি ছাড়া বাকি চারটি আঙ্গুল কেটে ফেলা হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলমের অবস্থাও আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে। জামায়াত-শিবিরের হামলার সময় তাদের সঙ্গে অস্ত্র থাকা সত্ত্বে তারা অস্ত্র ব্যবহার করেননি। হামলাকারীরা দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে যেভাবে পেরেছে মেরেছে। ইট, লাঠি, কিল, ঘুষি ও হেলমেট দিয়ে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এসআই জাহাঙ্গীর আলমকে মাথায় আঘাত করে মাটিতে ফেলে তার অস্ত্রটি কেড়ে নিয়ে যায় এক শিবির কর্মী। বেসরকারি টিভি চ্যানেলে এই ঘৃণ্য দৃশ্য দেখেছে মানুষজন। মঙ্গলবারও দিনাজপুরে হরতাল চলাকালে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা এসআই সবুরকে (৪৫) মোটর সাইকেল থেকে নামিয়ে নির্মম ভাবে পিটিয়েছে। ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে দিয়েছে। পুড়িয়ে দিয়েছে তার মোটর সাইকেলটি। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়। জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনকারী পুলিশের ওপর কেন এই পরিকল্পিত বর্বরোচিত হামলা এ প্রসঙ্গে শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, আমরা পুলিশ, এটাই আমাদের অপরাধ। পুলিশ জনগণের বন্ধু। এটাও আরেকটা অপরাধ। বন্ধুর পরিচয় দিতে গিয়েই অস্ত্র থাকা সত্ত্বেও আহত পুলিশ কর্মকর্তারা গুলি ছুড়ননি। গুলি ছুঁড়লে এভাবে মার খেতে হতো না। জীবনও পঙ্গু হতো না। আহত এসআই মকবুল হোসেনক দেখে এসে এক কর্মকর্তা বলেন, ও জিজ্ঞেস করেছিল ও আবারো চাকরিতে ফিরে যেতে পারবে কিনা। এ কথা বলতে বলতে ওই কর্মকর্তা কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, পুলিশকে সব সময়ই সরকারি দলের পেটোয়া বাহিনী বলে বিরোধী দল আখ্যায়িত করে। অথচ ক্ষমতায় গেলে ওই বিরোধী দলই আগের কথা ভুলে যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহত দুই পুলিশের চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখছেন। পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, পুলিশের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার লক্ষ্যে হামলাকারীরা এই বাহিনীকে টার্গেট করেছে। কিন্তু আমরা তা হতে দেবো না। পুলিশ সদস্যরাই মুক্তিযুদ্ধের সময় সবার আগে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জীবন দিয়েছে। সেই পুলিশ বাহিনীর মনোবল ভাঙ্গা এত সহজ নয়। হামলাকারীদের কোন অবস্থায় ছাড় দেয়া হবে না। এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় এসআই মকবুল হোসেনের বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আনছার আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে সন্তানদের লেখাপড়া করিয়েছি। চাকরি জীবনে অনেক মানুষের জীবন রক্ষা করেছি। মানুষের সেবা করার জন্যই ছেলেকে পুলিশে যোগ দিতে উৎসাহ দেই। দু:খের বিষয় এ দেশের মানুষেরই হামলায় আমার ছেলে আজ পঙ্গু। বাবা হয়ে এটা কীভাবে সহ্য করি। যেভাবে পুলিশে আসে মকবুল
সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণ শেষে শিক্ষানবিশ উপ-পরিদর্শক (পিএসআই) হিসেবে গত ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহীর মতিহার থানায় যোগ দেন মকবুল। ছোটবেলা থেকে বাবাকে পুলিশের পোশাকে দেখে নিজেও স্বপ্ন দেখতেন একদিন বাবার মতো হবেন। মানুষের সেবা করবেন। তার সেই স্বপ্ন পূরণও হয়েছিল। কিন্তু একটি ককটেল মকবুল ও তার পরিবারের স্বপ্ন ফিকে করে দিলো। সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করানোর জন্য সিরাজগঞ্জ থেকে রাজশাহী মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গায় বাড়ি করেন আনছার আলী। চার ভাইবোনের মধ্যে মকবুল দ্বিতীয়। বড়ভাই বাদল ঢাকায় বৈশাখী টেলিভিশনে কর্মরত। ছোট বোন তানিয়া রাজশাহী কলেজের মাস্টার্সের ছাত্রী। সবচেয়ে ছোট ভাই মেহেদী হাসান রাজশাহী পুলিশ লাইনস স্কুল এন্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। গত রবিবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সকালের নাস্তা শেষে ডিউটিতে বের হন মকবুল হোসেন। বেলা পৌনে ১১টার দিকে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন জামায়াত-শিবিরের ছোড়া ককটেলে দুই হাতের কব্জি হারানোর নৃশংসতম খবর।এ বছরই অবসরে যেতেন জাহাঙ্গীর আলম আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের এসআই জাহাঙ্গীর আলমের এবছরই অবসরে যাবার কথা ছিল। সরকারি চাকরির বয়স দুই বছর বাড়ানো হলে তার চাকরিও দুই বছর বেড়ে যায়। ডেপুটেশনে বোয়ালিয়া মডেল থানার অধীন উপশহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। জামায়াত-শিবিরের নাশকতার আশঙ্কায় তাকে সোমবার সকালে নগরীর শালবাগান মোড়ে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়া হয়। সেখানেই তিনি জামায়াত-শিবিরের নৃশংসতম হামলার শিকার হন। প্রকাশ্যে রাস্তায় ফেলে তাকে ইট ও হেলমেট দিয়ে মাথা থেঁতলে দেয়া হয়। তার বড় ছেলে ফয়সাল সিদ্দিকী রনি সম্প্রতি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাস করে এখন চাকরি খুঁজছেন। ছোট ছেলে নাজমুস সাদাত সনি শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধি।

No comments

Powered by Blogger.