আতঙ্ক! আতঙ্ক!! আতঙ্ক!!

দেশজুড়ে সংঘাত-সহিংসতা। কথায় কথায় ককটেল, বোমার বিস্ফোরণ। পুলিশের ওপর প্রকাশ্য হামলা। মহাসড়কে পুড়ছে গাড়ি। দাউ দাউ আগুনের শিখা ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। এ অবস্থায় ঘরে-বাইরে আতঙ্ক। সর্বত্র প্রশ্ন কি হতে যাচ্ছে দেশে? মিছিলকারী দেখলেই গুলি।
টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ। হরতাল, প্রতিবাদে এমন পরিস্থিতি। শহর থেকে গ্রাম কোথাও স্বস্তি নেই। সহিংস প্রতিবাদ, হামলা-মামলায় জড়াচ্ছেন  গ্রাম-গঞ্জের মানুষও। আজ আবারও হরতাল ডাকা হয়েছে। সামনে হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ। সংগঠনের সভাপতিকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দেশজুড়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও বিক্ষোভ করছে ছাত্রশিবির। আজ হরতাল পালন করবে জামায়াতের এ ছাত্র সংগঠন। তাদের কর্মসূচি অনেক জায়গায় সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে। নৃশংস হামলার শিকার হচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। আচমকা গাড়িতে আগুন দেয়া হচ্ছে। ভাঙচুর চালানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে দমবন্ধ অবস্থা চারদিকে। উদ্বেগ-আতঙ্কে ঘর থেকে বের হতে নিরাপদ বোধ করছে না মানুষ। হরতাল ছাড়াও গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামার আগে ভাবতে হচ্ছে অনেকবার। সংঘাত-সহিংসতায় ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে ওঠার উপক্রম। রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটার কোন লক্ষণ নেই। একের পর এক হরতাল আসছে। বিরোধী দল বলছে, সরকার পতনে আরও কঠোর কর্মসূচি দেবে। সরকারি দল নির্বিকার। বিক্ষোভ, প্রতিবাদ দমনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা অ্যাকশনে। গুলিতে, হামলায় মারা যাচ্ছে মানুষ। সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয়ে  হামলা, ভাংচুর হচ্ছে। সংঘাত সহিংসতার মাত্রা বাড়ছে দিন দিন। বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। গতকাল থেকে শুরু হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষা। ১০ লাখ শিক্ষার্থী এবার পরীক্ষা দিচ্ছেন। তারাও আছেন উৎকণ্ঠায়। তাদের দুশ্চিন্তা পরীক্ষা নিয়ে নয়, পরীক্ষা হবে কিনা- এ নিয়ে। সদ্যসমাপ্ত এসএসসি পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তন হয়েছে কয়েক দফায়। চলমান পরীক্ষা নিয়েও সেরকম আশঙ্কা। আজ ১৮ দলের হরতাল। এর আগে ছাত্রশিবিরও আলাদা হরতাল আহ্বান করেছে আজ। হরতাল ঘোষণা করে একদিন আগে থেকেই শিবির কর্মীরা হামলা, ভাঙচুর শুরু করে। বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষও হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে রোববার রাজশাহীতে বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্যের দুই হাতের কব্জি উড়ে যায়। গতকালও একই এলাকায় ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। এক পুলিশ সদস্যের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে পিটিয়ে আহত করেছে শিবির কর্মীরা। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় রাজশাহী থেকে ঢাকায় আনা হয়েছে। সংঘর্ষ হয়েছে  দেশের বিভিন্ন এলাকায়। হরতালের সমর্থনে গতকাল দুপুর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ভাঙচুরও করা হয়েছে। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাজধানীতে অন্তত ৮টি গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে দুপুরে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এটিএন নিউজের একটিসহ তিনটি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়। এছাড়া একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের বহনকারী একটি বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যায় আরও কয়েকটি স্থানে বাসে আগুন দেয়া হয়।
বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশে বিস্ফোরণ, মিডিয়ার গাড়িতে আগুন
বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশে বিস্ফোরণের ঘটনায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় নয়াপল্টন। সময় তখন দুপুর সোয়া বারোটা। বিরোধী নেতা খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে রোববার রাতে গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে সমাবেশ করছিল বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বক্তব্য শেষে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা সবাই শান্তিপূর্ণভাবে বাসায় চলে যান। কিন্তু ঠিক পর-মুহূর্তেই বিএনপি কার্যালয়ের উল্টো পাশে একটি সাদা প্রাইভেট কারে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। মুহূর্তের মধ্যেই একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে নয়াপল্টন। এ ঘটনায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা। এ সময় দুর্বৃত্তরা আরও দু’টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এর মধ্যে এটিএন নিউজের গাড়িতে চালককে ভেতরে রেখেই আগুন ধরিয়ে দেয় হয়। এতে চালকের মাথার চুল পুড়ে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যায়। বিএনপি কার্যালয়ে উল্টোদিকে রাস্তায় একটি সাদা প্রাইভেট কারে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার আগেই গাড়িটি ভস্মীভূত হয়ে যায়। ভাঙচুর করা হয় মাছরাঙা ও বৈশাখী টেলিভিশনের গাড়ি। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহভাজন এক বিএনপি কর্মীকে আটক করে। এরপর পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা রায়টকার ও জলকামান নিয়ে নয়াপল্টন এলাকায় টহল দেয়। তবে তারা কোন অ্যাকশনে যায়নি। এ সময় আতঙ্কিত নেতাকর্মীরা চারদিকে ছোটাছুটি শুরু করেন। সঙ্গে সঙ্গে ভাসানী ভবনের সামনে দুটি এবং ভিক্টোরি হোটেলে সামনের রাস্তায় দু’টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। ভীতসন্ত্রত লোকজন হুড়োহুড়ি করে দ্রুত নয়াপল্টন ত্যাগ করেন। পুরো এলাকা ফাঁকা হয়ে যায়। এ সময় বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানসহ দলের নেতারা দ্রুত দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন। এরপর কার্যালয়ের কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। এ ঘটনার ১০ মিনিট পর ফকিরাপুল মোড়ে পরপর দু’টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। পুরো নয়াপল্টন এলাকায় থমথমে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ ব্যাপারে পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সারওয়ার বলেন, বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবেই চলছিল। সমাবেশ শেষ হওয়ার পরপরই বিএনপি কর্মীরা তিনটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। পরিকল্পিতভাবে তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। পুলিশ সতর্ক অবস্থায় ছিল। তবে কোন ধরনের অ্যাকশনে যায়নি। তিনি আরও বলেন, হরতালের আগের দিন এভাবে গাড়ি পোড়ানোর মানে হয় না। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন একজন বিএনপি কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। পরে বেলা দুইটার দিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানসহ দলের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে  বের হয়ে যান।
‘হঠাৎ দেখি চারপাশে আগুন’
বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশের পরপরই দলীয় কার্যালয়ের পশ্চিম পাশে পার্ক করা অবস্থায় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় দৃর্বুত্তরা। এসময় চালক মো. সোলায়মান গাড়ির ভেতরে ঘুমিয়ে ছিলেন। আগুনে তার মাথার চুল পুড়ে যায় এবং কানসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যায়। আহত অবস্থায় মো. সোলায়মান মানবজমিনকে জানান, আমি গাড়ি পার্ক করে ভেতরে ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ দেখি আমার চারপাশে আগুন জ্বলছে। তখন আমি গাড়ি দরজা খুলে কোন রকমে বের হই। তবে আগুনে আমার মাথার চুল পুড়ে গেছে। কানসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যায়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
ফের রাজশাহীতে অস্ত্র ছিনিয়ে ৩ পুলিশকে পেটালো শিবির
স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, রাজশাহী নগরীর শালবাগান এলাকায় শিবিরকর্মীরা ফের পুলিশের এসআই ও দুই কনস্টেবলকে পিটিয়ে অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়েছে। এ সময় শিবির-পুলিশ সংঘর্ষে পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে তিন পুলিশ সদস্যের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের রামেক হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালায় শিবিরকর্মীরা।
প্র্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কেন্দ্রীয় সভাপতিকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে পূর্বনির্ধারিত বিক্ষোভের অংশ হিসেবে ছাত্রশিবির সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহী মহানগরীতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শালবাগান বাজার এলাকায় এলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় শিবিরকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি ককটেল নিক্ষেপ করে। পুলিশও পাল্টা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল ছোড়ে। এরপর শিবিরকর্মীরা একত্রিত হয়ে পুলিশ সদস্যদের ধাওয়া করে। তারা ধাওয়া করে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের এসআই জাহাঙ্গীর আলম (৩৫)কে ধরে ফেলে। শিবিরকর্মীরা বেধড়ক পিটিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন অংশ ইট দিয়ে থেঁতলে দেয় এবং ছিনিয়ে নেয় তার রিভলবার। এছাড়াও তাদের হামলায় আহত হন লতিফুল ও শফিকুল নামের অপর দুই আর্মড পুলিশ কনস্টেবল। তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার এস এম মনির-উজ-জামান জানান, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। মহানগরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর একই এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনে থেকে শিবিরকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিও করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল, রাবার বুলেট এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পরে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্রসহ এক শিবিরকর্মীকে আটক করেছে। বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি জিয়াউর রহমান জানান, পুলিশের খোয়া যাওয়া অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
অপরদিকে, রাজশাহী মহানগরীর বাটার মোড় এলাকায় গত রোববার সকালে পুলিশের ওপর হামলা এবং পুলিশের শিক্ষানবিশ উপ-পরিদর্শক (পিএসআই) মকবুল হোসেনের হাতের কব্জি উড়ে যাওয়ার ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের ৫৩৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।
মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে রোববার গভীর রাতে এ মামলা করেন। মামলায় মহানগর জামায়াত-শিবির ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৫০০ জনকে।
এদিকে, রোববার সংঘর্ষের পর আটককৃতদের মধ্যে এ মামলায় নয়ন, বেলাল ও রয়েল নামে তিনজনকে সোমবার গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এই তিন আসামিকে আদালতে পাঠিয়ে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে বলে জানায় পুলিশ।
মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, রোববার রাত সাড়ে ১১টায় জামায়াত কর্মী আটক করেছে পুলিশ। এরা হলেন- ছাতিয়ান গ্রামের মৃত হাজী রব্বানী বিশ্বাসের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪০) ও তোফাজ্জেল বিশ্বাসের ছেলে মহিবুল ইসলাম (৩৫)।
স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর থেকে জানান, রংপুরের দমদমা ও মিঠাপুকুর এলাকায় ককটেল ফাটিয়ে ৮টি যানবাহন ভাঙচুর করেছে শিবির। এতে আহত হয়েছেন ১০ জন। ঢাকায় শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে তারা এ ঘটনা ঘটায়।
নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, জলঢাকায় জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা ১টি ট্রাক ও ২টি বাস ভাঙচুর করেছে। এ সময় গোটা শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সূত্র জানায়, শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে উপজেলা জামায়াত-শিবির কর্মীরা শহরে মিছিল বের করে এবং রিশা ও জনতা পরিবহনের ২টি যাত্রীবাহী বাস এবং ১টি ট্রাক ভাঙচুর করে। এর প্রতিবাদে ট্রাক শ্রমিক ও জনতা শহরে বিক্ষোভ বের করলে জামায়াত-শিবির কর্মীরা গা ঢাকা দেয়। এ ঘটনায় রাতেই ট্রাক শ্রমিক নেতা জসিয়ার রহমান বাদী হয়ে উপজেলা জামায়াত-শিবিরের ৩৭ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন (নং-১৬)।
স্টাফ রিপোর্টার ময়মনসিংহ থেকে জানান, ময়মনসিংহে জামায়াত-শিবিরের ৭ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ময়মনসিংহের কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু মোহাম্মদ ফজলুল করিম জানান, বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের ৩৬ ঘণ্টার হরতালের দ্বিতীয় দিন ২৮শে মার্চ সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ জংশন রেল স্টেশনের ওয়াশ পিটে দাঁড়িয়ে থাকা বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব স্টেশনগামী যাত্রীবাহী ট্রেনের একটি বগি হরতাল সমর্থকরা পুড়িয়ে দেয়। ওই ঘটনায় এদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনীর ইসলামপুর রোড়ের মাথা থেকে শুরু করে পাঠানবাড়ী মোড়ে একটি সিএনজি, প্রাইভেট কার ও আরিফা পরিবহন নামে একটি মালবাহী ট্রাক ভাঙচুর করেছে শিবিরকর্মীরা। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় তারা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে ব্যারিকেড দেয়ার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ তাদেরকে ধাওয়া করলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে শিবিরকর্মীরা। এ সময় পুলিশ ৩ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করলে শিবিরকর্মীরা পালিয়ে যায়।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, ঝিনাইদহে শিবিরকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় শিবিরকর্মী সন্দেহে পুলিশ একজনকে আটক করেছে। শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতিকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গতকাল বিকাল ৩টার দিকে শহরের নতুন হাটের রাস্তা থেকে শিবির একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় শিবিরকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পুলিশ ব্যাপক টিয়ারশেল ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জ ও শর্টগানের গুলিতে ১০ জন আহত হন। পরে শিবিরকর্মীরা শহরের কাঞ্চননগর এলাকায় একটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটনায় বলে পুলিশ জানায়।
স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে জানান, বরিশালে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারশেল সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। এ সময় বিএনপি নেতা আলী হায়দার বাবুল, মনিরুজ্জামান ফারুকসহ ৭ জনকে আটক করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল হরতালের সমর্থনে এবং বেগম জিয়ার গুলশান অফিসে গুলি চালানোর প্রতিবাদে বিকাল ৫টায় বরিশাল বিএনপি অফিস থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিএনপি। মহানগর বিএনপির সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ারের নেতৃত্বে মিছিলে সহস্রাধিক নেতাকর্মী অংশ নেয়। মিছিলটি চকবাজার-লাইন রোড হয়ে আবার বিএনপি অফিসে এসে শেষ হয়। এসময় বিক্ষুব্ধ কর্মীরা একটি অটো ভাঙচুর করে। পুৃলিশ এক কর্মীকে আটক করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তাকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে শুরু হয় সংঘর্ষ। নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছোড়ে। পুরো সদর রোড এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আতঙ্কে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ ছোটাছুটি করতে থাকে। এ সময় পুলিশ বিএনপি অফিস থেকে ৭ জনকে আটক করে। শেষ সংবাদ পাওয়া পর্যন্ত মজিবর রহমান সরোয়ার এমপি অক্ষত আছেন। জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক হাফিজ আহমেদ বাবলু জানান, পুলিশ মিছিলের শেষ অংশে আকস্মিক হামলা চালায়। নিরীহ কর্মীদের বেধড়ক লাঠিচার্জ করে। এ পর্যায়ে তারা টিয়ারশেল ও গ্রেনেড চার্জ করলে তাদের ১০ কর্মী আহত হন।
ফরিদপুর থেকে সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুরে ছাত্রশিবির একটি ঝটিকা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। শহরের মুজিব সড়ক হতে মিছিলটি বের হয়ে জনতা ব্যাংকের মোড়ের দিকে যাওয়ার পথে স্বর্ণকারপট্টিতে এলে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি গাড়ী ভাঙচুর করে। মিছিলকারীরা সড়কটির একটি চশমার দোকান ভাঙচুর এবং কয়েকটি দোকানে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে  ইকবাল ও রায়হান নামে ২ মিছিলকারীকে গ্রেপ্তার করলে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া থেকে জানান, বগুড়ায় রাত ৮টায় একই সঙ্গে তেলিপুকুর, ইয়াকুবিয়ার মোড়, খান্দার, পিটিআই মোড় এবং বগুড়া প্রজন্ম থেকে ৬০ গজ দূরে পোস্ট অফিসের সামনে ১০টি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা একজনের চোখ উপড়ে গেছে। এছাড়া অন্য আরেকজন আহত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বগুড়া সাতমাথা বীরশ্রেষ্ঠ স্কয়ারের পাশে অবস্থিত প্রজন্ম মঞ্চ থেকে ৫০ গজ দূরে পরপর তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা একজনের চোখ উপড়ে গেছে। এছাড়া ওই স্থানে আরেকজন আহত হয়েছে। একই সময়ে তেলিপুকুর এলাকায় দুটি, ইয়াকুবিয়া স্কুলের সামনে দুটি, পিটিআই মোড়ে দুটি এবং খান্দার এলাকায় একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বগুড়া সদর থানার ওসি সৈয়দ শহীদ আলম জানান, হরতালের সমর্থনে জামায়াত-শিবির জনমনে ভীতি সৃষ্টির জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। পুলিশ-র‌্যাব শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় টহলে রয়েছে।
এ ঘটনার পর শহরে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। লোকজন প্রাণের ভয়ে দোকানপাট বন্ধ করেছে। নিমেষেই শহর ফাঁকা হয়ে যায়।
বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, বাগেরহাটে জামায়াতের জেলা সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ আবদুল ওয়াদুদ, জেলা নায়েবে আমীর মাওলানা রেজাউল করিমসহ ৪শ’ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। বাগেরহাট মডেল থানার এসআই সৈয়দ আশিকুর রহমান বাদী হয়ে রোববার রাতে দ্রুত বিচার আইনে এ মামলা করেন। রোববার সন্ধ্যায় জামায়াত-শিবিরের বিক্ষোভ মিছিল শেষে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বিআরটিসির একটি বাস ভাঙচুর করে।
স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে জানান, খুলনায় বিক্ষোভ, ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগ করে শিবির নেতাকর্মীরা। এসময় পর পর চারটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। সকালে খুলনা মহানগরীর খানজাহান আলী সড়কের টুটপাড়া মোড়ে শিবির মিছিল বের করে। এতে পুলিশ বাধা দিলে শিবিরের নেতা-কর্মীরা এ ঘটনায়। এ সময় একটি বাস, আটটি ইজিবাইক ভাঙচুর করা হয় এবং একটি ইজিবাইকে আগুন দেয়া হয়। এদিকে জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ও খুলনা মহানগরী নায়েবে আমীর অধ্যাপক আব্দুল মতিনসহ ৭৬ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বেলা ১১টার দিকে নগরীর শান্তিধাম মোড়স্থ আসমা ভিলা থেকে খুলনা থানা পুলিশ আবদুল মতিনকে গ্রেপ্তার করে। এছাড়া নগরীর দৌলতপুর থানায় ১৪ জন, খালিশপুর থানায় ৫ জন ও খুলনা সদর থানায় ৫ জনকে আটক করে। ডুমুরিয়া থানা পুলিশ ৪ জনকে আটক করেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৮০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয় বলে জানা গেছে।
বরুড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লার বরুড়ায় গতকাল ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঝটিকা মিছিল বের হয়। এ সময় থানা পুলিশ ২ জনকে গ্রেপ্তার করে। আটককৃতরা হলেন- উপজেলার আদ্রা ইউনিয়নের শিবির সভাপতি মো. মাসুম বিল্লাহ (১৮) ও খোশবাস ইউনিয়নের শিবিরের সাথী সাজ্জাত হোসেন (১৯)।
নাটোর প্রতিনিধি জানান, কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী, নিজামী ও মাওলানা সাঈদীসহ সকল আটককৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি, গণহত্যা বন্ধ, কেয়ারটেকার সরকার পুনর্বহাল ও আজকের হরতালের সমর্থনে নাটোরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইসলামী ছাত্র শিবির নাটোর জেলা শাখা। বিকালে শহরের হরিশপুর শেরেবাংলা হাইস্কুলের সামনে থেকে শুরু হয়ে মাদরাসা মোড় ঘুরে চকরামপুরে এসে সমাবেশের মাধ্যমে মিছিল শেষ হয়। এদিকে একই দাবিতে সোমবার সকালে মিছিল সমাবেশ করেছে বাগাতিপাড়া উপজেলা ছাত্রশিবির।

No comments

Powered by Blogger.