ডেট লাইন ৬ এপ্রিল: দিন যতই ঘনিয়ে আসছে হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ নিয়ে উৎকন্ঠা ততই বাড়ছে

ডেট লাইন আগামী ৬ এপ্রিল। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের লংমার্চ নিয়ে সকলের মাঝে বিরাজ করছে উৎকন্ঠা। আর এই নিয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী ও তৌহিদী জনতাও বেশ তৎপর হয়ে ঐক্যবধ্য হচ্ছে।
ফলে আইন শৃঙ্খলা  বাহিনীর ও প্রশাসন হয়ে উঠেছে ব্যপক বিচলিত। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সহ স্থানীয় প্রশাসন উপর মহল থেকে কখন কি নির্দেশ আসছে তা নিয়ে ব্যপক উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। যেহেতু হাটহাজারী মাদ্রাসা হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত সেহেতু হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক, বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক) চেয়ারম্যান এবং হেফজাতে ইসলাম বাংলাদেশ এর আমীর পীরে কামেল শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ্ আহ্্মদ শফীর আদেশে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সকল প্রকার কার্যক্রম ও বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, মিটিং-মিছিল এবং কর্মসূচীর সিদ্ধান্ত হচ্ছে এই মাদ্রাসা থেকে। হাটহাজারী মাদ্রাসা হতে হাটহাজারী মডেল থানার দুরত্ব মাত্র ২০০-২৫০ গজের মত। যার ফলে এই থানার দায়-দায়িত্ব আইন শৃঙ্খলার দিক দিয়ে খুবই বেশী। যদিও হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দরা তাদের দাবী-দাওয়া নিয়ে মিছিল মিটিং করার সময় পুলিশ প্রশাসন সবসময় নিরাপত্তা দিয়ে আসছিল। আগামী ৬ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অভিমুখি লংমার্চ প্রত্যাহার ও স্থগিত করার জন্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমকে ব্যবহার করেছে সরকার। তবে সরকারের এই সুপারিশ তথা অনুরোধ রাখতে নারাজ আল্লামা শাহ্ আহ্্মদ শফী। তার একটাই দাবী যতক্ষণ পর্যন্ত না সরকার আল্লাহ, রাসুল (স.) ও মুসলমানদের নিয়ে কটুক্তিকারীদের বিরোদ্ধে আইন প্রণয়ন তথা আইন পাস না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন চলতে থাকবে বলে জানান আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী। এছাড়া তিনি ব্লগারদের শাস্তি সহ ১৩ দফা দাবী মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহবান জানান।

৬ এপ্রিলের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই মুসলিম তৌহিদী জনতার মাঝে ব্যপক উৎকন্ঠ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি সরকারের পক্ষের লোকজন বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে আহমদ শফির স্বাস্থ্য খবর নিতে এসে লংমার্চ প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানিয়েও ব্যর্থ হচ্ছেন সব সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। হেফাজতে ইসলাম এখনো পর্যন্ত তাদের ডাকা আগামী ৬ এপ্রিল লংমার্চের সিদ্ধান্তে অনড়। লংমার্চ ঠেকাতে আবার অনেক ব্যক্তির তার অনুরোধ আল্লামা শাহ্ আহ্মদ শফি রাখবেন এমন বিশ্বাস নিয়ে হেফাজতে ইসলামের কার্যালয়ে এসে তার সাথে দেখা করার জন্য এসেও নিস্ফল হয়ে খালি হাতে ফিরে যেতে হয়েছে। এদিকে হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ সফল ও সার্থক করে তুলার জন্য কয়েকজন নেতৃবৃন্দ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। সারা দেশের তৌহিদী জনতার চোখ ৬ এপ্রিল লংমার্চের দিকে।

এদিকে হেফজাতে ইসলাম বাংলাদেশ এর উদ্যোগে  সোমবার (১ এপ্রিল) চট্টগ্রাম ঐতিহাসিক লালদিঘী ময়দানে অনুষ্ঠিত শানে রেসালত সম্মেলনে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলিম, ইসলামী চিন্তাবিদ ও হেফাজতে ইসলাম নেতৃবৃন্দ রাসূলের পবিত্র জীবনাদর্শ, রাসূলের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় উম্মতে মুহাম্মদীর করণীয় এবং ইসলাম ও মহানবীর প্রতি কটাক্ষকারীদের পরিণতি সম্পর্কে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে বক্তব্য পেশ করেন। বাদ যোহর থেকে শুরু হওয়া শানে রেসালত সম্মেলন রাত ১১ পর্যন্ত চলবে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাস-ট্রাক বিভিন্ন যানবাহন ভাড়া করে লাখো তাওহীদি জনতা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে।

সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, মুসলমানরা নিজের মাতা, পিতা, স্ত্রী, সন্তান, প্রিয়জন এমনকি নিজের জীবনের চাইতেও মহানবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বেশি ভালোবাসেন। স্বয়ং বিশ্বনবী হাদিসে ইরশাদ করেছেন, তোমরা যে পর্যন্ত মাতা-পিতা, সন্তান-সন্ততি সর্বোপরি পৃথিবীর সকল মানুষের তুলনায় আমাকে অধিক ভালো না বাসবে সে পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না। নবীপ্রেম ঈমানদার হওয়ার পূর্বশর্ত। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় রাসূলের সম্মান ও মর্যাদাকে সমুন্নত করার ঘোষণা দিয়েছেন। যেখানেই আল্লাহর নাম উল্লেখ হয়েছে সেখানেই পাশাপাশি রাসুলের নাম সমহিমায় স্থান পেয়েছে। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানবসন্তান, মানবতার মুক্তির দূত এবং উন্নত চরিত্র ও উত্তম আদর্শের শীর্ষস্থানে অধিষ্ঠিত। তিনি বলেন, রাসূলের অবমাননাকারী নাস্তিক-মুরতাদদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তাওহীদি জনতা ঘরে ফিরে যাবে না। ধর্ম অবমাননাকারীদের মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে। আগামী ৬ এপ্রিলের শান্তিপূর্ণ লংমার্চ সফল করে নবীপ্রেমের দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। নবীর দুশমনদের দেখিয়ে দিতে হবে, মুহাম্মদ সা.-এর সৈনিকদের বুকে এক ফোঁটা রক্ত থাকতে তারা রাসূলের অবমাননা সহ্য করবে না। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, কোনো তালবাহানা না করে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিজেদেরকে মুসলমান ও নবীর উম্মত হিসেবে পরিচয় দিন।অন্যথায় তাওহীদি জনতা আপনাদেরকে উচিত জবাব দেবে।

সিনিয়র নায়েবে আমীর আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বলেন, আমরা সরকারের গদি দখল করতে চাই না, ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্যে আমাদের আন্দোলন নয়। কিন্তু বর্তমান সরকার ধর্মদ্রোহীদের পক্ষাবলম্বন করছে, দেশের মুমিন-মুসলমান সাধারণ জনগণ এটা মেনে নেবে না। আমরা সরকারকে পরামর্শ দিব; এই আত্মঘাতী পথ থেকে ফিরে আসুন নয়তো আল্লাহর গজব এবং জনরোষের মুখে নিজেদের ধ্বংস অনিবার্য করে তুলবেন।

সরকারের মন্ত্রী, নেতৃবৃন্দ, বামপন্থীদের সমর্থক ও পৃষ্ঠপোষক কতিপয় গণ্যমাধ্যমের উদ্দেশে বলছি, নাস্তিক-মুরতাদদের বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতৃত্বে নবীপ্রেমিক তাওহীদি জনতার চলমান আন্দোলন সম্পর্কে মানুষকে বিভ্রান্ত না করে জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে শ্রদ্ধা করতে শিখুন।

সরকারের প্রতি হুশিয়ারী উচ্চারণ করে মাওলানা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, ৬ এপ্রিলের লংমার্চে কোনো প্রকার বাধা দেয়া হলে পর দিন থেকেই লাগাতার হরতাল আহ্বান করা হবে। নবীপ্রেমিক তাওহীদি জনতার লংমার্চের গাড়িবহরে যদি কোনো হামলা হয় লাখ লাখ মুসলমান দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। আইনশৃংখলা রক্ষকারী বাহিনীর ভাইদের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে; আপনারাও মুসলমান, প্রিয়নবীর উম্মত নবীর ইজ্জতের ওপর আক্রমণ এসেছে, সরকার নাস্তিক-মুরতাদদের বিচারে টালবাহান শুরু করেছে আপনারাও ঈমানী দায়িত্বের উর্ধে নন। আশেকে রাসূলদের এই শান্তিপূর্ণ লংমার্চ সফল করতে আমরা আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।

লংমার্চ কর্মসূচি স্থগিত করার জন্যে হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর কাছে প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ, মন্ত্রী হাসান মাহমুদের বিভিন্ন অনুরোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের দাবি-দাওয়া পূরণের ব্যাপারে কিছু না বলে আন্দোলনের কর্মসূচি বন্ধ করতে অনুরোধ করার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মন্ত্রী  বললেন, হেফাজতে ইসলামের বহু দাবির সঙ্গে তারাও একমত কিন্তু তা পূরণ করার জন্যে সময় লাগবে, অল্প সময়ে আইন পাস করা সম্ভব নয়। আমরা সরকারের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, জাতীয় সংসদে আপনাদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। নাস্তিক-মুরতাদদের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার শাস্তির আইন পাস করতে কালক্ষেপণের কোনো যুক্তি নেই। আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা বিশ্বাস কথাটি সংবিধান থেকে বাদ দিতে তো সময় লাগেনি আজকে নবীদ্রোহীদের শাস্তির প্রশ্নে সময়ক্ষেপণের কৌশল নিচ্ছেন কাকে খুশি করার জন্যে।

আল্লামা আবদুল মালেক হালিম বলেন, প্রিয়নবী মর্যাদা ও ইসলামের হেফাজত আল্লাহর ওপর অর্পণ যারা নাস্তিক-মুরতাদ ও নবীর দুশমনদের সঙ্গে আঁতাত রাখেন, তাদের প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতা দেন কেয়ামতের দিন তারা রাসূলের সুপারিশ থেকে বঞ্চিত হবেন। যারা বলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নাম শুনলে যাদের গায়ে জ্বালা ধরে তারা বলে বেড়াচ্ছেন, ‘ইসলাম হেফাজতের দায়িত্ব আল্লাহ তা’য়ালার; বান্দাকে ইসলাম হেফাজতের জন্যে কিছু করার দরকার পড়ে না।’ তারা জ্ঞানপাপী এবং শয়তানের দোসর। তাদের ব্যাপারে সাধারণ জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।

হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমীর আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মাওলানা হাফেজ তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেনÑপ্রখ্যাত আলিমেদ্বীন, আল্লামা আবদুল মালেক হালিম, সেক্রেটারী জেনারেল, মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী, দারুল মাআরিফের প্রিন্সিপাল, আল্লামা সুলতান যওক নদভী, জামিয়া আরবিয়া জিরির মুহতামিম, মাওলানা শাহ মুহাম্মদ তৈয়্যব, আল্লামা মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী আল্লামা হাফেজ আহমদুল্লাহ, নায়েবে আমীর, মাওলানা শামসুল আলম, আল্লামা সাজেদুর রহমান বি.বাড়িয়া, ড. আ.ফ. খালিদ হোসেন,আল্লামা আজিজুল হক আল মাদানী, মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেহপুরী, মাওলানা লোকমান হাকিম, মাওলানা সালাহুদ্দিন নানুপুরী, মাওলানা ইদরিস নাজিরহাট, মাওলানা মুফতি মাহমুদুল হাসান, মুফতি জসিমুদ্দিন, মাওলানা আনাস মাদানী, মাওলানা সলিমুল্লাহ, মাওলানা মুঈনুদ্দিন রূহী, সাংগঠনিক সম্পাদক, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মুফতি হারুন ইজহার, মাওলানা কাতেব ইলিয়াস উসমানী, কারী ফজলুল করিম জিহাদী, মুফতি আবদুল ওয়াহহাব, আলমগীল মাসউদ, হাফেজ মুজ্জাম্মেল হক, মাওলানা ইসমাইল খান মেখল, মুহাম্মদ আহসানুল্লাহ, খন্দকার হামিদুল্লাহ, আসেম ইবনে হারুন ইসলামাবাদী, আনোয়ার হোসেন রব্বানী, আহমদুল্লাহ, ইউনুস, মুহাম্মদ ইকবাল, জুনায়েদ, রায়হান প্রমুখ।

হেফাজতে ইসলামের আমীর হাটহাজারী মাদ্রাসার হওয়ায় লংমার্চে আল্লামা শাহ্ আহমদ শফীর যাত্রা হবে হাটহাজারী থেকেই। তাই এখন হাটহাজারী সাধারণ মানুষের মুখে আলোচিত হয়ে উঠছে ৬ এপ্রিল লংমার্চ। সরকারী ও বিরোধী দল, পুলিশ প্রশাসন, সাধারণ মানুষ সহ তৌহিদি জনতার মুখে শুধু মাত্র আলোচনা বয়ে যাচ্ছে লংমার্চকে নিয়ে।

No comments

Powered by Blogger.