শিবির সভাপতি গ্রেপ্তার সংঘর্ষ-ভাঙচুর, সড়ক অবরোধ

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মু. দেলোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজকের মধ্যে তাকে মুক্তি না দিলে আগামীকাল সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে সংগঠনটি।
শিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত গতকাল সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে জানান, কেন্দ্রীয় সভাপতির মুক্তির দাবিতে সোমবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। এবং কালই (আজ) তার মুক্তি না দিলে মঙ্গলবার সারাদেশে হরতাল পালিত হবে। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে শ্যামলীর এক আত্মীয়ের বাসা থেকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ দেলোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সামপ্রতিক হরতালে নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তাকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে নেয়া হয়। শিবির সভাপতির গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গতকাল বিকাল থেকে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করেন শিবিরের কর্মীরা। রাজধানীতে অন্তত ৫টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিভিন্ন স্থানে শিবির কর্মীরা মিছিল বের করলে সংঘর্ষ বাধে পুলিশের সঙ্গে।
এদিকে এ বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল জব্বার বলেন, সরকার অন্যায়ভাবে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতিকে গ্রেপ্তার করেছে। তাকে গ্রেপ্তার করে সরকার সারা বাংলাদেশের ছাত্র-জনতাকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে।
তিনি বলেন, শিবির সভাপতিকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে সরকার অন্ধের মতো মৌচাকে ঢিল ছুড়েছে। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা লাগাতার আন্দোলনসহ কঠোর কর্মসূচির দাবি জানাচ্ছে। অবিলম্বে শিবির সভাপতিকে নিঃশর্ত মুক্তি না দেয়া হলে সারা বাংলাদেশে লাগাতার হরতালসহ কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। ছাত্র-জনতা লাগাতারভাবে কঠোর আন্দোলন চালিয়ে যেতে প্রস্তুত। সরকার শিবির সভাপতিকে মুক্তি না দিলে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের মাধ্যমে সারাদেশ অচল করে দিয়ে সরকারের পতন ঘটানো হবে।

লক্ষ্মীপুরে শিবিরের ২০টি গাড়ি ভাঙচুর, সড়ক অবরোধ
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রোববার বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ করেন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। এর আগে শহরের দক্ষিণ তেমুহনী, আলিয়া মাদরাসা, চন্দ্রগঞ্জ, মান্দারী ও দালাল বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। এসময় তারা লক্ষ্মীপুর-ঢাকা মহাসড়কের মান্দারী, দালালবাজার ও শহরের দক্ষিণ তেমুহনীতে গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে রাখে। এছাড়া, টায়ারে অগ্নিসংযোগ ও বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এসময় চন্দ্রগঞ্জ বাজারে ৮টি, শহরের দক্ষিণ তেমহনীতে ১২টি ও দালাল বাজারে ২টি গাড়ি ভাঙচুর করে তারা।

বগুড়ায় শহর জামায়াতের সেক্রেটারি সহ ৩ জন গ্রেপ্তার
স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া থেকে জানান, বগুড়ায় পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষের ঘটনায় শহর জামায়াতের সেক্রেটারি মাজেদুর রহমান জুয়েলসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আনুমানিক দুপুর ২টায় জামায়াত-শিবির কর্মীরা শহরের পার্ক রোডের টিটু মিলনায়তনের সামনে মিছিলের জন্য প্রস্তুতি নেন। এসময় পুলিশ তাদের ধাওয়া করলে সংঘর্ষ বাধে। জামায়াত-শিবির কর্মীরা এ সময় পুলিশের ওপর ককটেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশ পাল্টা রাবার বুলেট ছোড়ে। ঘটনাস্থল থেকে ২ জন জামায়াত-শিবির কর্মীকে আটক করা হয়। পরে আটককৃত আসামিদের ছিনতাই করতে শহর জামায়াতের সেক্রেটারি মাজেদুর রহমান জুয়েল বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে একদল শিবির কর্মী নিয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হন। এসময় পুলিশ পাল্টা ধাওয়া করে জুয়েলকে আটক করে। পরে জামায়াত-শিবির কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
বগুড়া সদর থানার ওসি শহিদ আলম জানান, জামায়াত-শিবিরকর্মীরা মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। পুলিশ টের পেয়ে তাদের ধাওয়া করলে জামায়াত-শিবির কর্মীরা ৫/৬টি ককটেল সহ বৃষ্টির মতো ইট নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশ পাল্টা রাবার বুলেট ছোড়ে। ২জন জামায়াত-শিবির কর্মীকে আটক করে। শহর জামায়াতের সেক্রেটারি মাজেদুর রহমান জুয়েল বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে আসামি ছিনতাইয়ের জন্য পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এসময় তাকেও আটক করা হয়। জুয়েল পুলিশের মোস্ট ওয়ানটেড এবং জামায়াতের শীর্ষ ক্যাডার। তার উপর প্রজন্ম মঞ্চ ভাঙচুর, পুলিশের হামলা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলা রয়েছে। অপরদিকে বেলা সাড়ে ৪টায় শহরের তিনমাথা এলাকায় জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা অতর্কিতভাবে ১৫/২০টি ককটেল বিস্ফোরণ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এসময় তারা টিআর পরিবহনসহ অন্য একটি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয়। জামায়াত-শিবিরকর্মীদের ইটপাটকেলের আঘাতে ট্রাকের চালক ও হেলপারসহ প্রায় ১০/১৫ জন আহত হয় বলে স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, পরে এলাকাবাসী তাদের ধাওয়া করলে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়।

গাইবান্ধায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে জামায়াত-শিবিরের অবরোধ গাড়ি ভাঙচুর
উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি জানান, ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গতকাল ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের জুনদহ, মহেশপুর, গাইবান্ধার পলাশবাড়ি সড়কের মেডিকেল মোড় সহ তিনদিকে বিকাল ৫টা থেকে অবরোধ শুরু করেছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। পুলিশ জানায়, হঠাৎ করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এই সড়কগুলোতে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। অবরোধের ফলে ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চল, রংপুর থেকে ঢাকা এবং গাইবান্ধা থেকে সকল প্রকার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় বিক্ষুব্ধ জামায়াত-শিবির কর্মীরা ১টি মোটরসাইকেল ও ৩টি বাস ভাঙচুর করে। রাস্তার তিনদিকে শ’ শ’ যানবাহন আটকা পড়েছে। পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ পলাশবাড়ি চৌমাথায় অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়।

ঝিনাইদহে শিবিরের বিক্ষোভ মিছিল, ভাঙচুর
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেনের গ্রেপ্তার প্রতিবাদে ঝিনাইদহে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে শিবির ক্যাডাররা। তারা লাঠিসোটা নিয়ে রোববার বিকালে শহরের পুরাতন ডিসি কোর্ট চত্বর থেকে একটি মিছিল বের করে। মিছিলকারীরা এইচএসএস সড়কের দু’পাশে ফুলের টব ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংবলিত ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ভাঙচুর এবং ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। তাদের এ তাণ্ডব দেখে শহরের সাধারণ লোকজন দোকানপাট বন্ধ করে দিগ্বিদিক ছুটাছুটি করে। তারা অসংখ্য বড় বড় ফুলের টব ভেঙে ও ইটপাটকেল ফেলে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। খবর পেয়ে পুলিশ এলে শিবির কর্মীরা পালিয়ে যায়। পরে কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা কাজী এনামুল হক মিলনের নেতৃত্বে শহরে এক প্রতিবাদ বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ ঘটনার পর শহরে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

খুলনায় শিবিরের গাড়ি ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ
স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে জানান, কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে খুলনায় ব্যাপক বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে তাণ্ডব চালিয়েছে ছাত্রশিবির। এসময় পর পর ছয়টি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় খুলনায় বিক্ষুব্ধ শিবির কর্মীরা নগরীর খানজাহান আলী সড়কে দু’টি ট্রাক, দু’টি পিকআপ ও চারটি ইজিবাইক ভাঙচুর করা হয়। এসময় শিবির কর্মীরা ককটেল ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। শিবিরের তাণ্ডবে গোটা এলাকা জনশূন্য হয়ে পড়ে। পথচারীরা দিগ্বিদিক ছুটাছুটি করতে থাকে। ঘটনার পরপরই পুলিশ আসলেও কাউকে আটক করতে পারেনি।

নোয়াখালীতে এসপির গাড়িতে হামলা
স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী থেকে জানান, নোয়াখালীতে জামায়াত-শিবিরের হামলায় পুলিশ সুপারের গাড়ি আক্রান্ত হয়েছে। এতে তার স্ত্রী-পুত্র ও পুলিশসহ অর্ধ শতাধিক আহত হয়েছেন। ১ ডজন গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় ২ মাদরাসা শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, গতকাল রোববার সন্ধ্যায় জামায়াত-শিবির কেন্দ্রীয় সভাপতি গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে মাইজদী শহরের দত্তের হাট বাজারে একটি জঙ্গি মিছিল বের করলে নোয়াখালী পুলিশ সুপারের গাড়ি তার স্ত্রীসহ ২ শিশু সন্তানকে কোচিং করে বাসায় ফেরার প্রাক্কালে হামলা ও ভাঙচুরের শিকার হয়। এক পর্যায়ে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করলে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে দাঙ্গা পুলিশ এসে গ্লাসের আঘাতে আক্রান্ত পুলিশ সুপার মাহবুবুর রশিদ ভুট্টোর স্ত্রী ও ২ শিশু পুত্রকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়। এসময় তারা আরও বেপরোয়া হয়ে ১ডজন পিকআপ ও যাত্রীবাহী গাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। গোলযোগ চলাকালে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের হাতে ইট ও ককটেলের আঘাতে দাঙ্গা পুলিশের সজীব কুমার নাথ, বেলাল হোসেন সহ ১০ জন আহত হয়। ঘটনা চলাকালে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহৃত হয়। দত্তের হাট এলাকায় তাণ্ডব চলাকালে ব্যবসায়ীরা ভয়ে প্রতিষ্ঠান তালা মেরে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করেন। পুলিশ ও জামায়াত-শিবিরের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় অর্ধ শতাধিক যাত্রীসাধারণ আহত হন। আশংকাজনক অবস্থায় পুলিশের সজীব কুমার নাথসহ কয়েকজনকে নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হাসান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি দুঃখ জনক। উল্লিখিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত কবিরহাট নাজির মিয়া নুরানী মাদরাসার শিক্ষক কবির হোসেন ও জীরতলী কুতুবপুর মাদরাসার শিক্ষক ইব্রাহিম খলিলকে আটক করা হয়েছে। রাতভর অভিযান শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কুমিল্লায় পুলিশ ও জামায়াত-শিবির সংঘর্ষে আহত ১৬, গ্রেপ্তার ৬
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে: কুমিল্লায় পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবির কর্মীদের সংঘর্ষে পুলিশের দু’ এসআই ও এক কনস্টেবলসহ কমপক্ষে ১৬ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ জামায়াত-শিবিরের ৬ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের ওপর হামলা ও নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে দ্রুত বিচার আইনে পুলিশ বাদী হয়ে গতকাল জামায়াত-শিবিরের গ্রেপ্তারকৃত ৬ নেতা-কর্মীসহ ১৫০ জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় পৃথক ২টি মামলা হয়েছে। এদিকে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গতকাল জেলা জামায়াতের পক্ষ থেকে আজ সোমবার কুমিল্লায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করে দুপুরে হরতালের পক্ষে বিক্ষোভ মিছিল করলেও পরে গতকাল সন্ধ্যার দিকে আহূত হরতাল প্রত্যাহার করে নেয় জেলা জামায়াত।

No comments

Powered by Blogger.