৪ বিচারপতির শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেননি সিনিয়র বিচারপতিরা

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নবনিযুক্ত চার বিচারপতি শপথ নিয়েছেন। বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার-উল হক, বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী গতকাল সকালে শপথ গ্রহণ করেন।
প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন তাদের শপথবাক্য পাঠ করান। তবে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত এ শপথ অনুষ্ঠানে হাইকোর্ট বিভাগের সিনিয়র বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন না। জ্যেষ্ঠতার দিক থেকে উপরের দিকে থাকা প্রায় ৪০ জন বিচারপতি এ শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। শপথ অনুষ্ঠান চলাকালে জাজেস লাউঞ্জের সামনে এবং সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। এদিকে, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগের প্রতিবাদে গতকাল দিনভর বিক্ষোভ করেছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা। সকালেই আইনজীবীরা বিক্ষোভ মিছিলসহ সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের দিকে এগোতে থাকেন। এক পর্যায়ে ভবনের গেটে সুপ্রিম কোর্টের কর্মচারীরা তালা লাগিয়ে দেয়। তখন আইনজীবীরা সংযোগ সেতুতে বসে পড়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করে। দুই ঘণ্টা ধরে চলা এ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন  খোকন, সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল প্রমুখ। এসময় জয়নুল আবেদিন বলেন, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে আপিল বিভাগে বিচারক নিয়োগ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে একজন বিতর্কিত বিচারকও রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে অভিযোগ রয়েছে। ওই বিচারকদের শপথ দেয়ায় তিনি প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের পদত্যাগ দাবি করেন। বিক্ষোভে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, প্রধান বিচারপতি আজ সুপ্রিম কোর্টের গেটে তালা দিয়েছেন। এটা পুরো জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। সংযোগ সেতুর বিক্ষোভ শেষে আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের দক্ষিণ হলে মিলিত হন। সেখানে আজ বিক্ষোভ এবং কালোব্যাজ ধারণের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ওদিকে, শপথ অনুষ্ঠানের পর নবনিযুক্ত চার বিচারপতিকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। এতে সরকার সমর্থক আইনজীবীরা যোগ দেন। চার বিচারপতিকে পৃথক বক্তব্যে অভিনন্দন জানান এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি কেএম সাইফুদ্দিন। সংবর্ধনার জবাবে বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার-উল হক বলেন, মানুষ হিসেবে আমি ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নই। তাই আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। আপনাদের সহযোগিতা পেলে বিচারপ্রার্থীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবো। বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া তার বক্তব্যে বিচারকাজ চালিয়ে নিতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।  বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্য আজ আমরা সবাই যার যার অবস্থানে আসতে পেরেছি। এই দেশ না হলে আমরা আমাদের এই অবস্থানে আসতে পারতাম না। আজকে তাই প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা রাষ্ট্রকে কি দিচ্ছি। তিনি বলেন, জাতি সাহসী ও স্বাধীন উচ্চ আদালত চায়। আজ সবাই মিলে বিচার বিভাগকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সবার উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই, বিচার আইন অনুসারেই হবে ইনশাআল্লাহ। বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, হাইকোর্টে বিচার করার সময় আমরা ভাবতাম, আমাদের উপরে আরেকটি  কোর্ট আছে। আপিল বিভাগ হচ্ছে সর্বোচ্চ জায়গা। তাই এখানে ভুল ভ্রান্তির কোন অবকাশ নেই। যে শপথ বাক্য আমি পাঠ করেছি, তার উপর যেন দৃঢ় থাকতে পারি। জুডিশিয়াল অ্যাক্টিভিজমের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাহস বিচারপতিদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত। নতুন বিচারপতি নিয়োগের পর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার শুনানি গ্রহণের জন্য বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের এ বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি এসকে সিনহা, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।

No comments

Powered by Blogger.