অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট অনুপস্থিত কেন?

অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ এডভোকেটকে রহস্যজনক কারণে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানাদি থেকে সরিয়ে রাখা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য বিদেশী নাগরিকদের দেয়া সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রেসিডেন্টের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তাকে সেই অনুষ্ঠানে নেয়া হয়নি।
এমনকি স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রতিবছর প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে কূটনীতিক ও বিশিষ্ট নাগরিকদের জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়, এবার সেটি বাতিল করা হয়েছে। অনেকেই এটাকে প্রেসিডেন্টের পদের জন্য সম্মানহানিকর বলে অভিমত দিয়েছেন। তারা বলেছেন, প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে যিনিই থাকুন না কেন, তার যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা নিশ্চিত করা উচিত।
সংবিধানে নিয়মিত প্রেসিডেন্ট ও অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা, এখতিয়ার ও মর্যাদার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে মরহুম জিল্লুর রহমান যে ধরনের ক্ষমতা, এখতিয়ার ও মর্যাদার অধিকারী ছিলেন, এ পর্যায়ে সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে আবদুল হামিদ এডভোকেটও অনুরূপ ক্ষমতা, এখতিয়ার ও মর্যাদার অধিকারী। যদিও নিতান্ত ব্যক্তিগত কারণে তিনি প্রেসিডেন্টের রাষ্ট্রীয় আবাস বঙ্গভবনে ওঠেননি। যথারীতি জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্পিকার হিসেবে যে বাড়িতে তিনি গত চার বছর ধরে বসবাস করে আসছেন, অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবেও থাকছেন সেখানেই। অফিসও করছেন সংসদ ভবনে স্পিকারের দপ্তরে।
তবে প্রথাগত রাষ্ট্রীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ প্রশ্নে বর্তমান অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের বেলায় ইতিমধ্যেই ব্যত্যয় ঘটেছে বলে কথা উঠেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখা বিদেশী নাগরিকদের সম্মাননা দেয়া হয়েছে গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। এ অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে বলা হয়েছিল যে, ‘রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে অতিথিদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেবেন।’ এর আগে গত বছর স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুরূপ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান। কিন্তু গতকালের অনুষ্ঠানে শেষ পর্যন্ত অতিথিদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে থাকা আবদুল হামিদ এডভোকেটকে দেখা যায়নি ওই অনুষ্ঠানে।
অন্যদিকে প্রতিবছর ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে কূটনীতিক ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সম্মানে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। কিন্তু এবারের স্বাধীনতা দিবসে এ ধরনের কোন আয়োজন থাকছে না। ফলে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে আবদুল হামিদ এডভোকেট আগামীকাল মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে সকাল বেলায় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে তার অন্য কোন কর্মসূচি নেই বলে জানা গেছে।
বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিদায় এবং পরে প্রেসিডেন্ট ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের দীর্ঘ অসুস্থতার কারণে তৎকালীন পার্লামেন্টের স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার দু’দফায় বেশ কিছুকালের জন্য অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালন করেন। তখন অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি বঙ্গভবনে নিয়মিত অফিস করার পাশাপাশি প্রেসিডেন্টের অন্য সব প্রথাগত দায়িত্ব ও আচার-আনুষ্ঠানিকতায় যথারীতি অংশ নিয়েছিলেন।
ওদিকে আমার স্টাফ রিপোর্টার জানান, এ সপ্তাহেই বঙ্গভবনে অফিস করবেন অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ। নিজের ঘনিষ্ঠজনদের এমনটা জানিয়ে তিনি বলেছেন, সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এখন শুধু যাবো। সব কাজ অফিস কক্ষে বসেই করতে চাই। যত দিন দায়িত্ব পালন করি তত দিন নিষ্ঠার সঙ্গে করতে চাই। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বঙ্গভবনে যাওয়ার গুরুত্ব বোঝানোর পর সেখানে অফিস করতে রাজি হয়েছেন অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট। রাষ্ট্রের জন্য প্রেসিডেন্টের কি কি দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে তা ভালভাবেই বুঝে নিয়েছেন অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ। কোন বিষয়ে বুঝতে সমস্যা হলে এখনও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিবের মাধ্যমে বিভিন্ন পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জেনে নিচ্ছেন। প্রয়োজন মনে করলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সিনিয়র কোন কর্মকর্তাকে ডেকে নিয়ে যাচ্ছেন। ওদিকে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে সংবিধানের ৭৪ (৩) ধারা সম্পর্কে অস্থায়ী প্রেসিডেন্টকে বোঝানো হয়েছে। ওই ধারায় বলা হয়েছে, ‘স্পিকারের পদশূন্য হইলে বা তিনি রাষ্ট্রপতিরূপে কার্য করিলে কিংবা অন্য কোন কারণে তিনি স্বীয় দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বলিয়া সংসদ নির্ধারণ করিলে স্পিকারের সকল দায়িত্ব ডেপুটি স্পিকার পালন করিবেন, কিংবা ডেপুটি স্পিকারের পদও শূন্য হইলে সংসদের কার্যপ্রণালী-বিধি অনুযায়ী কোন সংসদ সদস্য তাহা পালন করিবেন; এবং সংসদের কোন বৈঠকে স্পিকারের অনুপস্থিতিতে ডেপুটি স্পিকার কিংবা ডেপুটি স্পিকারও অনুপস্থিত থাকিলে সংসদের কার্যপ্রণালী-বিধি অনুযায়ী কোন সংসদ সদস্য স্পিকারের দায়িত্ব পালন করিবেন।’ ওদিকে সংবিধানের ১২৩ (২) অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রেসিডেন্ট পদ শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। ওই হিসেবে আগামী ১৯ জুনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হবে। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মৃত্যু, পদত্যাগ বা অপসারণের ফলে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে পদটি শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে, তাহা পূর্ণ করার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রেসিডেন্ট সরাসরি ভোটে নয়, সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। তবে তফসিল ঘোষণাসহ এই নির্বাচন পরিচালনা করে নির্বাচন কমিশন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দলের প্রতি অনুগত এবং অঙ্গীকারবদ্ধ এমন কোন প্রবীণ নেতাকেই এ পদে বসানোর চিন্তাভাবনা এখনও চলছে। বিশেষ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কড়া নাড়ছে। এছাড়া বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশও অস্থিতিশীল। তাই দলের শীর্ষ পর্যায়ের ওপর বিশ্বস্ত এমন কাউকেই প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেয়া হবে বলে দলীয় নীতি নির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া সংবিধান অনুসারে প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেয়ার পরবর্তী পাঁচ বছর তিনি দায়িত্ব পালন করবেন। ওই হিসাবে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে এসে নতুন প্রেসিডেন্টের আগামী পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। কারণ, সংবিধানের ৫০(১) ধারা অনুসারে প্রেসিডেন্ট কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে তাঁর পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। তবে শর্ত হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তাঁর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকবেন।

No comments

Powered by Blogger.