খালেদার বক্তব্য নিয়ে নানা হিসাব নিকাশ

বিরোধী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে দেশব্যাপী। অনেকেই হিসাব মেলাচ্ছেন দেশে কি দ্রুত কিছু ঘটতে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী নিয়ে খালেদা এতো খোলামেলা বক্তব্য রাখেননি কখনও।
তাছাড়া তিনি এমন এক সময়ে এই বক্তব্য রাখলেন যখন দেশজুড়েই জননিরাপত্তার অভাব প্রকট। রাজনীতি বন্দি হয়ে গেছে পুলিশের বন্দুকের নলের মুখে। বিরোধী মত বা কণ্ঠকে স্তব্ধ করার সাঁড়াশি চেষ্টা চলছে। অর্থনীতি প্রায় পঙ্গু। একদিকে সীমাহীন লুটপাট অন্যদিকে হরতাল-অবরোধে কাবু হয়ে পড়েছে গোটা অর্থনীতি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অশান্তির কালোছায়া। দেশী বিদেশী বিনিয়োগ একদম বন্ধ। শেয়ার বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। প্রচণ্ড দলীয়করণের কারণে প্রশাসন অনেকটা অকার্যকর হয়ে গেছে। বিদেশে বাংলাদেশের ইমেজ নানা প্রশ্নের মুখে। বিশেষ করে পশ্চিমা দুনিয়ায় বাংলাদেশ এখন একটি ভীতিকর রাষ্ট্রের তকমা পেয়ে গেছে। মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক হিম শীতল। ৫৫টি মুসলিম দেশের মধ্যে প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে শোকবার্তা এসেছে হাতেগোনা। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশ এখন কোথায় দাঁড়িয়ে। খালেদা জিয়া ‘সেনাবাহিনী বসে থাকবে না’ এটা কোন প্রেক্ষাপটে বলেছেন তা কিন্তু স্পষ্ট নয়। তবে তার বক্তৃতার ধরন দেখে মনে হয় তিনি সামনে রাজনৈতিক কোন সমঝোতার পথ দেখছেন না। সরকার তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে নড়বে না। আর তত্ত্বাবধায়ক না হলে খালেদা নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া অর্থহীন। তাছাড়া তার দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেভাবে মামলা আর রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে তাতে তিনি বোধকরি বিচলিত। দেয়ালে পিঠ ঠেকার মতো। এই অবস্থায় তার সামনে বিকল্প কি? কেউ কেউ অবশ্য বলছেন খালেদার সঙ্গে সেনাবাহিনীর সম্পর্কে চিড় ধরেছিল ওয়ান ইলেভেন জমানায়। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার দুই পুত্রের ওপর সীমাহীন নির্যাতন চালানো হয়। নির্বাসনে পাঠানো হয়। তারেক রহমান কবে সুস্থ হবেন চিকিৎসকরাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। মামলা-মোকদ্দমা দিয়েও তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখা হয়েছে। সে কারণে তারেক রহমান বিলেতে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন। বৃটিশ সরকার সম্প্রতি তার আবেদন মঞ্জুর করেছেন-তাই জানা যায় ঘনিষ্ঠ মহল থেকে।
ওয়ান ইলেভেনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় জিয়া পরিবার। খালেদা জিয়া সম্ভবত এ কারণেই সেনাবাহিনীর একটি অংশ নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্যই রেখে আসছিলেন এতকাল। এখন তিনি চাইছেন সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে। তাছাড়া স্পর্শকাতর নানা স্থানেও দেশের হাওয়া বইছে। অস্থিরতার মধ্যে সরকার সুযোগ নিতে চাচ্ছে। অন্ধ দলীয়করণের চেষ্টা চালাচ্ছে। এর ফলে খবরাখবর যা পাওয়া যাচ্ছে তাতে মনে হয় রাজনীতির মাঠে আচমকা কিছু যোগ হতে চলেছে। এ সবই ধারণা কিংবা বিশ্লেষকদের মতামত। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, সরকারকে আরও চাপে ফেলতেই হয়তোবা খালেদা এই কৌশল নিয়ে থাকতে পারেন।
বলাবলি আছে তৃতীয় পক্ষকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে দুই শিবির থেকেই। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নন। অন্য কেউ নিয়ে গেলে আপত্তি নেই। ২০০৬ সালে যা ঘটেছিল এবার আরও যে খারাপ এতে কোন সন্দেহ নেই। ন’মাসের মাথায় নির্বাচন হবে। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে। এই সময়ের মধ্যে সরকার কোন সমঝোতার পথে আসছে না বলেই মনে হয়। এমনকি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়েও কোন আলোচনা হচ্ছে না। যদিও একটি ঐতিহাসিক সুযোগ এসেছিল শাসক দলের জন্য। সে সুযোগও হাতছাড়া হতে যাচ্ছে সরকারের একপেশে চিন্তার কারণে। এক বছর হতে চললো উন্নয়ন প্রক্রিয়া প্রায় বন্ধ। সরকার যদি মনে করেন উন্নয়ন কাজ শেষ। এখন শুধু যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা করবেন তা হলে একটাই বলার আছে-ইতিহাস বড় নিষ্ঠুর।

No comments

Powered by Blogger.