৪ এপ্রিল সারা দেশে বিক্ষোভ, প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি এবং জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধসহ ৬ দফা দাবিতে ৪ এপ্রিল সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গণজাগরণ মঞ্চ।
ওই দিন সকাল ১১টায় গণজাগরণ চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি পেশ করা হবে। একই সময়ে সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া ৩১ মার্চ সকাল ১১টায় সংসদ অভিমুখে গণপদযাত্রা বের হবে গণজাগরণ চত্বর থেকে। এ পদযাত্রা থেকে গণজাগরণ চত্বরসহ সারা দেশ থেকে সংগৃহীত গণস্বাক্ষর সম্বলিত দাবিনামা তুলে দেওয়া হবে জাতীয় সংসদের স্পিকারের হাতে। গণজাগরণ চত্বরে ৫ এপ্রিল বিকেল ৪টায় প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ৬ এপ্রিল বিকেল ৪টায় গণসমাবেশ কর্মসূচিরও ডাক দিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ।

শাহবাগ গণজাগরণ চত্বরে চলমান গণআন্দোলনের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার মুক্তিযোদ্ধা-জনতা মহাসমাবেশ থেকে গণআন্দোলনের নতুন এসব কর্মসূচি ঘোষণা করেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার।

মঙ্গলবার বিকেল সোয়া ৩টায় টাঙ্গাইলের বাহাদুর মিয়ার নেতৃত্বাধীন দলের সারি গানের মধ্যে দিয়ে এ মুক্তিযোদ্ধা-জনতা মহাসমাবেশ শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। সমাবেশের ফাঁকে ফাঁকে প্রতিদিনের মতো চলে প্রতিবাদী গান ও স্লোগান।

স্বাধীনতার ৪২ বছর পূর্তির এ মহাসমাবেশ কর্মসূচিতে অংশ নেন মুক্তিযোদ্ধাসহ হাজারো জনতা। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ছাত্র সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মীও জড়ো হন গণজাগরণ চত্বরে।

মহাসমাবেশে একাত্মতা প্রকাশ করে নতুন প্রজন্মের ৪২ জন তরুণ-তরুণীর হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

ইমরান এইচ সরকারের হাতে পতাকা ‍তুলে দেন মুক্তিযুদ্ধের উপ প্রধান সেনাপতি পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল(অব.) একে খন্দকার।

নতুন প্রজন্মের কাছে পতাকা তুলে দেওয়ার পর তরুণ প্রজন্মের পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধা-জনতা মহাসমাবেশে আসা সকল মুক্তিযোদ্ধার হাতে প্রদীপ তুলে দেন গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠকরা। এ সময় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে’ গানটি পরিবেশন করা হয়।

প্রদীপ হস্তান্তরে তরুণ প্রজন্মের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ডা. ইমরান এইচ সরকার।

এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, সাইফুল ইসলাম রঞ্জু, রাহেলা বেগম, এয়ার ভাইস মার্শাল(অব.) একে খন্দকার, মেজর জেনারেল (অব.) একে শফিউল্লাহ, লে. কর্নেল(অব.) আবু ওসমান চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ চৌধুরী, সৈয়দ মো সামসুল কুতুব।

আরো উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা এমদাদ হোসেন মতিন, আব্দুল হাই সিকদার, নুরুল আলম, সাংবাদিক আবেদ খান, শফিউল বারি, সৈয়দ রফিকুল ইসলাম, হাফিজুর রহমান, নুর হোসেন, অরুণ কুমার, সাইফুল ইসলাম তারা, ফরিদ উদ্দিন, লে. কর্নেল (অব.) নুর নবী খান, ইসমত জামান, হাফেজ বাবু, আনোয়ার, আবেদা সুলতানা বকুল, শিরিন আক্তার, রতনা, শাহানা, মিনু হক, আতাউর রহমানসহ আরো অনেক মুক্তিযোদ্ধা।
এছাড়া মহাসমাবেশে এসে একাত্মতা জানান ১৪ জন নারী মুক্তিযোদ্ধাও। একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার এসব নারী মুক্তিযোদ্ধারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসেন।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর তত্ত্বাবধানে সাফিনা লোহানীর সঙ্গে সিরাজগঞ্জ থেকে ১০ জন নারী মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে যোগদান করেন।

সিরাজগঞ্জের সেফ হোম থেকে আসেন সূর্য বেগম, রাহেলা বেগম, করিমন বেগম, নুর জাহান বেগম, আয়েশা বেগম, রাজু বালা, শামসুন নাহার, রহিমা, জোসনা ও মাহেলা বেওয়া। এছাড়া গোপালগঞ্জ থেকে শেখ ফাতেমা আলী, যশোর থেকে মোমেনা বেগম, নারিন্দা থেকে সাফিয়া বেগম ও যশোর থেকে রাইসা বেগম আসেন মহাসমাবেশে।

মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধের উপ প্রধান সেনাপতি পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল(অব.) একে খন্দকার, নারী মুক্তিযোদ্ধা সূর্য বেগম, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু, ছাত্রঐক্যের আহ্বায়ক সোহান সোবহান, ছাত্র সমিতির আহ্বায়ক জাহিদুর রহমান খান প্রমুখ।

মঞ্চে গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন ঋষিজ শিল্প গোষ্ঠীর ব্যানারে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ফকির আলমগীর, বাপ্পা মজুমদার, ১১ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা সিকান্দর খান, টিপু, কল্পনা আনাম, শারমিন সাথী ইসলাম, শাকিল আনাম, অনিমা মুক্তি। এছাড়া গানের দল লালন ব্যান্ড, ছায়ানট, গানের দল সন্দিপন, মেঘদল, সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন এবং আবিদা রহমান সেতু, সালাহউদ্দিন সোহাগ, উর্মি হালদারসহ বহ্নিশিখার শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারের গণআন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণার মাধ্যমে মহাসমাবেশ শেষ হয়। পরে রাত ৮টায় মুক্তিযুদ্ধের ৪২তম বার্ষিকী উপলক্ষে সমাবেশস্থল থেকে ৪২টি ফানুস ওড়ানো হয়।

যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি এবং জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করাসহ ৬ দফা দাবিতে টানা গণআন্দোলন চলে আসছে গণজাগরণ চত্বরে। এর মধ্যে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং এদের সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বাজেয়াফত করার দাবি জানিয়ে ২৬ মার্চের মধ্যে তা কার্যকর করার জন্য সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছিল গণজাগরণ মঞ্চ।

এসব দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই সোমবার বিকেলে মহাসমাবেশের ঘোষণা আসে গণজাগরণ মঞ্চ থেকে। আর এ মহাসমাবেশকে ঘিরেই গণআন্দোলনের ৫০তম দিনে মঙ্গলবার ভোর থেকে আন্দোলনকারীরা নতুন উদ্যমে আবারও জড়ো হতে শুরু করেন।

উল্লেখ্য, জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাসহ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের গণজাগরণ চত্বরের গণআন্দোলনের সূচনা হয় গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে। পরে ৬ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়।

এ গণআন্দোলনের ঢেউ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে প্রবাসেও। এরই মধ্যে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ এ দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছেন।

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ লড়াই চলবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

No comments

Powered by Blogger.