৯৭ ভাগ গার্মেন্টসে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ৯৯ ভাগে বিকল্প সিঁড়ি- শতভাগে ন্যূনতম মজুরি, সময় মতো প্রদান ৯৭ ভাগে ॥ কারখানা কমপ্লায়েন্স সারসংক্ষেপে তথ্য by এম শাহজাহান

রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের ৯৭ ভাগ কারখানায় অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। ন্যূনতম মজুরি প্রদান করা হচ্ছে শতভাগ কারখানায়। ৯৯ ভাগ কারখানায় রয়েছে বিকল্প সিঁড়ি। আর কোন কারখানায় শিশুশ্রম নিয়োজিত নেই।
সময়মতো মজুরি ও বেতন ভাতাদি পরিশোধ করা হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৯৭ ভাগ কারখানায়। ৫৫ ভাগ কারখানায় পার্টিসিপেশন কমিটি গঠন করা হয়েছে। তৈরি পোশাক কারখানার কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়ন সংক্রান্ত ইউনিফাইড ফরম্যাটের সারসংক্ষেপে এ তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি ২,৫৬৭টি পোশাক কারখানা সরাসরি পরিদর্শন করা হয়েছে।
কিন্তু তারপর অগ্নিনিরাপত্তা ও কারখানা কমপ্লায়েন্স ইস্যুকে সামনে রেখে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিলে যুক্তরাষ্ট্রের একটি শ্রমিক সংগঠন উঠেপড়ে লেগেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি বাংলাদেশের পোশাকের প্রধান ক্রেতা ইউরোপীয় পার্লামেন্টে তুমুল বির্তক চলছে। এতে করে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প খাতে নতুন সঙ্কট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন উদ্যোক্তারা।
তাঁদের মতে, দেশের সব কারখানায় অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া পোশাক শিল্পে কোন সমস্যা নেই। ক্রেতাদের চাহিদা মতো সবচেয়ে কম সময়ে এবং স্বল্পমূল্যে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ পোশাক সরবরাহ করেছে। মেড ইন বাংলাদেশ এখন ব্র্যান্ড। এ ব্র্যান্ডকে ধ্বংস করতে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র কাজ করেছে। কিন্তু কোন ষড়যন্ত্র শেষ পর্যন্ত সফল হবে না। কারণ বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে কম মূল্যে আন্তর্জাতিক মানের পোশাক সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে।
এদিকে, জিএসপি বা শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা বহাল রাখতে সরকারের পাশাপাশি পোশাক রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ আলাদাভাবেও ইউএসটিআরে নিজস্ব মতামত তুলে ধরার প্রস্তুতি নিয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বহাল রাখতে প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত সরবরাহ ও যুক্তিতর্ক তুলে ধরা হবে। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র দ্বিতীয় সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা বহাল থাকতে হবে। যদিও পোশাক শিল্প সরাসরি এ সুবিধা পায় না। পোশাক রফতানি হয় শুল্ক দিয়েই। তিনি বলেন, এটা ইমেজের বিষয়। যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা বাতিল করলে সারাবিশ্বে একটি ভুল বার্তা পৌঁছে যাবে। ইতোমধ্যে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এজন্য যেসব অভিযোগের ভিত্তিতে জিএসপি বাতিলের মামলা হয়েছে আমরা তার যথাযথ জবাব দেব। ইতোমধ্যে সরকারের কাছে বিজিএমইএ’র প্রস্তাবন তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে ইউএসটিআরে বিজিএমইএ তাদের নিজস্ব মতামত তুলে ধরবে।
এদিকে জিএসপি ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্ট যখন উত্তপ্ত তখন রফতানি বেড়েছে বাংলাদেশের। চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের রফতানি আয়। জুলাই থেকে নবেম্বরে যেখানে রফতানি আয়ে ধস ছিল সেখানে ডিসেম্বরে উর্ধমুখী রফতানির অনেক সূচক। তবে বিভিন্ন খাতের অন্যান্য সেক্টরের রফতানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অর্জন বেশি। সম্প্রতি রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত দেশের রফতানি চিত্রে দেখা গেছে, নবেম্বর শেষে দেশের রফতানি আয়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অর্জন ছিল ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ কম। ডিসেম্বর শেষে সেই ধস কাটিয়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেশি অর্জিত হয়েছে দেশের রফতানি আয়। জুলাই থেকে নবেম্বর পর্যন্ত দেশে রফতানি আয় হয়েছিল ১ হাজার ৭৬৫ মিলিয়ন ডলার। বিপরীতে ডিসেম্বরে অর্জিত হয়েছে ২ হাজার ৪৬৬ মিলিয়ন ডলার।
চলতি অর্থবছরের নবেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে প্রায় ১৭টি পণ্যের রফতানি বেড়েছে। এছাড়া বিশেষ কিছু খাতে নবেম্বরে রফতানি আয় বাড়লেও ডিসেম্বরে এসে কমেছে প্রায় ছয়টি পণ্যের। তবে নবেম্বরে যে সব পণ্য রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের শতকারা হার বেশি ছিল সেই পণ্য ডিসেম্বরে এসে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারার হার অনেকাংশে কমিয়েছে। বিশেষায়িত টেক্সটাইল খাতের অন্যান্য খাতে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নেয়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি রফতানি হয়েছে। জুলাই থেকে নবেম্বর পর্যন্ত সময়ে এই খাতে নেয়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অর্জন বেশি ছিল ৩৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
এদিকে, রফতানি আয় বাড়ার সঙ্গে প্রতিনিয়ত নতুন বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। আর এসব সম্ভব হচ্ছে পণ্যমান ভাল হওয়ার কারণে।

No comments

Powered by Blogger.